![অ্যানাটমি অফ লেখক এফবিআই এজেন্ট টেরর আলি সুফান](https://mhtoha.com/wp-content/plugins/phastpress/phast.php/c2VydmljZT1pbWFnZXMmc3JjPWh0dHBzJTNBJTJGJTJGbWh0b2hhLmNvbSUyRndwLWNvbnRlbnQlMkZ1cGxvYWRzJTJGMjAxOSUyRjExJTJGQW5hdG9teS1vZi1UZXJyb3ItQWxpLVNvdWZhbi1Db3Zlci5qcGcmY2FjaGVNYXJrZXI9MTcxNDA3OTQ5NC00MTk5MSZ0b2tlbj0yYjc5OWZkZTQ3ZjQxMGVm.q.jpg)
সাবেক এফবিআই স্পেশাল এজেন্ট আলি সুফানের লেখা অ…সাধারণ একটা বই। বিস্তারিত রিভিউ পরে কখনও দিবো, আপাতত আলি সুফানের পরিচয় এবং এই বইয়ের পেছনের কাহিনীটা বলি। আলি সুফান হচ্ছেন লেবানিজ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। ১৯৯৮ সালে তিনি ছিলেন সমগ্র এফবিআইর মাত্র ৮ জন আরবি ভাষা জানা এজেন্টের মধ্যে একজন। সে সময় আল-কায়েদা ইয়েমেনে মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ ইউএসএস কোলের উপর আত্মঘাতী হামলা চালালে তাকে লীড ইনভেস্টিগেটর হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
৯/১১ এর হামলার সময়ও আলি সুফান তদন্তের কাজে ইয়েমেনেই ছিলেন। সে সময়ই তিনি আগে থেকে ইয়েমেনে বন্দী থাকা বিন লাদেনের সাবেক ড্রাইভারের মুখ থেকে খালিদ শেখ মোহাম্মদসহ বিভিন্ন টপ লেভেল আল-কায়েদা নেতার ৯/১১ এর হামলার সাথে সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি আদায় করেন। কোনো রকম টর্চার ছাড়াই, দিনের পর দিন আলোচনা এবং জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে।
আলি সুফান ছিলেন সিআইএর রেন্ডিশন (সন্দেহভাজন অপরাধীদেরকে আইনবহির্ভূতভাবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অন্য কোনো দেশের হাতে তুলে দেওয়া) প্রোগ্রামের এবং টর্চারের ঘোর বিরোধী একজন অফিসার। পাকিস্তান থেকে যখন সন্দেহভাজন আল-কায়েদা নেতা আবু জুবায়দাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন সুফান তাকে টর্চার ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে, কথার মারপ্যাঁচে ফাঁদে ফেলে যথেষ্ট তথ্য আদায় করেন। আবু জুবায়দার কাছ থেকেই তিনি লিড হাইজ্যাকার হিসেবে খালিদ শেখ মোহাম্মদের জড়িত থাকার কথা জানতে পারেন।
কিন্তু পরে সিআইএ যখন তার কাছ থেকে আবু জুবায়দাকে ছিনিয়ে নিয়ে ওয়াটারবোর্ডিংসহ ভয়ঙ্কর সব পদ্ধতিতে টর্চার শুরু করে, তখন আবু জুবায়দা তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়। থাইল্যান্ডে সিআইএর একটা স্টেশনে আবু জুবায়দার উপর ৮৩ বার ওয়াটারবোর্ডিং প্রয়োগ করা হয়, কিন্তু তারপরেও তার মুখ থেকে কিছুই বের করা যায়নি। সুফানের মতে, টর্চার করে কখনও কার্যকর ইন্টেলিজেন্স আদায় করা যায় না, বরং টর্চার সন্ত্রাসবাদকে আরও উস্কে দেয়।
আবু জুবায়দার উপর টর্চার সম্পর্কে আরো তথ্য আছে সিআইএর পরিচালক জিনা হ্যাসপেল সম্পর্কে রোর বাংলায় আমার লেখা একটি প্রবন্ধে। ” সিআইএর নতুন প্রধান এবং তার টর্চার চেম্বারের কাহিনী” শিরোনামের প্রবন্ধটি পড়তে পারেন এখান থেকে।
টর্চারের বিরোধিতা করতে গিয়ে সুফান বিভিন্ন সময় আল-কায়েদা নেতা ইবনে আল-শেইখ আল-লিবীর কথাও উল্লেখ করেছেন। সিআইএ তাকে আটক করার পর মিসরের হাতে তুলে দিয়েছিল। মিসরীয়রা জেলের ভেতর তাকে নির্যাতন করে তার মুখ থেকে স্বীকৃতি আদায় করে, সাদ্দাম হোসেনের সাথে আল-কায়েদার সম্পর্ক আছে।
২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের অজুহাত হিসেবে সাদ্দামের সাথে আল-কায়েদার সম্পর্কের কথা জোরেশোরে প্রচার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে যখন আল-লিবীকে জিজ্ঞেস করা হয়, সাদ্দাম হোসেনের সাথে আল-কায়েদার কোনো সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও সে কেন মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলে, লিবী তখন উত্তর দেয়, তোমাদের টর্চার থেকে বাঁচার জন্য আমি সেটাই বলেছিলাম, যেটা তোমরা শুনতে চেয়েছিলে।
২০০৫ সালে আলি সুফান এফবিআই থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, সিআইএ যদি তার কাছ থেকে তথ্য গোপন না করত, তাহলে হয়ত তিনি ৯/১১ এর হামলা ঠেকিয়ে দিতে পারতেন। ৯/১১ এর হামলার জন্য তিনি সিআইএর ব্যর্থতাকে, বা আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে সিআইএর অভ্যন্তরের গোপন এজেন্ডাকে দায়ী করেন।
![এফবিআই স্পেশাল এজেন্ট আলি সুফান](https://mhtoha.com/wp-content/plugins/phastpress/phast.php/c2VydmljZT1pbWFnZXMmc3JjPWh0dHBzJTNBJTJGJTJGbWh0b2hhLmNvbSUyRndwLWNvbnRlbnQlMkZ1cGxvYWRzJTJGMjAxOSUyRjExJTJGQWxpLVNvdWZhbi5qcGcmY2FjaGVNYXJrZXI9MTcxNDA3OTQ5NC0yNDg3NSZ0b2tlbj02YTE3NDY3ZWRjODdjYzE5.q.jpg)
সুফানের কাছে টুইন টাওয়ার হামলায় অংশ নেওয়া অনেক আল-কায়েদা সদস্যের তথ্য, পরিচয়, ছবি এবং গ্রেপ্তারকৃত অন্যান্য সদস্যদের কাছ থেকে আদায় করা স্বীকারোক্তি ছিল। কিন্তু ঐ অপরাধীদের কয়েকজন যে আমেরিকাতেই অবস্থান করছিল, সেটা সিআইএ এফবিআইর কাছ থেকে গোপন করে গিয়েছিল বলেই তাদের পক্ষে হামলা চালানো সম্ভব হয়েছিল। সুফানের দাবি, তথ্যগুলো সিআইএ তাকে সময় মতো জানালে তিনি ঘটনার আগেই পুরো আল-কায়েদার নেটওয়ার্ককে গ্রেপ্তার করে ফেলতে পারতেন।
অ্যানাটমি অফ টেরর নামের এই বইটা সেই আলি সুফানেরই লেখা বই। এখানে অবশ্য তার নিজের তদন্ত কিংবা ৯/১১-এর ঘটনাগুলো না, বরং আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর থেকে আইএসের উত্থান পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ এবং সেগুলোর বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে। গল্পের ভঙ্গিতে বলে যাওয়া বইটা পড়ার সময় ঘটনাগুলো, বিশেষ করে এর প্রধান চরিত্রগুলো এবং তাদের মনোজগতের চিন্তা-ভাবনা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
বইয়ে অনেকগুলো চরিত্র বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে। একজন হচ্ছে খালিদ শেখ মোহাম্মদ, টুইন টাওয়ার হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে যাকে বিবেচনা করা হয়। আরেকজন হচ্ছে আবু মুসাব আল-জারকাওই, যে ইরাকে আল-কায়েদার শাখা একিউআই তথা আল-কায়েদা ইন ইরাক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল এবং শিয়া-সুন্নি বিভাজনকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। জারকাওইর এই আল-কায়েদা ইন ইরাকই পরবর্তীতে ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক এবং আরও পরে ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া তথা আইসিস বা আইএসে বিবর্তিত হয়েছিল।
সিআইএর টর্চার নিয়ে সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির তদন্তের উপর নির্মিত মুভি The Report এ আলি সুফান এবং আবু জুবায়দার কাহিনী সংক্ষেপে দেখানো হয়েছে। মুভিটা নিয়ে লেখা আমার রিভিউ পড়তে পারেন রোর বাংলার এই লিঙ্ক থেকে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, খালিদ শেখ মোহাম্মদ তথা কেএসএম কিংবা আবু মুসাব আল-জারকাওই, দুজনের একজনও মূল আল-কায়েদার সদস্য ছিল না। তারা ছিল আল-কায়েদার প্রতি মৌখিকভাবে অনুগত এবং আল-কায়েদার ব্র্যান্ড নেম ব্যবহার করে নিজেদের এজেন্ডাকে বাস্তবায়ন করতে বেশি আগ্রহী।
এই বই থেকেও দেখা যায়, বিন লাদেনসহ আল-কায়েদার মূল নেতারা জারকাওইর অধিকাংশ কর্মকাণ্ডের সাথেই একমত ছিল না। বারবার চিঠি লিখে, বার্তাবাহক পাঠিয়ে তারা জারকাওইকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডগুলো থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু জারকাওই তাদের নির্দেশ না মানার পরেও তারা জারকাওইর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি, কারণ তাহলে আমেরিকানদের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রামে আরো বেশি ফাটল ধরার সম্ভাবনা ছিল।
নাইন ইলেভেনের পেছনে কিংবা আইএসের উত্থানের পেছনে যারা কন্সপিরেসি খোঁজেন, তারা এই বইটির মধ্যেও সেই ষড়যন্ত্রের উপাদান খুঁজে পেতে পারেন – কেএসএম কিংবা জারকাওই আসলে বিদেশী কোনো গোয়েন্দাসংস্থার এজেন্ট ছিল না তো? আফটার অল, বিন লাদেন নিজেই সিআইএর বা মোসাদের এজেন্ট, এটা কম বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু সিআইএ বা মোসাদ বিন লাদেনের বিশ্বস্ত কাউকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নিয়েছে – এটা মোটেও অসম্ভব কিছু না।
আমার লেখা সবগুলো রিভিউ একসাথে পাবেন এই পাতায়। এই পাতায় একইসাথে পাবেন বিভিন্ন বই অবলম্বনে লেখা আমার অনুবাদ এবং সিরিজগুলোও।
এই রিভিউ (আসলে পাঠ প্রতিক্রিয়া) পড়ে কেউ যদি আলি সুফানকে নিয়ে আগ্রহী হন, তাহলে হুলু নেটওয়ার্কের ১০ পর্বের মিনিসিরিজ “দ্য লুমিং টাওয়ার” (The Looming Tower) দেখতে পারেন। সিরিজটা নির্মিত হয়েছে একই নামের একটা বই থেকে। ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট লরেন্স রাইটের লেখা এই বইটাকে আল-কায়েদার উত্থানের এবং ৯/১১ এর প্রেক্ষাপটের উপর রচিত শ্রেষ্ঠ বইগুলোর একটা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
দ্য লুমিং টাওয়ার বইয়ের একটা প্রধান চরিত্র হচ্ছে এফবিআইর স্পেশাল এজেন্ট আলি সুফান। আর সিরিজটা পুরোটাই নির্মিত হয়েছে সুফানকে কেন্দ্র করে। নির্মাণের দিক থেকে সিরিজটা অসাধারণ। এই সিরিজ নিয়ে রোর বাংলায় লেখা আমার একটা রিভিউ আছে, পড়ে দেখতে পারেন এখান থেকে। আর লুমিং টাওয়ার বইটা না পড়লেও বইয়ের একটা অংশ অবলম্বনে নিউইয়র্কার ম্যাগাজিনে লরেন্স রাইটের লেখা “দ্য এজেন্ট” আর্টিকেলটা পড়ে দেখতে পারেন। চমৎকার একটা আর্টিকেল।