-
লিবিয়া যেভাবে স্বাধীনতা লাভ করেছিল
লিবিয়া ছিল জাতিসংঘের রেজোল্যুশনের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করা প্রথম জাতিরাষ্ট্র। এবং আজকের দিনটা ছিল লিবিয়ার স্বাধীনতা দিবস। ১৯৫১ সালের এই দিনে (২৪ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে “ইউনাইটেড কিংডম অফ লিবিয়া”।
লিবিয়া ছিল ইতালির কলোনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইতালির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সম্মুখভাগে থাকা সেনুসি আন্দোলনের আমির মোহাম্মদ ইদ্রিস ব্রিটিশদের পক্ষে অবস্থান নেন এই আশায় যে, ইতালিয়ানরা পরাজিত হলে লিবিয়া স্বাধীনতা কিংবা পারতপক্ষে স্বায়ত্তশাসন লাভ করবে। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ শেষে ইউরোপিয়ানরা লিবিয়াকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার চেষ্টা করে।
-
বিশ্বের সবচেয়ে হাস্যকর বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা
২০১৬ সালের ২২শে ডিসেম্বর বেশ মজার একটা ঘটনা ঘটে। সেদিন লিবিয়ার সাবহা থেকে ত্রিপোলি যাওয়ার পথে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটা বিমান ছিনতাই হয়ে যায়।
প্লেনটাতে মোট ১১১ জন যাত্রী এবং ৭ জন ক্রু জন ছিল, যাদের মধ্য ৮২ জন পুরুষ, ২৮ জন নারী এবং ১ জন শিশু। জিম্মিদের মধ্যে লিবিয়ার পার্লামেন্ট এইচওআরের (হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ) একজন সদস্যও ছিলেন।
সাবহা থেকে যাত্রা শুরু করার কিছুক্ষণ পরেই দুইজন ছিনতাইকারী প্লেনটার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তাদের হাতে ছিল বন্দুক এবং হ্যান্ড গ্রেনেড। তারা প্লেনটাকে মাল্টায় নিয়ে যেতে পাইলটকে বাধ্য করে। মাল্টায় অবতরণের পরপরই তারা প্রথমে নারী এবং শিশুদেরকে এবং পরে সব যাত্রীকে মুক্তি দিয়ে দেয়। ভেতরে থাকে শুধু পাইলট আর ক্রুরা।
-
১৭ই ফেব্রুয়ারির বিপ্লব: গাদ্দাফীর পতনের জানা-অজানা অধ্যায়
২০১১ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি। আরব বসন্তের ধারাবাহিকতায় সেদিন লিবিয়াতেও শুরু হয়েছিল গাদ্দাফীর বিরুদ্ধে আন্দোলন, যার ধারাবাহিকতায় আট মাস পর ঘটেছিল বেয়াল্লিশ ধরে ক্ষমতায় থাকা লৌহ মানব গাদ্দাফির পতন। কিন্তু ঠিক কী কারণে, কীভাবে শুরু হয়েছিল এ বিদ্রোহ? আর ঠিক কীভাবেই পতন হয়েছিল গাদ্দাফীর? সেই ইতিহাসই তুলে ধরলাম এ লেখায়। লেখাটি মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
-
লিবিয়ার যুদ্ধে বাংলাদেশিদের জীবন: প্রথম আলোতে প্রকাশিত
২০১১ সালে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল আট মাস ছয় দিন। এ বছরের এপ্রিল মাসের ৪ তারিখে শুরু হওয়া রাজধানী ত্রিপোলি দখলের যুদ্ধ গত সপ্তায় সেই সময়সীমাকেও অতিক্রম করে গেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে দীর্ঘ অচলাবস্থার পর গত সপ্তায় যুদ্ধ গতি পেয়েছে। শহরের উপকণ্ঠ ছাড়িয়ে যুদ্ধ এখন এগিয়ে আসছে ত্রিপোলির ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর দিকে, যে এলাকাগুলোতে লিবিয়ানদের পাশাপাশি প্রচুর বাংলাদেশীও বসবাস করে।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল খালিফা হাফতার গত মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন, নতুন বছরের আগেই তিনি ত্রিপোলি জয় করবেন। হাফতারের এ ধরনের দাবি অবশ্য নতুন না। এ বছরের এপ্রিল মাসে তিনি যখন প্রথম ত্রিপোলি দখলের জন্য অভিযান শুরু করেছিলেন, তখন তিনি তার আন্তর্জাতিক মিত্রদের সমর্থন আদায় করেছিলেন এই আশ্বাস দিয়ে যে, এটি হবে খুবই সংক্ষিপ্ত একটি অভিযান। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ রাজধানী তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
-
লিবিয়াতে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছে রাশিয়া!
