
অপারেশন অলিম্পিয়া: যেদিন সম্পূর্ণ পিএলও নেতৃত্বকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল ইসরায়েল!
আজকের দিনটায় (১ জানুয়ারি) ঘটতে যাচ্ছিল অপারেশন অলিম্পিয়া – বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম বর্বোরিত একটা সন্ত্রাসী হামলা। আর সেটা ঘটাতে যাচ্ছিল ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের পিএলও নেতাদের উপর।
১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারি পিএলওর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লেবাননের বৈরুত স্টেডিয়ামে একটা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পিএলওর চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত, তার ঘনিষ্ঠ সহকারী আবু আইয়্যাদ, আবু জিহাদসহ পিএলওর প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
সে সময় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিল এরিয়েল শ্যারন। এই সম্মেলনের কথা জানার পরপরই সে একটা সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পায়। এই লক্ষ্যে সে অপারেশন অলিম্পিয়া এর পরিকল্পনা করে এবং তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয় আইডিএফের জেনারেল (পরবর্তীতে মোসাদের ডাইরেক্টর) মায়ার দাগানকে।
মায়ার দাগান এবং তার টিম বৈরুত স্টেডিয়ামে পিএলএর প্রস্তুতকৃত মঞ্চের নিচে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক স্থাপন করে। এরপর স্টেডিয়ামের দুই পাশে দুই টন ওজনের দুইটা ট্রাকবোমা রাখার ব্যবস্থা করে।
তাদের পরিকল্পনা ছিল প্রথমে মঞ্চের উপর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ইয়াসির আরাফাতসহ পিএলওর শীর্ষ নেতাদের সবাইকে মেরে ফেলবে। এর পরপরই সবাই যখন ছোটাছুটি শুরু করবে, তখন দুই পাশে রাখা ট্রাকবোমা দুইটার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাকিদেরকেও হত্যা করবে।
অপারেশন অলিম্পিয়া কার্যকর হলে সেদিনের সেই হামলায় পিএলওর শীর্ষ নেতাদের সাথে সাথে কয়েকশো, এমনকি হাজার পর্যন্ত সিভিলিয়ান নিহত হতে পারত। কিন্তু শেষ মুহূর্তে, অপারেশনের আগের দিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মেনাখেম বেগিন অপারেশন বাতিল করে। কারণ তার আশঙ্কা ছিল, অনুষ্ঠানে হয়তো সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত উপস্থিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চাপ সামলানো ইসরায়েলের জন্য কঠিন হবে।
এরিয়েল শ্যারন এবং মায়ার দাগান অপারেশন বাতিলের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল। বহু বছর পরেও মায়ার দাগান আফসোস করে বলেছিল, অপারেশন অলিম্পিয়া এর মতো সুযোগ ইসরায়েল আর পাবে না।
তথ্যসূত্র: ইসরায়েলি সাংবাদিক Ronen Bergman এর লেখা বই Rise and Kill First।
ছবিতে রামাল্লায় পিএলওর অফিসের সামনের দেয়ালে আরাফাত, আবু জিহাদ এবং আবু আইয়্যাদের গ্রাফিতি।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের গোপন অপারেশন সিরিজ।

