আগামী নির্বাচনে কি বিএনপির চেয়েও জামাত বেশি ভোট পাবে?

সো, আগামী নির্বাচনে কি ছাত্রদের রাজনৈতিক দলই বিজয় অর্জন করবে? এবং জামাত দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে? বিএনপি ক্ষমতার বলয় থেকে ছিটকে পড়বে? মোস্ট প্রবাবলি, না।

ফেসবুকে আমার এবং সাদিকুর রহমান খানের করা দুটো পোলেই অবশ্য এরকম রেজাল্টই দেখা গেছে – দুটোতেই ছাত্ররা বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। এবং দুটোতেই জামাত দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। বিএনপির অবস্থান দুটোতেই একেবারেই তলানিতে।
এবং এই পোলগুলো একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতোও না। আমার পোলে প্রায় হাজার তিনেক এবং সাদিকের পোলে প্রায় হাজার দশেক মানুষ ভোট দিয়েছে।

কিন্তু অনলাইন পোলের সীমাবদ্ধতাগুলো আমি জানি। কাজেই এই ফলাফলকে সেই সীমাবদ্ধতার ফিল্টারে ছেঁকে এরপরেই কেবল বিবেচনায় নিতে হবে।
সীমাবদ্ধতাগুলো কী?

প্রথমত, আমার এবং সাদিকের, উভয়ের ফলোয়ার লিস্টই বেশ খানিকটা বায়াসড। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের, উগ্র সেক্যুলারিজমের, মিলিট্যান্ট বামদের সমালোচনা করে আসছি। আমরা নিজেরা সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কথা না বললেও, অধিকাংশ সময় আমাদের লেখায় ইসলামপন্থীদের প্রতি একধরনের সহানুভূতি ছিল। অথবা বলা যায় ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে সমাজে যে বৈষম্য এবং বিদ্বেষ, সেটার সমালোচনা ছিল। এবং স্পেসিফিক্যালি আমার ক্ষেত্রে, আমি বহু বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করছি।

এসব কারণে আমাদের ফলোয়ারদের একটা বড় অংশই জামাত সমর্থক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে আমাদের পোলে জামাত যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে, সেটাকে সিরিয়াসলি নেওয়ার উপায় নেই। জরিপটা যদি প্রথম আলো করত, অথবা কোনো ক্রিকেট বিষয়ক পেজ করত, যেখানে সব ধরনের মানুষের সমান বিচারণ, তাহলে বেটার ফলাফল পাওয়া যেত।

গল্পগুলো সিরিয়ার মকআপ

আমার নতুন বই!!!

স্পাই স্টোরিজ ২: স্নায়ুযুদ্ধের সফলতম ডাবল এজেন্টের কাহিনি

অবিশ্বাস্য সত্য ঘটনা অবলম্বনে ননফিকশন স্পাই থ্রিলার। উচ্চপদস্থ এক ডাবল এজেন্টের কাছে ১৫ বছর ধরে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নাস্তানাবুদ হওয়ার কাহিনি।

৪০০ .০০

পাবেন রকমারি ডট কমে (22% ছাড়ে), প্রকাশনীর ফেসবুক পেজ (25% ছাড়ে) এবং আপনার পছন্দের যেকোনো অনলাইন বুকশপে।

বিস্তারিত
Short PDF

দ্বিতীয়ত, মাঠের রাজনীতি এবং ফেসবুকের রাজনীতি ভিন্ন। ফেসবুক স্ট্যাটিস্টিক্স অনুযায়ী আমাদের ফলোয়ারদের ৮০%-এরই বয়স ১৮ থেকে ৩৪ এর মধ্যে। এবং এরাও মোস্টলি ঢাকার বা অন্যান্য আরবান এরিয়ার মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণি। এর বাইরে দরিদ্র, তুলনামূলক কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, সুবিধাবঞ্চিত এবং ৪০+ বয়সীদের যে বিশাল অংশটা – তাদের মতামত আমাদের পোলে প্রতিফলিত হবে না।

ফলে ফেসবুক পোলের রেজাল্টে হয়তো মনে হতে পারে – ছাত্ররাই জিতবে, জামাত সেকেন্ড হবে; কিন্তু বাস্তবে গ্রামেগঞ্চে গেলে এখনও মোস্ট প্রবাবলি দেখা যাবে বিএনপিই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের ভোটের আশেপাশে বাকিরা পাত্তাই পাবে না।

