গ্ল্যাডিয়েটর সিনেমাটা দেখেছেন? অথবা স্পার্টাকাস? অথবা বেন হুর? অথবা প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যকে চিত্রায়িত করা যেকোনো সিনেমা?
খেয়াল করলে দেখবেন এসব সিনেমায় রোমান সম্রাটরা এবং তাদের সিনেটররা লম্বা সাদা এক ধরনের আলখাল্লা জাতীয় কাপড় এমনভাবে গায়ে পেঁচিয়ে রাখে, যা বাম হাতকে ঢেকে রাখে আর ডান হাতকে উন্মুক্ত রাখে।
শুধু সিনেমা না, প্রাচীন রোমের যেকোনো ভাস্কর্যতেও আপনি এই পোশাকের দেখা পাবেন। প্রায় একই জাতীয় পোশাকের দেখা পাবেন প্রাচীন গ্রীক ভাস্কর্যগুলোতে এবং গ্রিক রাজদরবারকে চিত্রায়িত করা সিনেমাতেও (যেমন অ্যাগোরা)।
ফাস্ট ফরোয়ার্ড ২,০০০ বছর। প্রায় হুবহু একই জাতীয় পোশাকের দেখা পাবেন আধুনিক লিবিয়াতেও। লিবিয়ানদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক এটা। একাধিক নাম আছে এর। প্রধানত জার্দ নামে পরিচিত হলেও হোলি, বুরকান প্রভৃতি নামেও একে অভিহিত করা হয়।
গ্রিক হাইমেশন এবং রোমান ম্যান্টলের সাথে লিবিয়ান জার্দ এর খুব বেশি পার্থক্য নেই। এটাও মূলত একখণ্ড সাদা কাপড়। সাধারণত ৪.৫ থেকে ৬ মিটার লম্বা এবং ১.৫ মিটার চওড়া। এবং এটাও পরা হয় একইভাবে – শরীরের চারপাশে এমনভাবে পেঁচিয়ে যেন ডান হাত মুক্ত থাকে। বুকের বাম পাশে একটা গিঁট দিয়ে কাপড়টাকে বেঁধে রাখা হয় এবং এরপর পেছন থেকে এমনভাবে পেঁচিয়ে আনা হয়, যেন প্রয়োজনে মাথা ঢাকা যায়।
লিবিয়ান এই পোশাকের সাথে গ্রিক এবং রোমান পোশাকের এতো মিলের রহস্য কোথায়? আজ থেকে মোটামুটি দুই-তিন হাজার বছর আগে লিবিয়া শাসন করত গ্রিক এবং রোমানরা। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের শাহ্হাত (সাইরিন) ছিল গ্রিকদের অধীনে, অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলের ত্রিপোলি ছিল রোমানদের অধীনে। ত্রিপোলি শব্দটাই এসেছে ট্রাইপোলিস (আরবিতে তরাবুলুস বা তরাবলেস) থেকে, যার অর্থ তিনটা শহর। এই তিনটা শহর ছিল অয়া (বর্তমান ত্রিপোলির প্রাচীন নাম), খোমস (লেপটিস ম্যাগনা) এবং সাবরাতা। তবে কি তাদের কাছ থেকেই লিবিয়ানরা এই পোশাক ধার করেছে?
না। বরং উল্টোটাই সত্য। ইতালিয়ান ইতিহাসবিদ Giulia Narduchi তার “Barqa since the Greek Settlement” বইয়ে উল্লেখ করেছেন, প্রাচীন গ্রিকরা সর্বপ্রথম স্থানীয় লিবিয়ানদের দেখাদেখি এই পোশাক ব্যবহার করতে শুরু করে, এরপর তাদের কাছ থেকে রোমানরা এটা আয়ত্ত্ব করে। একই মত দিয়েছেন ড্যানিশ ভাষাতত্ত্ববিদ Birket-Smith, K তার “The Paths of Culture” বইয়ে। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ হিরাটোডাসও বলেছেন, এথেন্সের পোশাক এবং যুদ্ধের বর্মগুলো এসেছে লিবিয়া থেকে।
পুরানো দিনে জার্দ শুধুমাত্র পুরুষদের পোশাক হিসেবেই ব্যবহৃত হতো না, একইসাথে এটা ব্যবহৃত হতো বিছানার চাদর এবং তাঁবুর কাপড় হিসেবেও। কুয়া থেকে পানি তোলার সময়ও এই লম্বা চাদর বেশ কাজে লাগত। এছাড়াও জার্দের কিছু সামাজিক ব্যবহারও ছিল। বিয়ের সময় জার্দের এক প্রান্ত তুলে কনেকে এর নিচে দিয়ে হাঁটিয়ে নেওয়া হতো। লাশ দাফনের আগে কফিনকে জার্দ দিয়ে মুড়িয়ে বহন করার রীতিও প্রচলিত ছিল।
জার্দ প্রধানত সাদা রংয়ের হয়, কিন্তু বাদামী রংয়ের জার্দও দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত লিবিয়ান মহিলারা ঘরেই জার্দ তৈরি করত। “মাসদা” নামের একটা মেশিনের সাহায্যে ভেড়ার পশমের উল থেকে আশেপাশের কয়েক বাড়ির মহিলারা দল বেঁধে জার্দ বুনত। জার্দ বুনতে পারাটা শুধু লিবিয়ানদের জন্য না, গ্রিক এবং রোমানদের জন্যও অনেক সম্মানের বলে বিবেচনা করা হতো। একইভাবে জার্দ সঠিকভাবে পরতে না পারাটা পুরুষদের জন্য অপমানজনক বলে বিবেচনা করা হতো।
বর্তমানে অবশ্য জার্দ-এর ব্যবহার খুবই সীমিত। বৃদ্ধরা অনেকে এখনও জার্দ পরে, কিন্তু যুবকদেরকে সাধারণত ঈদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাপনী অনুষ্ঠান এবং ঘোড়দৌড়-সহ সীমিত কিছু ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান ছাড়া এই পোশাক পরতে দেখাই যায় না।
এই সকালে চমৎকার একটি আর্টিকেল পড়লাম। আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই । সুস্থ থাকুন নিরাপদ থাকুন
অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
খুব সুন্দর একটা আর্টিকেল পড়লাম। লিবিয়া নিয়ে আপনি পূর্নাঙ্গ বই লিখতে পারেন, শুভকামনা রইল।