প্রি-অর্ডার নিয়ে অনেকের মধ্যেই কিছুটা কনফিউশন আছে। সো আমি যেটুকু বুঝেছি, সেটুকুই একটু ব্যাখ্যা করছি।
প্রি-অর্ডার জিনিসটা কী? আপনি কখন প্রি-অর্ডার করবেন? কখন করবেন না?
প্রি-অর্ডার হচ্ছে বই প্রকাশিত হওয়ার আগেই অর্ডার দিয়ে দেওয়া। যেমন ধরুন আপনার পরিচিত একজন লেখকের প্রকাশনী থেকে ঘোষণা এলো, তারা আগামী জুন মাসের ১ তারিখে ঐ লেখকের নির্দিষ্ট একটা বই প্রকাশ করবে। এখনও বইটা প্রেসেই যায়নি, জাস্ট পেজ মেকআপ তৈরি হয়েছে, প্রচ্ছদ তৈরি হয়েছে এবং দাম নির্ধারিত হয়েছে। এখন আপনি ইচ্ছে করলে এই মার্চ মাসেই বইটা অর্ডার করে রাখতে পারেন। এটাই প্রি-অর্ডার।
প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কেন এই কাজটা করবেন? কোন ধরনের বইয়ের ক্ষেত্রে করবেন?
প্রথমত, প্রি অর্ডার শুধুমাত্র সেই সব লেখকদের ক্ষেত্রেই করা উচিত, যাদের লেখনীর উপর আপনার পূর্ণ বিশ্বাস আছে, এবং আপনি নিশ্চিতভাবেই যাদের বই কিনবেন বলে মনস্থির করেছেন।
কিন্তু আপনি ইচ্ছে করলে প্রকাশের পরেও বইটা কিনতে পারেন। আগেই কেন অর্ডার করতে হবে? একটা কারণ হচ্ছে, আপনি প্রি অর্ডার করলে প্রকাশকের বুঝতে সুবিধা হবে বইটা কিরকম বিক্রি হবে। যদি দেখা যায় প্রচুর প্রি অর্ডার আসছে, তাহলে প্রকাশক একসাথে দুই-তিন হাজার কপি ছাপানোর অর্ডার দিয়ে দিতে পারবে, ফলে মার্কেটে আসার পরপরই প্রিন্ট আউট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে না, এবং প্রকাশক চাইলে পরবর্তীতে অতিরিক্ত ডিসকাউন্টও দিতে পারবে।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে এটা হয় কিনা জানি না, বাট বিদেশে প্রি-অর্ডারের ক্ষেত্রে প্রকাশক বাড়তি কিছু ছাড় ঘোষণা করে। সেই ছাড়ের লোভেও আপনি প্রি-অর্ডার করতে পারেন।
তৃতীয়ত, বইটা যদি খুবই ইন্টারেস্টিং টপিকের হয়, এবং আপনি যদি চান প্রকাশের সাথে সাথেই বইটা আপনার হাতে এসে পৌঁছুক, তাহলে প্রি-অর্ডার করে রাখা আপনার জন্য লাভজনক। কারণ তাহলে আপনি ভুলে গেলেও ঠিকই প্রকাশের সাথে সাথেই বই আপনার ঘরে এসে হাজির হবে। আর প্রি-অর্ডার করে না রাখলে আপনার হাতে এসে পৌঁছতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত দেরি হয়ে যেতে পারে।
আমার নতুন বই!!!
স্পাই স্টোরিজ ২: স্নায়ুযুদ্ধের সফলতম ডাবল এজেন্টের কাহিনি
অবিশ্বাস্য সত্য ঘটনা অবলম্বনে ননফিকশন স্পাই থ্রিলার। উচ্চপদস্থ এক ডাবল এজেন্টের কাছে ১৫ বছর ধরে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নাস্তানাবুদ হওয়ার কাহিনি।
পাবেন রকমারি ডট কমে (22% ছাড়ে), প্রকাশনীর ফেসবুক পেজ (25% ছাড়ে) এবং আপনার পছন্দের যেকোনো অনলাইন বুকশপে।
এবার আসা যাক কখন প্রি-অর্ডার করবেন না, সেই কথায়। ২০২০ সালের বইমেলা থেকে আমার নিজের যে অভিজ্ঞতা হলো, তা থেকে বলতে পারি, বইমেলার সময় আপনার যদি মেলায় যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে প্রি-অর্ডার করবেন না।
এটাও অবশ্য একটু ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। ধরুন কোনো প্রকাশনী ডিসেম্বর মাসেই প্রি-অর্ডার লিঙ্ক দিয়ে দিলো এবং প্রকাশের তারিখ হিসেবে মেলার প্রথম দিনের কথা ঘোষণা করল। এখন আপনার অতীত অভিজ্ঞতা যদি বলে যে ঐ প্রকাশনী কথা দিয়ে কথা রাখতে পারে, তাহলে আপনি প্রি-অর্ডার করতে পারেন।
সেক্ষেত্রে প্রকাশনী জানুয়ারির মাঝামাঝিই বই প্রিন্ট করে ফেলবে, জানুয়ারির ৩০-৩১ তারিখের দিকে আপনার বাসায় বই পাঠিয়ে দিবে, এবং এরপর মেলায় তুলবে। দেখা যাবে মেলায় না গিয়েও আপনি ঘরে বসেই সবার আগে বই পড়ে ফেলতে পারছেন।
কিন্তু যদি এমন হয় যে, প্রকাশনী প্রি-অর্ডারের লিঙ্কই দিলো ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, তখন? সেক্ষেত্রে আপনি ঢাকায় থাকলে প্রি-অর্ডার করার কোনো যুক্তি নাই। ঢাকার বাইরে থাকলে করতেও পারেন, নাও পারেন। আপনার বাড়তি কোনো লাভক্ষতি নাই।
আরো পড়ুন: নিউজ সাইটগুলোর প্রিমিয়াম আর্টিকেল যেভাবে পড়বেন সম্পূর্ণ ফ্রিতে!
আমার নিজের অভিজ্ঞতাটাই বলি। এসপিওনাজ জগতের কতগুলো সত্য ঘটনা নিয়ে আমার “স্পাই স্টোরিজ” বইটার প্রি-অর্ডার লিঙ্ক এসেছিল ফেব্রুয়ারির শুরুতে। কয়েকদিনের মধ্যেই প্রায় ১৫০ মানুষ প্রি-অর্ডার করে ফেলেছিল। এরমধ্যে অনেকে ঢাকার ভেতর থেকেই করেছিল।
কিন্তু পরে যেটা হলো, বই প্রেস থেকে বের হতে হতেই ১২ তারিখ হয়ে গেল। এর মধ্যে মেলাতেও পাঠাতে হবে, রকমারিতেও দিতে হবে। দেখা গেল উভয় জায়গায় টানাটানি পড়ে যাচ্ছে। আবার দেখা গেল রকমারিও এই বইমেলার মৌসুমে অতিরিক্ত ব্যস্ততার কারণে ডেলিভারি দিতে দেরি করে ফেলছে।
যারা প্রি-অর্ডার করেছিল, তাদের অনেকেরই আশা ছিল তারা সবার আগে বইটা পড়বে। কিন্তু যেহেতু লিঙ্কটাই এসেছিল মেলা শুরু হওয়ার পর, তাই সে আশা বাস্তবসম্মত ছিল না। কাজেই দেখা গেল মেলায় অ্যাভেইল্যাবল হওয়ার পরেও প্রি-অর্ডারকারীদের কাছে বইটা পৌঁছতে এক সপ্তাহ বা দশদিনের মতো দেরি হয়ে গেল।
সো সামারিটা কী?
১। বই যদি বছরের মাঝামাঝি প্রকাশিত হয় অথবা বইমেলার অনেক আগে প্রি-অর্ডারের লিঙ্ক আসে, তখন প্রি-অর্ডার করা সবচেয়ে বেশি অর্থবহ।
২। বইমেলার সময় যদি আপনি ঢাকার বইরে থাকেন, মেলায় উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলেও প্রি-অর্ডার করতে পারেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে কোনো উচ্চাশা না রাখাই ভালো হবে।
৩। যদি ঢাকায় থাকেন এবং বইমেলায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে প্রি-অর্ডার করার তেমন কোনো মানে নেই।
তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রি-অর্ডারকে অর্থবহ করতে হলে প্রকাশনীগুলোকে এবং অনলাইন বুকশপগুলোকে আরো বেশি প্রফেশনাল হতে হবে।