-
অপারেশন অলিম্পিয়া: যেদিন সম্পূর্ণ পিএলও নেতৃত্বকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল ইসরায়েল!
আজকের দিনটায় (১ জানুয়ারি) ঘটতে যাচ্ছিল অপারেশন অলিম্পিয়া – বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম বর্বোরিত একটা সন্ত্রাসী হামলা। আর সেটা ঘটাতে যাচ্ছিল ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের পিএলও নেতাদের উপর।
১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারি পিএলওর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লেবাননের বৈরুত স্টেডিয়ামে একটা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পিএলওর চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত, তার ঘনিষ্ঠ সহকারী আবু আইয়্যাদ, আবু জিহাদসহ পিএলওর প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
-
মিউনিখ ম্যাসাকার: অপারেশন ইক্রিত ওয়া বিরাম
১৯৭২ সালের আজকের এই দিনে (৫ সেপ্টেম্বর) সংঘটিত হয়েছিল অপারেশন “ইক্রিত ওয়া বিরাম”। নামটি এসেছে ফিলিস্তিনের দুটি খ্রিস্টান-প্রধান গ্রাম “ইক্রিত” এবং “বিরাম” থেকে, যাদের অধিবাসীদেরকে জায়নিস্টরা ১৯৪৮ সালে উচ্ছেদ করেছিল।
অপারেশনের অধীনে “ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর” নামে একটি ফিলিস্তিনি গেরিলা সংগঠন জার্মানির মিউনিখের অলিম্পিক ভিলেজে ঢুকে পড়ে এবং ১১ জন ইসরায়েলি খেলোয়াড় ও কোচকে জিম্মি করে।
তাদের মুক্তিপণ হিসেবে তারা ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ২৩৪ জন ফিলিস্তিনির এবং জার্মানির কারাগারে বন্দী বামপন্থী গেরিলা সংগঠন “রেড আর্মি ফ্যাকশন” তথা “বাদর-মেইনহফ” এর বন্দীদের মুক্তির দাবি জানায়।
কিন্তু ইসরায়েল আলোচনায় বসতে রাজি না হওয়ায় এবং জার্মানির পুলিশের অদক্ষতায় জিম্মি নাটক শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষে রূপ নেয়। বন্দী ১১ জন ইসরায়েলির সবাই, এক জার্মান পুলিশ অফিসার এবং ৫ জন ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর সদস্য নিহত হয়।
তাদের বাকি তিন জন সদস্য গ্রেপ্তার হয়, কিন্তু পরবর্তীতে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের প্রতিশোধের ভয়ে জার্মানি তাদেরকে মুক্তি দেয়। লিবিয়া তাদেরকে বীরের বেশে বিপুল সংবর্ধনা দিয়ে এয়ারপোর্টে স্বাগত জানায়।
মিউনিখে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি প্রচলিতভাবে মিউনিখ ম্যাসাকার নামে পরিচিত।
-
ডোভিড ওয়েইজ: ইসরায়েলের ধ্বংস চান যে ইহুদী ধর্মগুরু!
এই ভদ্রলোকের নাম ইসরোয়েল ডোভিড ওয়েইজ (Yisroel Dovid Weiss)। তিনি একজন ইহুদী ধর্মগুরু। ওয়েইজ হচ্ছেন বিশ্বের হাজার হাজার ইহুদীদের মধ্যে একজন, যাদের অবস্থান ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, জায়নিজমের বিরুদ্ধে।
ওয়েইজের মা পোলিশ। এবং তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই নাৎসিদের হাতে গণহত্যার শিকার হয়েছিল। তারপরেও ওয়েইজ মনে করেন, ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা একটা ভয়াবহ ধরনের অন্যায়।
এবং এর জন্য তিনি শুধু ওয়ান স্টেট বা টু স্টেট সল্যুশন চান না। তিনি চান ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রের বিলুপ্তি। তিনি চান রাষ্ট্রটা থাকবে ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণে, ইহুদীরা তাদের পাশাপাশি, তাদের অধীনে শান্তিতে বসবাস করবে।
তার বক্তব্যে পক্ষে তিনি তাওরাত থেকেই যুক্তি দেন। তার দাবি, ইসরায়েলেও যারা অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ, ধর্মগুরু, তারা নিজেদের বাড়িতে ইসরায়েলের পতাকা ওড়ায় না, নিজেদের ছেলেমেয়েদেরকে সেনাবাহিনীতে দেয় না। কারণ তারা জানে ইহুদী ধর্মের দিক থেকেও এটা বড় ধরনের অন্যায়।
অথচ আমাদের মুসলমানদের রাষ্ট্রগুলোর নেতারাও সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের পক্ষে সাফাই গাইছে!
আল-জাজিরার সাথে তার একটি সাক্ষাৎকার আছে। দেখতে পারেন এখান থেকে।
ফিলস্তিন-ইসরায়েল বিষয়ক আমার সবগুলো লেখা পড়ুন এখান থেকে।
-
যেদিন ইসরায়েল নিজেদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছিল!
২০০৫ সালের আজকের এই দিনটি (২২ আগস্ট) ছিল ফিলিস্তিনের গাজাবাসীদের জন্য আনন্দের একটি দিন। দীর্ঘ ৩৮ বছরের দখলদারিত্বের পর এদিন গাজা থেকে সর্বশেষ ইসরায়েলি সেটেলমেন্ট উচ্ছেদ করা হয়।
এই “ডিসএনগেজমেন্ট”-এর ঘটনা ঘটে ২০০০ সাল থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পরিপ্রেক্ষিতে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ইসরায়েল গাজা থেকে নিজেদের অবৈধ বসতিগুলো এবং সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। যেসব ইহুদী সেটলার যেতে চায়নি, তাদেরকে সৈন্যরা জোর করে উচ্ছেদ করে।
গাজার মোট ২১টি সেটেলমেন্টের প্রায় ৮,০০০ সেটলারকে সে সময় উচ্ছেদ করা হয়। যাওয়ার সময় সৈন্যরা বুলডোজার দিয়ে সেটলারদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে যায় যেন ফিলিস্তিনিরা সেগুলো ব্যবহার করতে না পারে।
যদিও শেষ পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি, গাজা পরিণত হয়েছে উন্মুক্ত কারাগারে, তারপরেও ইসরায়েলিদেরকে উচ্ছেদ করতে পারাটা ছিল বড় একটা অর্জন।
-
এলি কোহেন: দামেস্কে ইসরায়েলের ছদ্মবেশী গুপ্তচর
এলি কোহেন ছিলেন ইসরায়েলের বেস্ট স্পাইদের মধ্যে একজন।
এলি কোহেন ছিলেন মিসরীয় ইহুদী, কিন্তু তার বাবা ছিলেন সিরিয়ার আলেপ্পো থেকে আসা। ফলে কোহেনের মিসরীয় এবং সিরিয়ান – উভয় ডায়ালেক্টের আরবির উপরেই ভালো দক্ষতা ছিল। ১৯৫৭ সালে মোসাদে যোগ দেয়ার পর কোহেনকে ধনী সিরিয়ান ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে সিরিয়াতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যেন তিনি ক্ষমতাসীন সিরিয়ানদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন।
-
মোহাম্মদ দাহলান: বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী আমেরিকান-ইসরায়েলি এজেন্ট?
এই ফিলিস্তিনি ভদ্রলোকের (!) নাম মোহাম্মদ দাহলান। এবং ইনি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী আমেরিকান এবং ইসরায়েলি এজেন্ট।
দাহলানের জন্ম ফিলিস্তিনের খান ইউনুসে। আর দশজন ফিলিস্তিনি কিশোরের মতো তিনিও ইসরায়েলবিরোধী হিসেবেই বেড়ে উঠেছিলেন। ইনফ্যাক্ট তিনি গাজায় প্রথম ফাতাহ্’র যুব সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
প্রথম ইন্তিফাদার সময় তার বেশ সক্রিয় ভূমিকা ছিল। সে সময় ইসরায়েল তাকে অন্তত ১১ বার গ্রেপ্তার করে। তার জীবনের অন্তত ৫ বছর কাটে ইসরায়েলি জেলে বন্দী অবস্থায়।
মোহাম্মদ দাহলান আসলেই ইসরায়েলি এজেন্ট কিনা, বা ইসরায়েল তাকে আসলেই আনুষ্ঠানিকভাবে রিক্রুট করতে পেরেছে কি না, সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু তার পরবর্তী জীবনের কার্যকলাপ সেদিকেই নির্দেশ করে। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি জর্ডানে যান, ইয়াসির আরাফাতের সাথে পরিচিত হন এবং ফাতাহ’র র্যাঙ্কে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি ফাতাহ’র একটা সিকিউরিটি সার্ভিসের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পান।
-
আরব আমিরাত: মধ্যপ্রাচ্যের নতুন ইসরায়েল
আরব আমিরাত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন ইসরায়েল। কোনো দিন যদি কোনো গায়েবী উপায়ে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, আরব আমিরাত অনায়াসেই সেই শূন্যস্থান পূরণ করে নিতে পারবে।
আনলাইক অ্যানি আদার আরব কান্ট্রি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের তথা ইউএইর (আরবিতে সংক্ষেপে ইমারাত বলে, আমি সেটা বলতেই অভ্যস্ত, এরপর থেকে আরব আমিরাতকে শুধু ইমারাত হিসেবে উল্লেখ করব) রাজনীতি আগ্রাসনমূলক। এ পর্যন্ত তারা বিশ্বের সাড়ে ছয়টা দেশে সরাসরি নিজেদের সেনাবাহিনী নিযুক্ত করেছে: ইরাক, কসোভো, সোমালিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং সো কলড ইসলামিক স্টেট (হেন্স হাফ এ কান্ট্রি)।
আরব বিশ্বের মধ্যে ইমারাতের সামরিক সক্ষমতা এবং সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা অন্য যে কারো চেয়ে অনেক অনেক বেশি। তারা এমন এক শক্তিশালী মিটিলারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সে গড়ে তুলতে চায়, যেন রেজিওনাল কোনো হুমকির মুখে পড়লে আমেরিকা বা ইসরায়েলের কাছ থেকে সাহায্য এসে পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত নিজেরাই নিজেদেরকে ডিফেন্ড করতে পারে।
-
ইসরায়েলের গোপন অপারেশনগুলো: প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ
১৯৪৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। জেরুজালেমের রুমানিয়ান চার্চের ব্রিটিশ ম্যাণ্ডেটের প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে এলেন ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেণ্টের (সিআইডি) বিশেষ ইহুদী বিভাগের কমাণ্ডার, টম উইলকিন। তার গন্তব্য ছিল সিআইডির নিকটবর্তী রাশিয়ান কম্পাউণ্ড, যেখানে ইহুদী গুপ্ত সংস্থাগুলোর সদস্যদেরকে আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো।
অন্য সব সময়ের মতো সেদিনও উইলকিন সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার আগেই তিনি উঁকি মেরে দেখে নিয়েছিলেন রাস্তার দু’পাশ, এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে স্পর্শ করে রেখেছিলেন তার রিভলভারটি। কিন্তু তার জানার কথা ছিল না, একটু সামনের সেইন্ট জর্জ স্ট্রিটের এক অন্ধকার সরু গলির ভেতর তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওঁৎ পেতে ছিল কুখ্যাত ইহুদী সন্ত্রাসী সংগঠন ‘লেহি‘র এক সদস্য, ডেভিড শমরন।
লেহির অপারেশন বিভাগের প্রধান ইতজাক শামিরের নির্দেশে ডেভিড শমরন এবং ইয়াকভ বানাই টম উইলকিনের উপর হামলার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছিলেন। জেরুজালেমের রুমানিয়ান চার্চের বাসভবনে উইলকিনের অবস্থান নিশ্চিত করার পর তারা তাদের অভিযান শুরু করেন।