তৃতীয়ত, মাত্রই অভ্যুত্থান শেষ হলো। ছাত্রদের ইমেজ এখনও ফ্রেশ। কিন্তু নির্বাচন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের ইমেজ এরকম থাকবে না।

অনুমান করা যায়, খুব দ্রুতই তারা বিভিন্ন ধরনের বিতর্কে জড়িয়ে পড়বে। সাধারণ ছাত্রদেরকে হতাশ করার মতো বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিবে। তাদের মধ্যে ভাঙ্গন দেখা দিবে। নতুন দল গঠন নিয়ে রাজনীতি হবে, বাণিজ্য হবে, ঝগড়া-ঝাঁটি হবে, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ হবে। পদ নিয়ে কাড়াকাড়ি হবে, ইভেন একাধিক দল গঠিত হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে। ৩০০ আসনে তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ প্রার্থী দিতে গিয়ে তাদেরকে এমন অনেককে মনোনয়ন দিতে হবে, যাদেরকে তারা নিজেরাই ভালোভাবে চেনে না, যারা বিতর্কিত, যারা সুবিধাভোগী।

ফলে শেষপর্যন্ত সবকিছু সামলে নিতে পারলেও এসব ঘটনাপ্রবাহ তাদের জনপ্রিয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এখন পোল থেকে যেরকম মনে হচ্ছে, বাস্তবে আগামী নির্বাচনের সময় সে ধরনের জনপ্রিয়তা তাদের থাকবে না। দিনশেষে খুব সম্ভবত বিএনপিই বাজিমাত করবে।

আমার সবগুলো বই


মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহার স্পাই স্টোরিজ বইয়ের প্রচ্ছদ
মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহার স্পাই স্টোরিজ ২ বইয়ের প্রচ্ছদ
মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহার গল্পগুলো সিরিয়ার বইয়ের প্রচ্ছদ

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে যদি শেষপর্যন্ত বিএনপিই জেতে, তাহলে এই যে পোলগুলোতে বিএনপির জনপ্রিয়তা তলানিতে দেখা যাচ্ছে, এর তাত্‍পর্য কী?

এর তাত্‍পর্য হচ্ছে, বিএনপি বড়জোর আর এক বা দুই টার্ম নির্বাচনে জিতবে, ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু ভবিষ্যতের বাংলাদেশে, জেন জির বাংলাদেশে, বিএনপির স্থান হবে না। যদি না তারা আপাদমস্তক রিফর্ম করে, পুরাতন ইমেজ ঝেড়ে ফেলে, সম্পূর্ণ নতুন নেতৃত্ব, নতুন ভিশন নিয়ে সামনে আসতে না পারে।

সেটা না হলে আগামীর বাংলাদেশে রাজত্ব করবে প্রধানত নতুন কোনো রাজনৈতিক দল, মোস্ট প্রবাবলি এই ছাত্রদের মধ্য থেকে উঠে আসা কোনো দল; এবং উল্লেখযোগ্য পার্সেন্টেজে, জামাত।

জামাতের অ্যাকচুয়াল জনপ্রিয়তাটা আমরা নতুন একটা নির্বাচন হওয়ার আগ পর্যন্ত বুঝতে পারব না। কিন্তু এটা নিশ্চিত, যে ৫% ভোটের হিসেব সবাই কোট করে আত্মতৃপ্তিতে ভোগে, সেটা হেভিলি আউটডেটেড।

এই সময়ের মধ্যে পুরো একটা জেনারেশন পাল্টে গেছে; জামাতের অভিযুক্ত নেতারা দৃশ্যপট থেকে বিদায় নিয়েছে; এবং এই সময়ে তাদের উপর, ইন জেনারেল ইসলামপন্থীদের উপর জুলুমের প্রতিক্রিয়া, তাদের নিভৃত সামাজিক কার্যক্রম এবং বিএনপি-আওয়ামী লীগের বিপরীতে তাদের দুর্নীতি-লুটপাটের রেকর্ড না থাকাটা তাদেরকে একটা শ্রেণির কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

সুতরাং যদিও তারা পোলের মতো ড্রামাটিক ফলাফল পাবে বলে মনে করার কোনো কারণ নাই, কিন্তু তারা এবং ছাত্ররা যে আগামীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে আবির্ভূত হবে, এবং বিএনপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার স্বপ্নকে ভালোভাবেই চ্যালেঞ্জ করবে, সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

ইমেইলের মাধ্যমে নতুন পোস্টের আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে 40 জনের সাথে যোগ দিন।
Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *