-
টিকটক অ্যাপটাই কি হারাম?
কাউকে ইন্টারনেট চালানো, গুগলে সার্চ করা শেখালে কি পাপ হবে? গুনাহ হবে?
মানে বাংলাদেশের কনটেক্সটে চিন্তা করেন। আপনি নিজে হয়তো ভালো মানুষ, কিন্তু গুগলে গিয়ে ম্যাক্সিমাম বাংলাদেশী কী খোঁজে? দুবাইর “বুর্জ খলিফা” টাওয়ারের ছবি। স্ট্যাটিস্টিক্স সেটাই বলে।
একই কথা ইউটিউবের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনি হয়তো ভালো কাজে ইউটিউব ব্যবহার করেন। কিন্তু সেখানেও সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা ভিডিওগুলো হচ্ছে “পাশের বাসার ভাবি” কী মজার খাবার রান্না করলেন, সেগুলো।
-
গাদ্দাফির ছেলে সাইফ কি ফিরে আসছে?
সো, নিউ ইয়র্ক টাইমসের শিরোনাম অনুযায়ী, গাদ্দাফি’জ সান ওয়ান্টস টু টেক লিবিয়া ব্যাক!
সন্দেহ নাই, সাইফের নিজেরও সেরকমই ইচ্ছা। ফিরে আসার নিউজটা তাই সে ইজিপ্ট-বেজড নিজেদের জামাহিরিয়্যা টিভিতে দেয়নি। বা আরব কোনো মিডিয়াতে দেয়নি। দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমসে। টার্গেট ইন্টারন্যাশনাল অডিয়েন্স।
সে দেখতে চায়, এই শিরোনামের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কী হয়। কারণ দেশের ভেতরের আইন, সংবিধান হয়তো ম্যানেজ করা সম্ভব, কিন্তু সাইফ যদি আসলেই লিবিয়ার রাজনীতিতে ফিরে আসতে চায়, তাহলে তার সামনে অন্যতম প্রধান বাধা হবে তার বিরুদ্ধে জারি থাকা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের ওয়ারেন্ট।
-
স্যাটায়ার: এক বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীর সৌদি সফর
এক বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী গিয়েছে সৌদি আরবে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আমন্ত্রণে।
আপনারা জানেন, মোহাম্মদ বিন সালমান তথা এমবিএস তার দেশকে আধুনিকায়ন করার চেষ্টা করছেন। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রাইভেটাইজ করার চেষ্টা করছেন। মানুষকে উদ্যমী করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারপরেও তেলের টাকায় আরাম-আয়েশে সারা জীবন কাটিয়ে অভ্যস্ত জনগণ ঝিমিয়েই আছে।
তো বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীকে পেয়ে এমবিএস তাকে বললেন, ইয়া আখি, অর্থাৎ হে ভাই, আপনি তো তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবী, কাজেই আপনার মাথায় তো পচ্চুর বুদ্ধি, আমাকে একটু বুদ্ধি দেন কীভাবে আমার দেশের মানুষকে উদ্যমী বানাতে পারি।
-
তিউনিসিয়ার ক্যু কি উদারপন্থার পরাজয়?
শেষ পর্যন্ত তিউনিসিয়ার আরব বসন্তও ব্যর্থ হয়েছে।
অ্যাজ এক্সপেক্টেড, এই নিউজে কেউ কেউ খুবই খুশি। যেমন লিবিয়াতে হাফতারপন্থীরা, মিসরে সিসিপন্থীরা, সৌদি-ইমারাতে মাদখালিরা। এবং পুরো আরবে মোটামুটি সেক্যুলাররা।
কিন্তু ইন্টারেস্টিংলি, বাংলার ফেসবুকে সেক্যুলারদের এটা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না। বরং এখানে খুশি ইসলামপন্থীরাই। তাদের লজিক – আগেই বলেছিলুম, এত উদারতা দেখাইও না। এখন বুঝলা তো? হুঁহ!
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মুরসির মতো কিছুটা কট্টরপন্থা বা গান্নুশির মতো উদারপন্থাই তাদের সরকার পতনের একমাত্র কারণ না। এবং শুধু ইসলামপন্থীদেরই পতন হয় না। সরকার পতনের পেছনে অনেক অনেক অনেক কারণ থাকে।
-
মাতিল্দা মুভি কি নিতু ও তার বন্ধুরা বইয়ের নকল?
দুষ্টু লোকেরা অভিযোগ করে, স্যার মুহম্মদ জাফর ইকবালের নিতু আর তার বন্ধুরা (১৯৯৯) বইটা নাকি Matilda (1996) মুভির নকল। শুধু মূলভাবটা না, সিন বাই সিন নাকি নকল।
এ কথা সত্য, নিতু আর তার বন্ধুরা বইয়ের মতো মাতিল্দা মুভিতেও বদমেজাজি, অত্যাচারী প্রিন্সিপাল থাকে। মুভিতে মাতিল্দা প্রিন্সিপালকে শায়েস্তা করার জন্য তার পানির গ্লাসে টিকটিকি ছেড়ে দেয়। আর বইয়ে নিতু খোরাসানি ম্যাডামের বিছানায় মাকড়শা ছেড়ে দেয়।
মুভিতে মাতিল্দার টেলিকাইনেটিক পাওয়ার থাকে, যা দিয়ে সে প্রিন্সিপালকে ভয় দেখায়। বইয়ে নিতু তার গলার ফ্রিকোয়েন্সিকে কাজে লাগিয়ে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে খোরাসানি ম্যাডামের মাথার উপর ফেলে।
-
দ্য ম্যান হু সোল্ড হিজ স্কিন: অদ্ভুত সুন্দর একটা আরব মুভি
রাক্বা, সিরিয়া, ২০১১।
লোকাল বাসে করে যাওয়ার সময় এক তরুণী আবির তার প্রেমিক স্যামকে ভালোবাসার কথা বলে ফেলে। আবেগে আপ্লুত হয়ে স্যাম সেখানেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে। বাসভর্তি মানুষের সামনে বিয়ের ঘোষণা দিতে গিয়ে উচ্চারণ করে বসে নিষিদ্ধ কিছু শব্দ – বিপ্লব, স্বাধীনতা।
এই ঘটনাই পাল্টে দেয় স্যাম এবং আবিরের জীবনকে। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দাবাহিনী স্যামকে তুলে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। পরিচিত এক পুলিশের সহায়তায় সেখান থেকে পালাতে পারলেও সিরিয়ায় থাকা তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। বর্ডার দিয়ে পালিয়ে সে চলে যায় লেবাননে। আর ওদিকে পরিবারের চাপে অন্য এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে বেলজিয়ামে চলে যায় আবির।
-
দ্য কুরিয়ার: ওলেগ পেনকভস্কিকে নিয়ে তৈরি স্পাই ড্রামা
ওলেগ পেনকভস্কি। স্নায়ুযুদ্ধের ইতিহাস পাল্টে দেওয়া এক সোভিয়েত মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স অফিসার।
কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের প্রাক্কালে ওলেগ পেনকভস্কি স্বেচ্ছায় দুই আমেরিকান ছাত্রের মাধ্যমে মার্কিন দূতাবাসে বার্তা পাঠায়, তার কাছে গোপন তথ্য আছে, সেগুলো সে আমেরিকানদের কাছে পাচার করতে আগ্রহী। আমেরিকানদের জন্য সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে গুপ্তচরবৃত্তি চালানো কঠিন ছিল। কাজেই তারা ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্সের শরণাপন্ন হয়।
দুই গোয়েন্দা সংস্থা মিলে এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ীকে রিক্রুট করে, যার কাজ ছিল ব্যবসায়িক কাজে সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়ে পেনকভস্কির সাথে দেখা করা এবং সেই সুযোগে গোপনে বার্তা আদান প্রদান করা। সোজা কথায় কুরিয়ার বা বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করা।
-
মুনজেরিন শহীদের বই যেভাবে বেস্টসেলার হয়
অনেকেই বুঝতে পারছে না মুনজেরিন শহিদের বই কীভাবে বেস্টসেলার হয়। আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।
ব্যাপারটা হচ্ছে মানুষ আসলেই ইংরেজি শিখতে চায়। সেজন্য দলে দলে মুনজেরিনের ভিডিও দেখে। মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়।
এটা মোটেও অস্বাভাবিক না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মুনজেরিনের ভিডিও দেখে তো আর ইংরেজি শেখা সম্ভব না। মানে মুনজেরিনের রূপেই তো মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকে, শেখার দিকে মনোযোগ দিবে কখন?
সেজন্যই বাধ্য হয়ে সেই মিলিয়ন মিলিয়ন ইউটিউব ভিউয়ার তার বই কিনছে, যেন তার রূপ দ্বারা ডিসট্র্যাক্টেড না হয়ে সত্যি সত্যিই ইংরেজিটা শিখতে পারে। এর মধ্যে রাজনীতির কিছু নাই।
— মুনজেরিন শহীদের ইংরেজি শেখার বইয়ে ভুল ইংরেজি ভাইরাল হওয়ার পর আলোচনা চলছিল “এরকম নিম্নমানের বই” মানুষ কেন পড়ে? সেই প্রসঙ্গে লেখা।
-
দ্য মৌরিতানিয়ান: গুয়ান্তানামো বের এক নির্দোষ বন্দীর গল্প
গুয়ান্তানামো বে কারাগারের এক বন্দীর উপর চমৎকার একটা মুভি দেখলাম – দ্য মৌরিতানিয়ান – The Mauritanian (2021)। ড্রামা, তার উপর বেজড অন ট্রু স্টোরি, সো ডোন্ট বদার উইদ স্পয়লার অ্যালার্ট।
নাইন ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার কয়েকমাস পর আমেরিকার চাপে মৌরিতানিয়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে মোহাম্মাদু ওয়েল্দ স্লাহি নামের এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়ে যায় দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা তাকে তুলে দেয় আমেরিকানদের হাতে।
পরবর্তী ছয় বছর পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিখোঁজ থাকে স্লাহি। কেউ তার কোনো সংবাদ দিতে পারে না। শেষ পর্যন্ত এক মার্কিন ডিফেন্স লয়্যার, ন্যান্সি হল্যান্ডার তার খোঁজ পায় কিউবার গুয়ান্তানামো বে কারাগারে।
-
পাত্রীদেখা সংস্কৃতির ডিজিটাল ভার্সন
তথাকথিত আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঙালির হাজার বছরের অনেক ঐতিহ্য বিলুপ্ত হতে বসেছে। সময় থাকতেই এগুলোকে ফিরিয়ে আনা উচিত।
যেমন ধরুন পাত্রী দেখতে যাওয়ার ব্যাপারটা। হাজার বছর ধরে বাঙালির ঐতিহ্য ছিল, পাত্রী দেখতে গেলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তার চুল, দাঁত, গায়ের রং খেয়াল করা। এরপর আদুরে গলায় বলা – একটু হেঁটে দেখাও তো মা! স্লেচ্ছদেশীয় সংস্কৃতির প্রভাবে সেসব ঐতিহ্য এখন কেবলই স্মৃতি।
নাহ, আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি মোটেও এই ঐতিহ্যকে হুবহু ফিরিয়ে আনতে বলছি না। আমি শুধু বলছি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ঐতিহ্যটাকে একটু আপডেট করতে। এবং যেহেতু আমি মোটেও নারীবিদ্বেষী না, বরং কিঞ্চিত স্বঘোষিত সুশীল নারীবাদী, তাই এক্ষেত্রেও আমি নারী-পুরুষের সমানাধিকারে বিশ্বাসী।
আমার প্রস্তাব, পাত্রী দেখতে যাওয়ার পর আর কিছু না হলেও দুই পক্ষের অভিভাবকদের সম্ভাব্য পাত্রপাত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা উচিত – মা/বাবা, তোমরা একটু ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করে দেখাও তো!
মানে এত আয়োজন করে বিয়ে করবেন, এরপর যদি দেখেন স্পাউস মুরাদ টাকলা, ব্যাপারটা কেমন হবে? এখন লজ্জায় একটু চ্যাট করে দেখাতে বলতে পারবেন না, এরপর বিয়ের পর যখন ম্যাসেজ পাবেন – “babo tome kamon aca?” তখন কিন্তু আমাকে কিছু বলতে পারবেন না। আগেইসাব্ধাঙ্কর্ছিলাম, হুঁহ!
কার্টুন ক্রেডিট: আবু হাসান/ sarabangla.net/