গল্পগুলো সিরিয়ার প্রচ্ছদ
আমার বই,  বইপত্র

“গল্পগুলো সিরিয়ার” PDF ফ্রি ডাউনলোড!

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে গল্পগুলো সিরিয়ার বইটা ডাউনলোড করতে আসার জন্য। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে – স্যরি ভাই, আপাতত কোনো ডাউনলোড লিঙ্ক দিচ্ছি না। এটা হচ্ছে এপ্রিল ফুল (জ্বী, আজকের তারিখটা ১লা এপ্রিল) বিষয়ক পোস্ট। অথবা বলতে পারেন এপ্রিল ফুল বিষয়ক সচেতনতামূলক পোস্ট। টাইটেলটা জাস্ট ফর অ্যাটেনশন ?

এপ্রিল ফুলের আসল ইতিহাস জানতে চাইলে রোর বাংলায় আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদের এই পোস্টসচলায়তনের এই পোস্ট, অথবা মুহাম্মদ সজল ভাইর এই পোস্ট এবং এই পোস্ট পড়ে দেখতে পারেন। তবে সংক্ষেপে ব্যাপারটা হচ্ছে, স্পেনে মুসলমানদের উপর প্রচুর নির্যাতন হয়েছে, গণহত্যা হয়েছে, স্পেনে লাখ লাখ মুসলমানকে (এবং ইহুদীদেরকেও) হত্যা করা হয়েছে – এ সবই সত্য।

কিন্তু ১৪৯২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গ্রানাডার পতন হয়েছিল, সেদিন মসজিদের ভেতর মুসলমানদেরকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল, আর সে কারণেই এপ্রিল ফুল পালন করা হয় – এ দাবিগুলো ভিত্তিহীন। ইনফ্যাক্ট গ্রানাডার পতন ঘটেছিল জানুয়ারির ২ তারিখে, এপ্রিলের ১ তারিখে না। এবং সেই পতন ঘটেছিল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে। সেদিন বা তার পরে কয়েক বছর পর্যন্ত সেখানে কোনো গণহত্যা হয়নি, মসজিদে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। ওগুলো ঘটেছিল আরো অনেক পরে।

কীভাবে বুঝবেন গ্রানাডা থিওরী ভিত্তিহীন? যতগুলো পত্রিকায় এই দাবি করা হয়, কোথাও সোর্স দেওয়া হয় না। আবেগী কাহিনীই শুধু বর্ণনা করা হয়। ইংরেজিতে april fools day granada কীওয়ার্ডগুলো সার্চ করে দেখেন, মেইনস্ট্রীম কোনো সাইটে এই কাহিনী পাবেন না। আল-জাজিরা, মিডল ইস্ট আইসহ গ্রহণযোগ্য প্রো-ইসলামিক সাইটেও না।

উল্টো ইন্টারন্যাশনাল যতগুলো সাইটে এপ্রিল ফুলের সোর্স আসবে, সেগুলোতে দেখবেন অন্যান্য পাঁচ-ছয়টা কাহিনী থাকলেও গ্রানাডার কাহিনী নাই। অর্থাৎ গ্রানাডা থিওরীটা শুধু মুসলিম বিশ্বে (এবং খুব সম্ভবত উপমাহাদেশেই) বেশি প্রচলিত। অন্যরা এটা তেমন জানেও না, ফলে প্রচার কিংবা ডিবাঙ্ক করার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করে না।

আবেগ বিক্রি করাটা সব সময়ই বেশ ভালো ব্যবসা। প্রতিটা সিরিয়াস ঘটনার পরেই দেখবেন সম্পূর্ণ বানোয়াট কিছু আবেগী কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে চকবাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মানুষের অবর্ণনীয় দুর্দশা সত্য ছিল, কিন্তু তারপরেও সেখানেও কিছু আবেগী কাহিনী, কিছু পুরানো ফেক ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল। রোহিঙ্গা, আলেপ্পো, গাজা প্রতিটা ক্ষেত্রেই গণহত্যা সত্য, কিন্তু তারপরেও কিছু ফেক ছবি ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে এগুলো ছড়ায় সাধারণ লাইকখোর ইউজাররা (অনেকসময় ইচ্ছা করেও ছড়ানো হয় কনফিউশন সৃষ্টির জন্য), কিন্তু একসময় পত্রিকাগুলো বিক্রি বাড়ানোর জন্য নিয়মিতই আউট অফ থিন এয়ার এ ধরনের ধর্মীয় আবেগী কাহিনী ছড়াতো। নীল আর্মস্ট্রংয়ের ইসলাম গ্রহণের কাহিনী ছিল এরকমই আরেকটা কাহিনী – সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।

এখন এই পোস্টের উদ্দেশ্য কী? এপ্রিল ফুলের গ্রানাডা থিওরী মিথ্যা – তার মানে কি আমাদেরকে এপ্রিল ফুল’স ডে পালন করতে হবে? মোটেও না। ভ্যালেন্টাইন্স ডে, রোজ ডে, হাগ ডে-সহ আর দশটা হাবিজাবি দিবসের মতো এই দিবসও সম্পূর্ণ অর্থহীন, অপ্রয়োজনীয়, যার মধ্যে কোনো কল্যাণ নাই। উল্টো এই দিবসের মূল বিষয়ই হচ্ছে মানুষকে বোকা বানানো, ধোঁকা দেওয়া, মিথ্যা বলা। সুতরাং এটা আরো খারাপ।

সো এই দিবস পালন করার কোনো দরকার নাই। কিন্তু এই দিবস আসলেই মানুষ যেভাবে ইসলামের নামে মিথ্যা ইতিহাস প্রচার করে, সেটা আরো হাস্যকর এবং কিছুটা আয়রনিক্যালও। প্রতি বছর এই দিবসে এই মিথ্যা ইতিহাস প্রচার এবং বিশ্বাস করার মধ্য দিয়ে বাস্তবে সহজ-সরল মুসলমানরা, অথবা বলা যায় সত্য ইতিহাস জানতে অনাগ্রহী, মিথ্যা-বানোয়াট-আবেগী গল্প প্রচারে আগ্রহী মুসলমানরাই সবচেয়ে জোরালোভাবে এপ্রিল ফুলস ডে পালন করে আসছে! এর চেয়ে বড় আয়রনি আর কী হতে পারে!

বাইদ্যওয়ে, আপনি যদি সিরিয়া সম্পর্কে আগ্রহী হন, তাহলে তো “গল্পগুলো সিরিয়ার” বইটা পড়তেই পারেন। আর আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে আগ্রহী হন, তাহলে ইউটিউবে আমার ভিডিওগুলো দেখতে পারেন। আমার সর্বশেষ ভিডিও:

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *