-
সর্বস্তরে আরবি ভাষার ব্যবহার!
ভার্সিটিতে আমাদের প্রথম ক্লাসটা ছিল ম্যাথ ওয়ানের। প্রফেসর ছিল একজন সিরিয়ান। ভর্তি হওয়ার আগে শুনেছিলাম, পুরো ইউনিভার্সিটিতে অন্য সব ফ্যাকাল্টিতে পড়াশোনা আরবিতে হলেও কেবলমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সবকিছু হবে ইংরেজিতে। লেকচার অবশ্য আরবিতেই হবে, কিন্তু প্রশ্নোত্তর, লেকচার শিট, রেফারেন্স বই সব হবে ইংরেজি।
ভেবেছিলাম যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং, তাই লেকচার আরবিতে হলেও আর কতটুকু হবে? বেশিরভাগই তো থাকবে ইকুয়েশন আর ম্যাথ – সেগুলোর আর আরবিই কী, ইংরেজিই কী? কিন্তু ক্লাসে ঢুকেই আমার আক্কেল গুড়ুম হওয়ার জোগাড়। সিরিয়ান প্রফেসর ভদ্রলোক একেবারে বিশুদ্ধ আরবিতে গড়গড় করে লেকচার দিয়ে যাচ্ছে, যার শতকরা ৬০ ভাগই আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
-
ওরা আমাদের বিপ্লব কেড়ে নিয়েছে
ওরা আমাদেরকে ঘড়ি দিয়ে সময় কেড়ে নিয়েছে
ওরা আমাদেরকে জুতা দিয়ে পথ কেড়ে নিয়েছেওরা আমাদেরকে পার্লামেন্ট দিয়ে স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে
ওরা আমাদেরকে দোলনা দিয়ে উতসব কেড়ে নিয়েছেওরা আমাদেরকে গুঁড়া দুধ দিয়ে শৈশব কেড়ে নিয়েছে
ওরা আমাদেরকে সার দিয়ে বসন্ত কেড়ে নিয়েছেওরা আমাদেরকে প্রহরী আর তালা দিয়ে নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছে
ওরা আমাদেরকে বিদ্রোহী দিয়ে আমাদের বিপ্লব কেড়ে নিয়েছে।—- সিরিয়ান কবি মুহাম্মাদ আল-মাগুত
-
লিবিয়ার আরব বসন্তে মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব
দেশে বসন্ত গেছে গতকাল, যদিও কেউ কেউ পরশুদিনও পালন করে ফেলেছে। কিন্তু আমাদের বসন্ত আজ। না, ঋতুরাজ বসন্ত না, আরব বসন্ত। অফিশিয়ালি যদিও আরব বসন্তের লিবিয়ান ভার্সনের শুরুটা ১৭ই ফেব্রুয়ারি বলা হয়, কিন্তু বাস্তবে সেটা শুরু হয়েছিল ১৫ তারিখেই।
২০১১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির আগে জীবনে কোনোদিন মিছিল দেখিনি। টিভিতে দেখেছি। সরকারিভাবে আয়োজিত ফিলিস্তিনের জন্য মিছিল, লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলার বিরুদ্ধে মিছিল, আমেরিকার কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মিছিল। কিন্তু রাস্তায় সরাসরি নিজের চোখে কোনোদিন মিছিল দেখিনি।
-
সাদাত হোসাইনের চার রংয়ের প্রচ্ছদ বিতর্ক: দোষ কার?
কোনো ঘটনায় অধিকাংশ মানুষই কাকে দায়ী করতে হবে, সেটা জানে না। যে ফেমাস, বা যে সফল, তার প্রতি সম্ভবত মানুষের ঈর্ষা একটু বেশি থাকে। ফলে তাকেই দায়ী করে। অনেক সময়ই অন্যায়ভাবে।
সাদাত হোসাইনের কথাই ধরেন। তার উপন্যাস আপনার কাছে ভালো নাই লাগতে পারে এবং সেজন্য তার উপন্যাসের সমালোচনা করার পূর্ণ অধিকার আপনার আছে। একইসাথে চার রংয়ের বই বিক্রি করার আইডিয়াটাও আপনার কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে এবং সেটা নিয়ে সমালোচনা করার অধিকারও আপনার আছে।
-
আরাবিজি: আরবি ট্রান্সলিটারেশনে সংখ্যার ব্যবহার
ইংলিশ টেক্সটে বাংলা লিখলে সেটাকে যেরকম বাংলিশ বলে, সেরকম ইংলিশ টেক্সটে আরবি লেখারও একটা নাম আছে। কেউ বলে আরাবিশ, কেউ বলে আরাবগ্লিশ, কিন্তু অধিকাংশক্ষেত্রেই যে নামটা ব্যবহৃত হয়, সেটা হচ্ছে আরাবিজি (আরাবি+ইঙ্গিলিজি)।
এই আরাবিজি ল্যাঙ্গুয়েজটা বাংলিশের চেয়েও অনেক ফানি। আরবিতে আইন, ক্বাফ, সোয়াদ জাতীয় অনেকগুলো অক্ষর আছে, সেগুলোর সঠিক উচ্চারণ সরাসরি কোনো ইংরেজি অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। ফলে আরাবিজি ল্যাঙ্গুয়েজে সেগুলোকে প্রকাশ করা হয় বিভিন্ন সংখ্যা দিয়ে।
যেমন ধরুন, “হ্যালো, গুড মর্নিং! হাউ আর ইউ?”, এই বাক্যের মোটামুটি কথ্য আরবি হবে “মারহাবা, সুবাহ আল-খাইর! শিনু আখবারাক?” এখন আরাবিজি ল্যাঙ্গুয়েজে এটা লেখা হবে এভাবে: Mar7aba, 9ba7 al 5air! Shinu a5barak? এখানে 7 ব্যবহৃত হচ্ছে হা (ح) বোঝাতে, 9 ব্যবহৃত হচ্ছে সোয়াদ (ص) বোঝাতে, 5 ব্যবহৃত হচ্ছে খা (خ) বোঝাতে।
অথবা ধরুন, “ডু ইউ স্পীক অ্যারাবিক?”, এই বাক্যের কথ্য আরবি হবে “তাহকি আরাবি?” আর আরাবিজি ল্যাঙ্গুয়েজে এটা হবে এরকম: Ta7ki 3arabi? এখানে 3 ব্যবহৃত হচ্ছে আইন (ع) বোঝাতে। এই রীতি অনুযায়ী হাবিবিকে লেখা হয় 7abibi, হায়াতিকে লেখা হয় 7ayati, তাইয়্যেবকে (ভালো) লেখা হয় 6ayeb, উস্তাদকে লেখা হয় 2ustad …
আরবি কোনো ফোরামে বা চ্যাটরুমে যদি ভুল করে ঢুকে পড়েন, দেখবেন ইংরেজির ভেতরে ভেতরে সংখ্যার ছড়াছড়ি।
-
২৫ জানুয়ারি আন্দোলনের পটভূমি
আরব বসন্ত অফিশিয়ালি শুরু হয়েছিল তিউনিসিয়া থেকে। কিন্তু বাস্তবে তিউনিসিয়ার আন্দোলনটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই চাপা পড়ে যেতে পারত, যদি না সেই আন্দোলন মিশরে গড়াত, যদি না ২৫ জানুয়ারি তাহরির স্কয়ারে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হয়ে মোবারককেও বেন আলির মতো পদত্যাগে বাধ্য করত।
তিউনিসিয়ার আন্দলনটা এতই বিচ্ছিন্ন একটা ঘটনা ছিল, পশ্চিমা বিশ্বও সেটার গুরুত্ব বুঝতে পারেনি। যেই ফ্রান্স মাত্র দুই মাস পরেই গাদ্দাফির পতন ঘটিয়ে ছেড়েছিল, সেই ফ্রান্সই তিউনিসিয়াতে উল্টা আন্দোলন দমন করার জন্য বেন আলির পক্ষে সেনাবাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের প্রায় কোনো দেশই তিউনিসিয়ার আন্দোলনকারীদের পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেনি। তিউনিসিয়ার জনগণ নিজেরাই আন্দোলনকে সফল করে তুলেছিল।
-
করোনার ভ্যাক্সিন আসলে কতটুকু ক্ষতিকর?
ইসরায়েলে ভ্যাক্সিন নিয়ে ১০ জনের মুখ বাঁকা হয়ে গেছে, জার্মানিতে ৭ জন, নরওয়েতে ২৪ জন মারা গেছে – বাবারে বাবা, কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার! কাজেই ভ্যাক্সিন নেওয়া যাবে না! কী দারুণ লজিক, তাই না?
লজিকের সমস্যাটা দেখেন। ইসরায়েলে ১০ জনের মুখ বাঁকা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা ২০ লাখ মানুষ ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর। এখন এই ২০ লাখ মানুষ যদি একেবারেই ভ্যাক্সিন না নিত, তাহলে আগামী কয়েক মাসে তাদের মধ্যে আক্রান্ত হতে পারত মিনিমাম ৫% বা ১ লাখ মানুষ। এই আক্রান্তদের মধ্যে মারা যেত মিনিমাম ১% বা ১০০০ মানুষ।
-
দ্য অ্যাভেঞ্জার: লকারবি বম্বমেকারের সন্ধানে
লকারবি ইনভেস্টিগেশন নিয়ে নিউইয়র্কারের একটা ফ্যাসিনেটিং লংফর্ম আর্টিকেল পড়লাম – The Avenger। এফবিআই যা পারেনি, নিহত এক ব্যক্তির ভাই নিজস্ব অবসেশন থেকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে কীভাবে তা সম্ভব করে দেখিয়েছে, অর্থাৎ লকারবির বম্ব মেকারকে খুঁজে বের করেছে, সেই কাহিনী। মাইন্ডব্লোয়িং একটা পিস।
লকারবি বম্বিংয়ের ঘটনাটা ১৯৮৮ সালের। সে বছর স্কটল্যান্ডের লকারবি শহরের আকাশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যান অ্যাম ফ্লাইট ১০৩-এর লাগেজ কম্পার্টমেন্টে রাখা একটি টাইম বোমা বিস্ফোরিত হয়। ফলে ২৫৯ আরোহীর সবাই নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল মার্কিন নাগরিক। এই ঘটনাটাই লকারবি বম্বিং নামে পরিচিত। এবং এটা ছিল তখন পর্যন্ত মার্কিন বেসামরিক নাগরিকদেরকে লক্ষ্য করে সংঘটিত সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলাগুলোর মধ্যে একটা।
-
আমাজিঘ: উত্তর আফ্রিকার বঞ্চিত আদিবাসী মুক্ত মানবেরা
উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর আরবি ভাষাভাষী জনগণকে নিয়ে অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন আছে- তারা কি আফ্রিকান, নাকি আরব? ভৌগলিক দিক থেকে উত্তর আফ্রিকা পরিষ্কারভাবেই আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত। সেদিক থেকে এর আরবি ভাষাভাষী জনগণও আফ্রিকান। কিন্তু জাতিগত দিক থেকে?
জাতিগত দিক থেকে উত্তর আফ্রিকার জনগণের এক অংশ নিঃসন্দেহে আরব। সপ্তম শতকে ইসলাম প্রচারের জন্য আরবরা যখন উত্তর আফ্রিকায় অভিযান চালায়, তারপর থেকে তাদের অনেকেই সেখানে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তোলে। কালক্রমে ব্যবসায়িক এবং প্রশাসনিক কারণেও আরব উপদ্বীপ থেকে অনেকে উত্তর আফ্রিকায় পাড়ি জমায়। বর্তমানে উত্তর আফ্রিকার জনগণের একটা অংশ তাদেরই বংশধর।
-
সাসপেক্ট এক্স: দুর্দান্ত একটা ক্রাইম থ্রিলার উপন্যাস
এই বইটা দুর্দান্ত। জাপানিজ লেখক কিয়েগো হিগাশিনোর ডিটেকটিভ থ্রিলার দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স (The Devotion of Suspect X)। এরকম অসাধারণ প্লটের কাহিনী খুব কম পাওয়া যায়।
আমি পড়েছি সালমান হকের অনুবাদ। বাংলা অনুবাদ পড়ে বেশি মজা পাই না। কিন্তু এদিক থেকে সালমান হক ব্যতিক্রম। এর আগে তার নিক পিরোগের হেনরি বিনস সিরিজের অনুবাদ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এবার এটা পড়ে আবারও মুগ্ধ হলাম।