আওয়ামী বন্দীদের উপর আক্রমণ কেন নিন্দনীয়?

কিছু বিষয় আছে, যেগুলোতে আপনি মনে মনে খুশি হলেও, বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঘরোয়া আড্ডাতে আনন্দ প্রকাশ করলেও দেশের স্বার্থে, ভবিষ্যতের স্বার্থে প্রকাশ্যে আপনার উচিত সেগুলোর বিরোধিতা করা।

যেমন আওয়ামী মন্ত্রী-এমপিদের বা সাবেক বিচারপতির উপর আদালত প্রাঙ্গণে হামলা, ডিম নিক্ষেপ। কোনোভাবেই এগুলো সমর্থনযোগ্য না, উল্লাসযোগ্য হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।

আমরা কী ধরনের বাংলাদেশ চাই, সেটা প্রকাশ পাবে আমরা আমাদের শত্রুদের সাথে কীরকম আচরণ করছি, তার মধ্য দিয়ে। আদালত হওয়ার কথা মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। সেখানেই যদি অন্যায়ভাবে কারও উপর আক্রমণ হয়, এবং আমরা যদি সেগুলোর প্রতিবাদ না করে করং উল্লাস করি, সমর্থন করি, তাহলে আমাদের ভাগ্যে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। সেই একই পথে সবকিছু ঘুরপাক খাবে।

যারা ধরা পড়েছে, যাদের উপর আক্রমণ হয়েছে, এরা একেকজন অনেক বড় বড় অপরাধের সাথে জড়িত। হয়তো এরা মৃত্যুদণ্ড পাওয়ারই যোগ্য। কিন্তু তারপরেও কারও অধিকার নাই তাদের উপর আইন বহির্ভুতভাবে হাত তোলার। এতে সরকারের, আইন ব্যবস্থার, বিপ্লবের ক্রেডিবিলিটি নষ্ট হওয়া ছাড়া আর কিছুই ঘটবে না।

আওয়ামী লীগ প্রতিটা ইনস্টিটিউশন ধ্বংস করে গেছে। এগুলো রিবিল্ড করতে বছরের পর বছর লেগে যাবে। কিন্তু যে একটা প্রতিষ্ঠানে সবার আগে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা দরকার ছিল, সেটা হচ্ছে বিচার বিভাগ। যেন অন্যান্য ক্ষেত্রে মানুষের উপর অবিচার হলে শেষ ভরসা হিসেবে সে আইনের আশ্রয় নিতে পারে। কিন্তু আইনজীবিরা নিজেরাই যেভাবে আইন ভঙ্গ করছে, আদালত প্রাঙ্গণেই যেভাবে অভিযুক্তদের উপর আক্রমণ হচ্ছে, সেটা খুবই হতাশাজনক।

আওয়ামী অপরাধীদের জন্য না; আমাদের নিজেদের ভবিষ্যতের জন্যই আমাদের উচিত আইনের পক্ষে, এবং সেই সূত্রে অপরাধীদের আইনি অধিকারের পক্ষে, আদালতে আক্রমণের শিকার না হওয়ার পক্ষে কথা বলা। আদালত প্রাঙ্গণে যেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়, শৃঙ্খলা বজায় রাখা হয়, সেজন্য সরকারের সমালোচনা করা, তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা।

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *