৫ আগস্টের বিপ্লবী: অশনি সংকেত

গাদ্দাফির পতনের কিছুদিন পর এক লিবিয়ানের সাথে কথা হচ্ছিল। লোকটা গাদ্দাফির ট্রাইবের, এবং সিরত শহরের অধিবাসী, যে শহরটা ছিল গাদ্দাফির লাস্ট স্ট্যান্ড।
কথা প্রসঙ্গে সে জানালো, যেদিন গাদ্দাফিকে ধরা হয়েছিল, সেদিন নাকি সেও গাদ্দাফির কনভয়ে ছিল। উপর থেকে যখন ন্যাটো বম্বিং শুরু করে, তখন লাস্ট মুহূর্তে সে পালিয়ে বাঁচে।

শুনে আমি বেশ মুগ্ধ হলাম। কারণ গাদ্দাফির সাথে শেষপর্যন্ত মাত্র শ’দুয়েক মানুষ ছিল। এদের অর্ধেক গাদ্দাফির কাছের মানুষ, বাকি অর্ধেক নিবেদিত প্রাণ স্বেচ্ছাসেবী। এরকম একটা কনভয়ের অংশ হতে পারাটা, নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও শেষদিন পর্যন্ত গাদ্দাফির সাথে থাকতে পারাটা বিশাল ব্যাপার।

পরদিন অফিসে গিয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে লোকটার কাহিনী কলিগদের সাথে শেয়ার করলাম। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ওরা সবাই হাসতে লাগলো।

কাহিনী কী? একজনে উত্তর দিলো, তুমি এই প্রথম এরকম মানুষের দেখা পেলা? আমরা তো প্রতিদিনই এই ধরনের মানুষের দেখা পাই। সিরতের অর্ধেক মানুষই দাবি করে, সেদিন তারা গাদ্দাফির সাথে ছিল।

এটা হচ্ছে একটা চিত্র। বিপরীতটাও সত্য। গাদ্দাফির বিরুদ্ধে যারা লড়েছিল, তাদেরও মূল সংখ্যাটা ছিল ছোট। কিন্তু গাদ্দাফির পতনের পর এরা সবাই থোওয়ার (বিপ্লবী) বনে যায়। পুরো যুদ্ধের সময় যারা ঘাপটি মেরে ছিল, তারাও গাদ্দাফির পতন নিশ্চিত হওয়ার পর মাঠে নামে এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে নিয়ে একটা করে “কাতিবা” (ব্রিগেড) গঠন করে, যেন নতুন দেশের সব অন্যায় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা যায়।

লিবিয়ানরা এদেরকে বলে, থোওয়ার আশরিন-আশরা। অর্থাৎ ২০/১০-এর বিপ্লবী। ২০/১০ হচ্ছে ২০শে অক্টোবর। গাদ্দাফির পতনের তারিখ।

কাজেই বাংলাদেশেও যদি ভবিষ্যতে ৫ আগস্টের বিপ্লবীদেরকে সব ক্রেডিট দাবি করতে দেখা যায়, অবাক হবো না। এরকমই ঘটে।

যারা জেনুইনলি মাঠে নামে, তাদের অনেকেই মারা যায়, আহত হয়। বাকিরা লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার পর ঘরে ফিরে যায়। অনেকে যেই আশা নিয়ে নেমেছিল, সেটা অর্জিত হতে না দেখে হতাশ হয়ে পড়ে। টিকে থাকে সুবিধাবাদীরা। বা প্রফেশনাল পলিটিশিয়ানরা।

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *