-
সর্বস্তরে আরবি ভাষার ব্যবহার!
ভার্সিটিতে আমাদের প্রথম ক্লাসটা ছিল ম্যাথ ওয়ানের। প্রফেসর ছিল একজন সিরিয়ান। ভর্তি হওয়ার আগে শুনেছিলাম, পুরো ইউনিভার্সিটিতে অন্য সব ফ্যাকাল্টিতে পড়াশোনা আরবিতে হলেও কেবলমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সবকিছু হবে ইংরেজিতে। লেকচার অবশ্য আরবিতেই হবে, কিন্তু প্রশ্নোত্তর, লেকচার শিট, রেফারেন্স বই সব হবে ইংরেজি।
ভেবেছিলাম যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং, তাই লেকচার আরবিতে হলেও আর কতটুকু হবে? বেশিরভাগই তো থাকবে ইকুয়েশন আর ম্যাথ – সেগুলোর আর আরবিই কী, ইংরেজিই কী? কিন্তু ক্লাসে ঢুকেই আমার আক্কেল গুড়ুম হওয়ার জোগাড়। সিরিয়ান প্রফেসর ভদ্রলোক একেবারে বিশুদ্ধ আরবিতে গড়গড় করে লেকচার দিয়ে যাচ্ছে, যার শতকরা ৬০ ভাগই আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
-
আরাবিজি: আরবি ট্রান্সলিটারেশনে সংখ্যার ব্যবহার
ইংলিশ টেক্সটে বাংলা লিখলে সেটাকে যেরকম বাংলিশ বলে, সেরকম ইংলিশ টেক্সটে আরবি লেখারও একটা নাম আছে। কেউ বলে আরাবিশ, কেউ বলে আরাবগ্লিশ, কিন্তু অধিকাংশক্ষেত্রেই যে নামটা ব্যবহৃত হয়, সেটা হচ্ছে আরাবিজি (আরাবি+ইঙ্গিলিজি)।
এই আরাবিজি ল্যাঙ্গুয়েজটা বাংলিশের চেয়েও অনেক ফানি। আরবিতে আইন, ক্বাফ, সোয়াদ জাতীয় অনেকগুলো অক্ষর আছে, সেগুলোর সঠিক উচ্চারণ সরাসরি কোনো ইংরেজি অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। ফলে আরাবিজি ল্যাঙ্গুয়েজে সেগুলোকে প্রকাশ করা হয় বিভিন্ন সংখ্যা দিয়ে।
যেমন ধরুন, “হ্যালো, গুড মর্নিং! হাউ আর ইউ?”, এই বাক্যের মোটামুটি কথ্য আরবি হবে “মারহাবা, সুবাহ আল-খাইর! শিনু আখবারাক?” এখন আরাবিজি ল্যাঙ্গুয়েজে এটা লেখা হবে এভাবে: Mar7aba, 9ba7 al 5air! Shinu a5barak? এখানে 7 ব্যবহৃত হচ্ছে হা (ح) বোঝাতে, 9 ব্যবহৃত হচ্ছে সোয়াদ (ص) বোঝাতে, 5 ব্যবহৃত হচ্ছে খা (خ) বোঝাতে।
অথবা ধরুন, “ডু ইউ স্পীক অ্যারাবিক?”, এই বাক্যের কথ্য আরবি হবে “তাহকি আরাবি?” আর আরাবিজি ল্যাঙ্গুয়েজে এটা হবে এরকম: Ta7ki 3arabi? এখানে 3 ব্যবহৃত হচ্ছে আইন (ع) বোঝাতে। এই রীতি অনুযায়ী হাবিবিকে লেখা হয় 7abibi, হায়াতিকে লেখা হয় 7ayati, তাইয়্যেবকে (ভালো) লেখা হয় 6ayeb, উস্তাদকে লেখা হয় 2ustad …
আরবি কোনো ফোরামে বা চ্যাটরুমে যদি ভুল করে ঢুকে পড়েন, দেখবেন ইংরেজির ভেতরে ভেতরে সংখ্যার ছড়াছড়ি।
-
এক কবির কাছে খলিফা আল-মানসুর যেভাবে নাস্তানাবুদ হয়েছিলেন
আবু জাফর আল-মানসুর ছিলেন দ্বিতীয় আব্বাসীয় খলিফা, যিনি প্রধানত খলিফা আল-মানসুর নামেই পরিচিত। কথিত আছে, তিনি কবিদের উপর বেশ ক্ষিপ্ত ছিলেন। কারণ তার মতে কবিরা যেভাবে শুধু কয়েক লাইন কবিতা শুনিয়ে শাসকদেরকে খুশি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করে নিত, তার দৃষ্টিতে তা ছিল পুরো ডাকাতি।
তো কবিদেরকে জব্দ করার জন্য তিনি এক অভিনব নিয়ম চালু করেছিলেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, কোনো কবির কবিতা যদি সম্পূর্ণ নতুন না হয়, তাহলে তিনি তাকে এক পয়সাও দিবেন না, উল্টো রাজদরবারে তার কবিতা আবৃত্তি করার অধিকার রহিত করে দিবেন। কিন্তু যদি কেউ সম্পূর্ণ নতুন কবিতা শোনাতে পারে, তাহলে কবিতাটার ওজনের সমমূল্যের স্বর্ণমুদ্রা তাকে উপহার দিবেন।
খুব সহজ শর্ত মনে হচ্ছে? মোটেই না। কারণ আল-মানসুর ছিলেন অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী। যেকোনো কবিতা তিনি একবার শুনেই হুবহু মুখস্ত বলে দিতে পারতেন। ফলে যে কবিই তাকে নতুন লেখা কবিতা শোনাতে আসত, একবার শোনার পরেই তিনি বলতেন – এই কবিতা তো আমি আগেই শুনেছি! এই যে দেখ, এটা আমার হুবহু মুখস্ত আছে!