যে কারণে ঢাবি ভিসির ইমামতি করা উচিত না

ঢাবি ভিসি যদি আসলেই একজন প্রো-ইসলামিস্ট এবং জ্ঞানী মানুষ হন, তাহলে তার উচিত হবে সুযোগ পেলেও ইমামতি না করা। অন্তত এখনই না করা।

দেখেন, ঢাবিতে অনেক অনেক সমস্যা আছে। তার কাজ হবে প্রথমে সেগুলো ঠিক করা। ইমামতি করার অনেক সুযোগ পরে পাওয়া যাবে, কিন্তু তার বিরুদ্ধে যদি ষড়যন্ত্র হয়, তাকে সরিয়ে যদি অন্য কাউকে আনা হয়, তাহলে সেই সমস্যাগুলোও হয়তো আর সমাধান হবে না।

আমি অভ্যন্তরীণ অন্যান্য সমস্যাগুলোর কথা বাদ দিলাম, শুধু আমার ফলোয়ারদের অধিকাংশের যেটা নিয়ে কনসার্ন, সেটাই বলি – তার উচিত হবে ঢাবিতে শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে যে প্রকাশ্য ইসলামবিদ্বেষের প্রকাশ ছিল, সেটার অবসান ঘটানো।

সেসব শিক্ষক যদি আইন ভঙ্গ করে থাকেন, তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া। এ ধরনের পরিস্থিতি যেন ভবিষ্যতে আর সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সিস্টেম্যাটিক সংস্কার করা। মেয়েদের নামাজের স্থান সংক্রান্ত যে সমস্যা ছিল, স্থায়ীভাবে সেটার সমাধান করা।

এবং এগুলোও করা অত্যন্ত ধীরে ধীরে। এরদোয়ানের মতো করে। সেটা না করে উনি যদি প্রথম দিন থেকেই ইমামতি শুরু করেন, তাতে আমরা ফেসবুকে সেই ছবি শেয়ার করে “ইসলামের বিজয় হয়েছে” বলে তৃপ্তি পাবো ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে ক্ষতি ছাড়া আর কিছু হবে না।

এরদোয়ান যদি সেক্যুলার না সেজে, অতি ধীরে ধীরে সমাজের পরিবর্তন না করে, প্রথমদিন ক্ষমতায় এসেই আফগান স্টাইলে আয়াসোফিয়া দখল করে নিতেন, তাহলে তুরস্কের ভেতরেই বিদ্রোহ সৃষ্টি হতো। কিন্তু এক দশক ধরে ধীরে ধীরে হিজাব ব্যান উঠিয়ে, সমাজে ইসলামকে গ্রহণযোগ্য করে, অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার পর যখন তিনি আয়াসোফিয়াকে কনভার্ট করলেন, তখন দেখা গেল সেক্যুলাররাও তাতে সমর্থন দিচ্ছে।

বাংলাদেশেও একই স্ট্র্যাটেজি প্রযোজ্য। আমাদের জনগণের বড় অংশটাই হয়তো ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু আমাদের সুশীল সমাজের, অ্যাক্টিভিস্টদের, এলিটদের একটা বড় অংশই সেক্যুলার এবং অনেকক্ষেত্রে ইসলামবিদ্বেষী। এটা সব সময়ই মাথায় রাখতে হবে।

যদিও ভিসির জন্য ইমামতি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাম-সেক্যুলার-নাস্তিক যে গোষ্ঠী আছে, অন্যান্য পরিবর্তন ধীরে ধীরে মেনে নিলেও এরকম ড্রামাটিক “ইসলামের বিজয়” তাদের মধ্যে আতঙ্ক ধরিয়ে দিবে, এবং তারা তাকে সরানোর জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করবে।

ভালো ইনটেনশন নিয়ে মডারেট-সেক্যুলার হয়েও ইসলামের যে উপকার করা যায়, বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ দেশে ইসলামিক বেশ নিয়ে তার সিকিভাগও করা যায় না। এই প্রজ্ঞাটা জরুরী।

যেটা জানতে পেরেছি, ভিসি আসলে মূল জামাতের ইমামতি করেননি। তিনি মূল জামাত মিস করেছেন, এবং তার সাথে আরও যে দেড় সারি মানুষ মিস করেছিল, তাদের ইমামতি করেছেন। খুবই স্বাভাবিক। এটাকেই যেভাবে ফুলিয়ে-ফাপিয়ে তিনি ইমামতি করেছেন বলা হচ্ছে, সেটা তার বিরুদ্ধে “মিডিয়ার ষড়যন্ত্র” কিনা বলতে পারি না, কিন্তু তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের বোকামি তো অবশ্যই।

পরিবর্তন আসুক। সেটা ধীরে ধীরে। সিস্টেম্যাটিক ওয়েতে। অতি আবেগের কারণে বিরোধিতা এবং ষড়যন্ত্র শুরু হওয়ার সুযোগ তৈরি না হোক।

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *