আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন বনাম বিদ্যানন্দ: ইসলামোফিয়ার প্রভাব

বাইশের বন্যায় সাধারণ মানুষ যখন ব্যাপকভাবে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনে দান করছিল, তখনও প্রায় প্রতিটা “ইনফ্লুয়েন্সার”, প্রতিটা ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর একচেটিয়াভাবে বিদ্যানন্দকে প্রমোট করছিল।

তখনও অবশ্য বিদ্যানন্দের বাটপারিগুলো ফাঁস হয়নি।বিদ্যনন্দের যাকাত আহ্বান নিয়ে সে সময়ও সমালোচনা ছিল, কিন্তু এর বাইরে তাদেরকে বর্জন করার মতো যথেষ্ট স্ট্রং কোনো কারণ তখনও পর্যন্ত ছিল না।

কাজেই সেলিব্রেটিদের বিদ্যানন্দে ডোনেশনের আহ্বানে তখনকার প্রেক্ষাপটে আপত্তির কিছু ছিল না। যেটা আপত্তিকর ছিল, সেটা হচ্ছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের নাম নেওয়ার ব্যাপারে তাদের অনীহা।

অথচ সে সময়েও যেকোনো বিচারে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ছিল বিদ্যানন্দের চেয়ে অনেক অনেক বেশি বিস্তৃত এবং সাস্টেইন্যাবল।

তারপরেও যে আমাদের সেলিব্রেটিরা আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের নাম না নিয়ে শুধুমাত্র বিদ্যানন্দের নাম প্রচার করত, আমার অবজার্ভেশনে সেটা ছিল আমাদের সমাজে বিরাজমান ইসলামোফোবিয়ার একটা প্রকাশ।

এটা সেই কারণ, যে কারণে আমাদের সো কলড সেক্যুলার-নাস্তিক অ্যাক্টিভিস্টদেরকে আমরা রোজা, শবে কদর, মিলাতুন্নবি বা ঈদের সময় ঘুমিয়ে থাকতে দেখলেও পূজার সময় বা অন্যান্য ভিন্ন ধর্মের উৎসবের সময় সেগুলোতে সাড়ম্বরে অংশগ্রহণ করতে দেখতে পাই।

“সেক্যুলার” গণমাধ্যমের এবং বাম-নাস্তিক সুশীল সমাজের প্রচারণার কারণে আমাদের মধ্যে হুজুরদের প্রতি একধরনের উন্নাসিকতা আছে। তাদেরকে অন্যজগতের প্রাণী হিসেবে ট্রিট করার প্রবণতা আছে। হুজুরদের নাম নিলে পশ্চাৎপদ বা মৌলবাদী হিসেবে ট্যাগ লেগে যাওয়ার একটা ভয় আছে।

বিপরীতে হিন্দুদের বা অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নাম নিলে, তাদের যেকোনো কাজ প্রচার করলে এই ভয়টা থাকে না। বরং সেক্ষেত্রে নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ এবং মানবতাবাদী হিসেবে তুলে ধরার একটা সুযোগ পাওয়া যায়।

এবারের বন্যায় যে আমরা বিদ্যানন্দের নাম খুব কম সেলিব্রেটির মুখেই শুনছি, বরং সেই তুলনায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের নাম অনেক বেশি শুনছি, তার একটা কারণ তো অবশ্যই বিদ্যানন্দের বাটপারির স্ক্যান্ডাল; কিন্তু একইসাথে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামোফোবিয়াকে প্যাট্রোনাইজ করার যে প্র্যাক্টিসটা এত বছর ধরে বিরাজমান ছিল, হুজুরদের নাম নিলেই যে তাকে জঙ্গি ট্যাগ দেওয়ার একটা প্রবণতা ছিল, সেটার পতনও সম্ভবত একটা বড় কারণ।

অনেকেই যারা এত বছর শাইখ আহমাদুল্লাহর বা যেকোনো ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের নাম উচ্চারণ করতে অস্বস্তিতে ভুগত, পাছে না আবার প্রগতিশীলতায় টান পড়ে, ক্ষমতাসীন কেউ না আবার অসন্তুষ্ট হয়, এবার তাদের অনেকেরই সেই অস্বস্তিটা আর নেই।

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *