মরক্কো হচ্ছে ওয়ান অফ দ্য মোস্ট প্রো-ইসরায়েলি আরব রাষ্ট্র।
অন্তত ষাটের দশক থেকেই তারা গোপনে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে আসছে, এবং বিভিন্ন ক্রুশিয়াল ব্যাপারে ইসরায়েলকে সাহায্য করে আসছে।
ষাটের দশকে মরক্কো ইসরায়েলি গোয়েস্থা মোসাদকে রাবাতে অফিস খোলার অনুমতি দেয়। এবং ১৯৬৫ সালে ক্যাসাব্লাঙ্কায় যখন আরব লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তখন মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় হাসান মোসাদকে সেই সম্মেলনে যোগ দেওয়া আরব লিডারদের উপর আড়ি পাতার অনুমতি দেন।
বলা হয়, ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের হাতে আরবদের শোচনীয় পরাজয়ের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল মোসাদের এই স্পাইয়িং অপারেশন, যার জন্য দায়ী এই মরক্কো।
বর্তমানেও যেই কয়েকটা আরব দেশ ইসরায়েলের সাথে পূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছে, মরক্কো তার মধ্যে অন্যতম। মরক্কো হচ্ছে হাতে গোণা কয়েকটা মুসলিম রাষ্ট্রর মধ্যে একটা, যারা ইসরায়েলি পাসপোর্টধারীদেরকে অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রদান করে।
কিন্তু মরক্কোর এই ইসরায়েল-বান্ধব নীতির দায় সম্পূর্ণই তাদের রাজপরিবারের। মরক্কোর জনগণের যে তাতে সমর্থন নাই, সেটা প্রতিটা ম্যাচে তাদের ফুটবলারদের জয়ের পরেই দেখা যাচ্ছে।
শেষ ম্যাচে স্পেনকে হারানোর পর তো তারা সরাসরি মাঠেই ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়েছে, কিন্তু এর আগে অন্যান্য ম্যাচেও তারা জয়ের পর মাঠের বাইরে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়েছে, ফিলিস্তিনের জন্য গান গেয়েছে। কাতারের রাস্তাঘাটে মরোক্কান সাপোর্টারদেরকেও ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে উল্লাস করতে দেখা গেছে।
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বা বিভিন্ন স্বার্থের জন্য ক্ষমতাসীনরা অনেক সময়ই অনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেটা দিয়ে কোনো দেশের মানুষকে বিচার করা যায় না। দেখা উচিত, ঐ সিদ্ধান্তের পক্ষে দেশের মানুষের কতটুকু সমর্থন আছে। এই জায়গায় এই বিশ্বকাপে ফিলিস্তিন প্রশ্নে আরবরা তাদের নৈতিক অবস্থানের পরিষ্কার প্রমাণ দিয়েছে।
ক্ষমতাসীনদেরকে অসন্তুষ্ট করার সম্ভাবনা নিয়ে মাঠে ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানোটা শুধু আবেগের ব্যাপার না, এটা সাহসেরও ব্যাপার। চিন্তা করতে পারেন, আমাদের প্রতিবেশী কোনো একটা দেশের সাথে ক্ষমতাসীন সরকারের সুসম্পর্ক আছে জানার পর দেশের কোনো সেলিব্রেটি খেলোয়াড় সেই দেশের কোনো নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করছে?
মোটে আমাদের পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েলে ভ্রমণ নিষিদ্ধ উঠিয়ে ফেলার পর থেকেই এলিট সোসাইটির অনেক সুশীল ফেসবুক সেলিব্রেটির সুর পাল্টে যেতে দেখেছি। ইনিয়ে-বিনিয়ে তারাও এই সিদ্ধান্তের পক্ষেই কথা বলেছে – দেশের স্বার্থে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। আরবরা স্বীকৃতি দিতে পারলে আমরা দিলে কী সমস্যা?
এই জায়গাতেই মরোক্কান খেলোয়াড়দের সাথে আমাদের পার্থক্য। দেশের উপর চাপ আসবে, ক্ষমতাসীনরা তাদের উপর অসন্তুষ্ট হবে, হয়তো পরবর্তীতে ব্ল্যাকলিস্টে নাম যাবে – এসব আশঙ্কা মাথায় রেখেও তারা সারা দুনিয়ার সামনে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়েছে।
মরক্কোর ফুটবল খেলা সুন্দর, কিন্তু আহামরি সুন্দর না। স্পেনের বিরক্তিকর টিকিটাকার তুলনায় তাদের খেলা ভালো লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পর্তুগাল বা ফ্রান্সের খেলা পড়লে সেটা বলার কোনো উপায় থাকবে না। কিন্তু যে মোরাল সুপিরিয়রিটি তাদের খেলোয়াড়রা দেখিয়েছে, শুধু সেই কারণে হলেও তাদের প্রতি সমর্থন থাকবে।
মরক্কো তাদের এক কলোনাইজার, স্পেনকে হারিয়েছে। জানি সম্ভাবনা খুবই কম, কিন্তু তারপরেও মনেপ্রাণে চাই তারা তাদের আরও দুই কলোনাইজার পর্তুগাল এবং ফ্রান্সকে হারিয়ে ফাইনাল পর্যন্ত যাক। এরপর চ্যাম্পিয়ন না হলেও চলবে।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয়ক আমার সবগুলো লেখা।
[…] মরক্কোর ফুটবল টিমের ফিলিস্তিনের প্রত…বিভাগ: ইতিহাস, বিশ্ব রাজনীতি […]