বিএনপির আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়েছিল: ইভ্যালির সাথে তুলনা

আজ থেকে চার বছর আগে, ২০২০ সালে যখন ইভ্যালি নিয়ে বাংলাদেশে ভাইরাল আলোচনা চলছিল, তখন বিএনপির আন্দোলন নিয়ে মজা করে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, “ই-ভ্যালির সবচেয়ে পুরাতন এবং সবচেয়ে প্রতারিত কাস্টোমার হচ্ছে বিএনপি। তারা অর্ডার করেছিল অন্য সবার আগে, আজ থেকে প্রায় এক দশক আগে। কিন্তু এতদিনেও তাদের অর্ডার করা সেই “ঈদের পরের আন্দোলন” এসে পৌঁছায়নি।

ওটা ছিল নিছকই ফানি স্ট্যাটাস। কিন্তু স্ট্যাটাসের নিচে কমেন্টেই এর পেছনের সিরিয়াসটা চিন্তাটা তুলে ধরেছিলাম যে বিএনপির আন্দোলনগুলো কেন সফল হচ্ছে না? কারণ তারা শুধু নিজেরাই আন্দোলন করছে। ছাত্রসমাজ, কোটা আন্দোলনকারী এবং সিভিল সোসাইটিকে তাদের পক্ষে টানতে পারছে না।

যতদিন পর্যন্ত এরা সবাই না নামবে, ততদিন পর্যন্ত শুধু বিএনপির (এবং জামাত-হেফাজতের) একার আন্দোলন সফল হবে না।

চার বছর পর দেখেন সেটাই হয়েছে। কোটা আন্দোলনকারী এবং ছাত্রসমাজ যখন মাঠে নেমেছে, সিভিল সোসাইটিও যখন মাননীয় ছেড়ে স্বৈরাচারকে স্বৈরাচার বলা শুরু করেছে, তখনই সরকারের পতন হয়েছে।

এই জিনিসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিপুল জনসমর্থন থাকা আর সরকারের পতন ঘটিয়ে দেওয়ার মতো সামর্থ্য থাকা এক জিনিস না। বিএনপির জনসমর্থন অকল্পনীয়। হেফাজতের জনসমর্থনও অকল্পনীয়। কিন্তু এই জনসমর্থন প্রধানত গ্রামেগঞ্জে, যেখানে ঢাকার রাজনীতিকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা কম।

বাংলাদেশের রাজনীতিকে ক্ষমতাকে জাস্টিফাই করতে পারে বা প্রবলভাবে প্রশ্ন করতে পারে ঢাকার মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণি; বিশেষ করে ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্ররা। যতদিন পর্যন্ত এই শ্রেণি চুপ থাকে, ততদিন পর্যন্ত সরকার টিকে থাকতে পারে। এই শ্রেণি মাঠে নামলে সেই সরকারের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়।

বিএনপি কি এই শ্রেণিকে নিজেদের পক্ষে টানতে পেরেছিল? না।

বিএনপির শতশত কর্মীকে গুম করা হয়েছিল। চোখ তুলে, নখ উপড়ে বিভৎসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। হেফাজতের শতাধিক কর্মীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ক্ষুদ্র কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ঢাকার মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণি ঘুরেও তাকায়নি। অধিকাংশ নিউজ নিয়ে ফেসবুকেও ক্ষোভ তৈরি হয়নি।

এটা আনফরচুনেট। কিন্তু এটাই বাস্তবতা।

অথচ দেখেন, ঢাকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় জন ছাত্র মারা গেছে – পরদিন দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মাঠে নেমে এসেছে। তার পরদিন পুরো দেশ শাট ডাউন হয়ে গেছে।

কে ক্ষমতায় যাবে, ভোটের বাইরে এটা কখনোই শুধুমাত্র সংখ্যা দিয়ে নির্ধারিত হয় না। এটা নির্ধারিত হয় সমাজের সবচেয়ে প্রভাবশালী অংশটাকে দলে টানতে পারার যোগ্যতা দিয়ে। এবং তার জন্য লাগে নানামুখী সফট পাওয়ার। এই জায়গায় বিএনপির পরিষ্কার ব্যর্থতা ছিল।
এই ব্যর্থতা যদি তারা বুঝতে না পারে, তাহলে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যেতে পারবে নিশ্চিত, কিন্তু সেই ক্ষমতা কতদিন ধরে রাখতে পারবে, সেটা নিশ্চিত না।

আমার বিশ্লেষণমূলক লেখা যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে আমার এই লেখাটাও পড়ে দেখতে পারেন:

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *