
দ্য ম্যাসেজ: গাদ্দাফির কল্যাণে যেভাবে আলোর মুখ দেখেছিল সিনেমাটি
হযরত মুহাম্মদ (স)-এর জীবনী নিয়ে নির্মিত দ্য ম্যাসেজ (The Message) তথা আর-রিসালাহ মুভিতে বদরের যুদ্ধের একটা সিন আছে। সেখানে যুদ্ধের পূর্বে মুসলমানদেরকে একটা কুয়া থেকে পানি তুলতে দেখা যায়। বিখ্যাত লিবিয়ান পর্যটক ওসামা থিনির পোস্ট অনুযায়ী, ফিচার ইমেজের ছবির এই জিনিসটাই হচ্ছে সেই কুয়াটা। জায়গাটা লিবিয়ার দক্ষিণে ওবারি শহরের নিকটে, সাহারা মরুভূমিতে।
দ্য ম্যাসেজ নির্মাণের আগেই সিরিয়ান-আমেরিকান পরিচালক মুস্তফা আক্কাদ মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা চিত্রনাট্যের প্রতিটি পৃষ্ঠা যাচাই-বাছাই করিয়ে নিয়েছিলেন। চলচ্চিত্রের কাহিনীতে এবং চিত্রায়ন পদ্ধতিতে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয় খুঁজে না পাওয়ায় আল-আজহার কর্তৃপক্ষ এটি নির্মাণের অনুমতি দেয়।
তবে আল-আজহার অনুমতি দিলেও, সে সময় সৌদি আরবের ‘মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ’ এর বিরোধিতা করে। মুস্তফা আক্কাদের ইচ্ছে ছিল সৌদি আরবের মক্কা এবং মদিনার আশেপাশে চলচ্চিত্রটির চিত্রধারণ করার। কিন্তু বাদশাহ ফয়সলের অনুমতি না পাওয়ায়, বাধ্য হয়ে তাকে বিকল্প লোকেশনের সন্ধান করতে হয়। কুয়েত এবং মরক্কোর আর্থিক সহায়তায় তিনি ১৯৭৪ সালে মরক্কোর মারাকাশে চলচ্চিত্রটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। শুধুমাত্র সপ্তম শতাব্দীর মক্কা এবং মদিনা শহর দুটোর সেট নির্মাণ করতেই তার সময় লাগে সাড়ে চার মাস!
‘দ্য ম্যাসেজ’ নির্মাণ শুরুর আগে মুস্তফা আক্কাদ যখন প্রথমবার লিবিয়াতে গিয়েছিলেন অর্থ সংগ্রহের জন্য, তখন তাকে লিবিয়াতে প্রবেশই করতে দেওয়া হয় নি। এয়ারপোর্ট থেকেই তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তিনি কুয়েত এবং মরক্কোর কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ শুরু করেন। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ভিত্তিতে মরক্কো এবং কুয়েত প্রাথমিকভাবে অর্থায়ন করলেও পরবর্তীতে সৌদি আরব আপত্তি জানালে কুয়েত তার অবস্থান থেকে সরে আসে।
বিভিন্ন মুভি ও সিরিয়াল রিভিউ এবং চলচ্চিত্র বিষয়ক আমার অন্যান্য লেখা একসাথে পেতে চাইলে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।
মরক্কোর রাজা দ্বিতীয় হাসান তারপরও তার সমর্থন অব্যাহত রাখেন। কিন্তু সৌদি আরবের প্রচণ্ড চাপের কাছে শেষ পর্যন্ত তিনিও নতি স্বীকার করতে বাধ্য হন। ৬ মাস শুটিং চলার পর মরক্কো ‘দ্য ম্যাসেজ’-এর শুটিং বন্ধ করে দেয় এবং মুস্তফা আক্কাদকে প্রথমে গ্রেপ্তার ও পরে মরক্কো থেকে বহিষ্কার করে। অর্থাভাবে বিদেশী কলাকুশলী সহ পুরো ইউনিট শীতাতপ নিয়ন্ত্রণবিহীন নিম্নমানের একটি হোটেলে দিন অতিবাহিত করতে থাকে।
উপায় নেই দেখে আক্কাদ আবারও লিবিয়াতে যান এবং ৬ মাস ধরে মরক্কোতে শুটিং করা দৃশ্যগুলো লিবীয় নেতা মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফিকে দেখান। পিপল ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, গাদ্দাফি ধারণকৃত দৃশ্যগুলো দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হন এবং আবেগে কেঁদে ফেলেন।
তিনি মুস্তফা আক্কাদকে সিনেমাটির বাকি অংশ লিবিয়াতে নির্মাণের অনুমিত দেন এবং চলচ্চিত্রটির নির্মাণ সম্পন্ন করার জন্য বাকি অর্থের যোগান দেন। যুদ্ধের দৃশ্যগুলো চিত্রায়িত করার জন্য যে বিপুল সংখ্যক অতিরিক্ত অভিনেতা প্রয়োজন ছিল, তার জন্য গাদ্দাফি লিবিয়ান সেনাবাহিনীর ৩,০০০ সৈন্যকে নিযুক্ত করেন। এই সৈন্যরা এক্সট্রা হিসেবে অভিনয় ছাড়াও সিনেমার সেট নির্মাণেও সাহায্য করেছিল। গাদ্দাফির সরকার এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করা শিল্পীদের প্রত্যেককে লিবিয়ান মুদ্রায় তাদের মূল পারিশ্রমিকের অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক প্রদান করে।
অবশেষে গাদ্দাফির অর্থায়নে ও লিবিয়ান সেনাবাহিনীর সহায়তায়, লিবিয়ার দক্ষিণের মরুময় সাবহা শহরে ৬ মাস শুটিং চলার পর সম্পন্ন হয় ‘দ্য ম্যাসেজ’ চলচ্চিত্রটির নির্মাণ কাজ।
সিনেমাটি সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছিলাম রোর বাংলায়। পড়তে পারেন এই লিঙ্ক থেকে।