গত মাসে লিবিয়াতে পরপর দুইটা ড্রোন ভূপাতিত হয়েছিল। একটা ইতালিয়ান, আরেকটা আমেরিকান। দুইটাই ভূপাতিত করা হয়েছিল ত্রিপোলির হাফতার নিয়ন্ত্রিত এলাকার আকাশে, হাফতারবাহিনী অথবা তাদের মিত্রদের দ্বারা। এবং আজ আমেরিকা দাবি করেছে, তাদের ড্রোনটা ভূপাতিত করেছে হাফতার নিয়োজিত রাশিয়ান মিলিটারি কনট্রাক্টররা!
লিবিয়ার আকাশে বিদেশী প্লেনের উপস্থিতি নতুন কিছু না। ২০১১ সালের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটো লিবিয়া থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো সম্ভবত কখনোই ফেরত যায়নি।
যুদ্ধের কারণে শহরের ঘরবাড়ির পাশাপাশি বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। প্রথম বৈদ্যুতিক আলোর দেখা পেতে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল প্রায় চার-পাঁচ মাস। অফুরন্ত অবসরের সেই অন্ধকার দিনগুলোতে রাতের বেলা আমরা যখন বাসার বাইরে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকতাম, তখনই কেবল আমাদের চোখে ধরা দিত আমাদের পৃথিবীর একমাত্র কৃত্রিম বাতির উৎস – চাঁদ আর তারার আলোর ফাঁকে ফাঁকে মৃদু গুঞ্জনে উড়তে থাকা ভিনদেশী প্লেনগুলোর মিটমিট আলো।
-
লিবিয়ার প্রক্সিযুদ্ধের মূল্য দিচ্ছে বাংলাদেশীসহ প্রবাসী শ্রমিক এবং শরণার্থীরা: প্রথম আলোতে প্রকাশিত
লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। রাজধানী ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রণের জন্য এ বছরের এপ্রিলের ৪ তারিখে শুরু হওয়া এ যুদ্ধ শুরু থেকেই ছিল মূলত আন্তর্জাতিক প্রক্সিযুদ্ধ বা ছায়াযুদ্ধ। গত সাড়ে সাত মাসে এর আন্তর্জাতিক রূপটি কেবল আরো প্রকট হয়েছে; অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্য দিয়েও, নিহত বেসামরিক জনগণের মধ্য দিয়েও।
লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে এই মুহূর্তে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে অন্তত নয়টি দেশ। একদিকে পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের সেনাপ্রধান, ফিল্ড মার্শাল খালিফা হাফতারকে সাহায্য করছে প্রধানত আরব আমিরাত, কিন্তু তার সাথে আরো আছে মিসর, সৌদি আরব, ফ্রান্স, সুদান, জর্ডান এবং রাশিয়া। অন্যদিকে জাতিসংঘ সমর্থিত সরকার জিএনএর (গভর্নমেন্ট অফ ন্যাশনাল অ্যাকর্ড) পক্ষে আছে প্রধানত তুরস্ক, এবং সেই সাথে সীমিত আকারে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে কাতার। আর এসব দেশের অর্থায়নে এবং এদের দেওয়া অস্ত্রের এলোপাথাড়ি গোলাগুলি এবং বিমান হামলায় নিহত হচ্ছে দুই পক্ষের লিবিয়ান যোদ্ধাদের পাশাপাশি প্রায় এক ডজন দেশের নাগরিকরা।
-
গাদ্দাফির পতনের ছয় বছর: কেমন আছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা?
গাদ্দাফিবিরোধী আন্দোলনের ষষ্ঠ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই লেখাটি লিখেছিলাম। প্রকাশিত হয়েছিল বিডিনিউজ ২৪ ডট কমে “লিবিয়ায় যেমন আছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা” শিরোনামে। এতে ঐ সময় পর্যন্ত লিবিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের পরিস্থিতির পাশাপাশি লিবিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও সংক্ষিপ্ত একটি চিত্র উঠে এসেছে।
প্রবাসগমনে ইচ্ছুক বাংলাদেশীদের জন্য লিবিয়া সব সময়ই আকর্ষণীয় একটা দেশ ছিল। লিবিয়াতে যাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ, উপার্জন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তুলনায় ভালো, কাগজপত্রের বৈধতা নিয়ে খুব বেশি কড়াকড়ি নেই, পুলিশি হয়রানি নেই, এবং সবচেয়ে বড় কথা, লিবিয়া হচ্ছে স্বপ্নের ইউরোপে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ, সস্তা এবং জনপ্রিয় রুট। কিন্তু এ সবই গাদ্দাফির আমলের কথা। গাদ্দাফির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হওয়ার ষষ্ঠ বর্ষপূর্তি আসছে কয়দিন পরেই। প্রশ্ন হচ্ছে, গাদ্দাফির পতনের পাঁচ বছর পর বর্তমানে প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য লিবিয়া কতটুকু বসবাসযোগ্য?
-
লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবস্থা: বণিক বার্তায় প্রকাশিত
লিবিয়ার চলমান গৃহযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পটভূমি এবং লিবিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপর এই যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে আমার এই কলামটি প্রকাশিত হয়েছে বণিক বার্তার সম্পাদকীয় বিভাগের অভিমত কলামে, গত ১৫ নভেম্বর, ২০১৯ তারিখে।
গত ছয় মাস ধরে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির দখলকে কেন্দ্র করে চলছে এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ, যেটাকে বিশ্লেষকদের অনেকেই লিবিয়ার তৃতীয় গৃহযুদ্ধ নামে অভিহিত করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, জুলাই মাস পর্যন্ত এই যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়েছে, যাদের মধ্যে বেসামরিক জনগণের সংখ্যাই শতাধিক। দুঃখজনকভাবে এদের মধ্যে আছে অন্তত ৯ জন বাংলাদেশীও!
-
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল সফর: নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা
হাফতারের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বেশ ভালো – এটা গত কয়েক বছর ধরেই শুনে আসছিলাম। স্থানীয় বাংলাদেশীদের মুখেই। এবার দেখার সুযোগ হলো।
বেনগাজির বেনিনা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট যখন নেমেছিলাম, তখন রাত দুইটা বাজে। এই রাতের বেলাই আমরা বেনগাজি থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরের আল-মার্জের দিকে রওনা দিলাম।
ত্রিপোলিতে দিনের বেলা হলেও দেখা যেত একটু পরপরই অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট গান ফিট করা টয়োটা পিক-আপ নিয়ে ক্যামোফ্লাজ ট্রাউজার আর স্যান্ডেল পরা, লম্বা চুল-দাড়িওয়ালা মিলিশিয়ারা কাঁধে কালাশনিকভ রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, গাড়ির ভেতরে উঁকি দিয়ে তিনজন পুরুষ দেখামাত্রই রাস্তার পাশে থামাতে বলছে, গাড়ি থেকে নামিয়ে অনর্থক কাগজপত্র নিয়ে ঝামেলা করছে।