
বিলিয়ন ডলার স্পাই: স্পাই স্টোরিজ বইয়ের এক্সার্প্ট
সিআইএর মস্কো স্টেশনের ক্ল্যান্ডেস্টাইন অফিসার বিল প্লাঙ্কার্ট দুশ্চিন্তায় আছেন। তার আশঙ্কা, গত দুই দশকের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নে সিআইএর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্পাই “সি.কে. স্ফিয়ার” হয়তো কেজিবির হাতে ধরা পড়ে গেছে। ধরা না পড়লেও অন্তত কেজিবির সন্দেহের তালিকায় নিশ্চয়ই তার নাম উঠে গেছে।
আর যদি সেরকম কিছুই হয়ে থাকে, তাহলে তাকে খুঁজে বের করতে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে নিজেকে কেজিবির হাতে তুলে দেয়া। অথচ প্লাঙ্কার্টকে এখন ঠিক সেই কাজটিই করতে হবে।
সিআইএর সাথে স্ফিয়ারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ১৯৮২ সালের শীতকালে। আগে থেকে নির্ধারণ করা পাঁচটি শিডিউল একের পর এক মিস হয়ে যায়। কেজিবির কঠোর নজরদারির কারণে অক্টোবরের শেষের দিকে স্ফিয়ারের সাথে সাক্ষাৎ করার সিআইএর একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
নভেম্বরের ২৪ তারিখে সিআইএর এক ডীপ কভার অফিসার ছদ্মবেশে রাস্তার উপরের একটি পে ফোন থেকে স্ফিয়ারের অ্যাপার্টমেন্টে ফোন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু অন্য একজন সেই ফোন ধরলে ঐ অফিসার জবাব না দিয়ে ফোন কেটে দেয়।
স্ফিয়ারের সাথে সিআইএর পরবর্তী মিটিংয়ের শিডিউল ছিল ১৯৮২ সালের ৭ ডিসেম্বর। কেজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে এবার তার সাথে দেখা করার দায়িত্ব এসে পড়ে বিল প্লাঙ্কার্টের উপর।
তার উপরেই নির্ভর করছে এই অপারেশনের ভবিষ্যৎ। সিআইএ কি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বেতনভোগী এই স্পাইয়ের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে পারবে? নাকি মাঝপথেই তাদেরকে অপারেশন বন্ধ করে দিয়ে ফিরে যেতে হবে?
৭ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে প্লাঙ্কার্ট প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। দূতাবাসের কয়েকজন কূটনীতিককে তিনি নির্দেশ দেন ৭ তারিখ সন্ধ্যার সময় শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য।
তিনি জানতেন, কেজিবি দূতাবাসের টেলিফোন লাইনে আড়ি পাতার ব্যবস্থা করে রেখেছে। তারপরেও সেই টেলিফোন লাইন ব্যবহার করেই তিনি সবাইকে জন্মদিনের দাওয়াত দিতে বলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার, কেজিবি যেন ফোনে আড়ি পেতে তাদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে জানতে পারে।
৭ তারিখ সন্ধ্যায় দিনের আলো মিলিয়ে যাওয়ার পর নিজেদের স্ত্রীদেরকে সাথে নিয়ে দূতাবাসের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন সিআইএর মস্কো স্টেশন চীফ রবার্ট ফুলটন এবং ক্ল্যান্ডেস্টাইন অফিসার বিল প্লাঙ্কার্ট। চারপাশ থেকে ইউনিফর্ম পরা গার্ডের ছদ্মবেশে তাদের উপর নজর রাখছিল কেজিবির ইনফর্মাররা। তাদের সামনে দিয়েই এই চারজন হেঁটে গিয়ে ওঠেন পার্কিং লটে থাকা স্টেশন চীফের গাড়িতে।
সামনে ড্রাইভিং সীটে বসেন স্টেশন চীফ নিজে, তার পাশে প্যাসেঞ্জার সীটে বসেন বিল প্লাঙ্কার্ট, আর পেছনে বসেন তাদের স্ত্রীরা। তাদের সবার পরনে ছিল পার্টিতে যাওয়ার পোশাক। আর তাদের স্ত্রীদের একজনের হাতে ছিল বিশাল আকারের একটি বার্থডে কেক।
গাড়ি দূতাবাস চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে আসার সাথে সাথেই কাজে লেগে পড়েন প্লাঙ্কার্ট। রাতের অন্ধকারের সুযোগে তিনি তার কোট খুলে পায়ের কাছে রাখা একটি ব্যাগে ভরে ফেলেন, আর ব্যাগের ভেতর থেকে একটি ফেস মাস্ক এবং একটি ভারী ফ্রেমের চশমা বের করে পরে নেন। কোটের নিচে তার পরনে ছিল সাধারণ রাশিয়ানদের মতো একটি পোশাক। ফলে তাকে দেখতে অবিকল সাধারণ রাশিয়ান বৃদ্ধদের মতো দেখা যেতে থাকে।
পেছন থেকে প্লাঙ্কার্টের স্ত্রী কেকটি শক্ত হাতে ধরে বসে ছিলেন। কিন্তু বাইরে থেকে দেখতে কেকের মতো মনে হলেও বাস্তবে এর ভেতরে ছিল সিআইএর টেকনিক্যাল টীমের তৈরি বিশেষ একটি “জ্যাক ইন দ্য বক্স”, একপাশের বোতামে চাপ দিলেই যার ভেতর থেকে স্প্রিংয়ের ধাক্কায় লাফিয়ে উঠে আত্মপ্রকাশ করবে মানুষের অবয়বের একটি পুতুল।
এই অপারেশনের জন্য সিআইএ ওয়াশিংটন থেকে অর্ডার দিয়ে বিশেষ এই পুতুলটি বানিয়ে এনেছে, লাফিয়ে উঠে বসার পর পেছন থেকে যেটিকে দেখতে হুবহু প্লাঙ্কার্টের অবয়বের মতোই মনে হবে।
সিআইএ লক্ষ্য করেছিল, কেজিবি সব সময়ই তাদের কর্মকর্তাদেরকে গাড়িতে করে পেছন থেকে অনুসরণ করে, কিন্তু প্রায় কখনোই তারা গাড়ির পাশে আসে না, বা অতিক্রম করে সামনে চলে যায় না। তাদের অপারেশনের জন্য সেটুকুই যথেষ্ট ছিল।
প্লাঙ্কার্ট পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার পর একটি বাঁক ঘোরার সময় স্টেশন চীফ হঠাৎ করেই গাড়ির গতি কমিয়ে দেন। প্যাসেঞ্জার সাইডের দরজা খুলে চোখের নিমেষে লাফ দিয়ে নেমে পড়েন প্লাঙ্কার্ট। সাথে সাথেই পেছন থেকে তার স্ত্রী হাতে ধরে রাখা কেকটিকে সামনের সীটে বসিয়ে আস্তে করে পাশের বোতামটি চেপে দেন। মুহূর্তের মধ্যেই কেকটির উপরের ঢাকনা সরে যায়, ভেতর থেকে লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসে প্লাঙ্কার্টের কাঁধ এবং মাথার আকৃতিবিশিষ্ট একটি পুতুল। স্টেশন চীফ ততক্ষণে পুনরায় গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ওদিকে রাস্তায় নেমেই প্লাঙ্কার্ট ফুটপাথ ধরে হাঁটতে শুরু করেন। চার কদম পেরিয়ে পাঁচ কদম ফেলতে না ফেলতেই বাঁকের অন্যপাশ থেকে হাজির হয় কেজিবির অনুসরণকারী গাড়িটি।
ভেতর থেকে কেজিবির এজেন্টরা তাদের হেডলাইটের উজ্জ্বল আলোতে দেখতে পায়, ফুটপাথ ধরে এক বৃদ্ধ রাশিয়ান স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যাচ্ছে। কোথাও সন্দেহজনক কিছু নেই। বৃদ্ধকে অগ্রাহ্য করে তারা সিআইএর গাড়িটিকেই অনুসরণ করে যেতে থাকে।
প্লাঙ্কার্ট মুহূর্তের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। আপাতত তারা কেজিবিকে ধোঁকা দিতে পেরেছেন। কিন্তু তার মূল কাজ এখনও বাকি রয়ে গেছে। যেকোনো ভাবেই হোক, স্ফিয়ারকে খুঁজে বের করতেই হবে।
কারণ স্ফিয়ার শুধু মস্কো স্টেশনের জন্যই না, সমগ্র সিআইএ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তার উপরেই নির্ভর করছে সম্ভাব্য আকাশযুদ্ধে আমেরিকা সোভিয়েত ইউনিয়নকে টেক্কা দিতে পারবে কিনা!
… কী ঘটেছিল এরপর? জানতে পারবেন স্পাই স্টোরিজ বইয়ে।
আমার লেখা বই “স্পাই স্টোরিজ”-এর “বিলিয়ন ডলার স্পাই” শিরোনামের গল্পের একটি অংশ এটি। মোট ছয়টি ট্রু এসপিওনাজ স্টোরি নিয়ে লেখা হয়েছে বইটি। প্রতিটি কাহিনীই সত্য, এবং প্রতিটি কাহিনীই এরকম শ্বাসরুদ্ধকর।
স্পাই স্টোরিজ বইটি পাওয়া যাবে বইমেলায় ঐতিহ্য প্রকাশনীর (১৪ নম্বর) প্যাভিলিয়নে। এছাড়া অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন রকমারির এই লিঙ্ক থেকে: https://bit.ly/38Tq1sA
বইটি পড়ার পর রেটিং এবং রিভিউ দেওয়ার অনুরোধ রইল। রেটিং এবং রিভিউ দিতে পারেন রকমারির উপরোক্ত লিঙ্কে এবং গুডরিডসের এই লিঙ্কে: https://www.goodreads.com/review/show/3168400798


2 Comments
Tahseen Amin Hemel
Can I find the book (স্পাই স্টোরিজ: এসপিওনাজ জগতের অবিশ্বাস্য কিছু সত্য কাহিনী) anywhere in Toronto?
Mozammel Hossain Toha
রকমারি কিছু কিছু দেশে কুরিয়ার করে। কিন্তু খরচ সম্ভবত অনেক বেশি পড়বে। সহজ উপায় হচ্ছে পরিচিত কেউ দেশ থেকে গেলে তার মাধ্যমে আনানো। আরব আমিরাত থেকে একজন অলরেডি এই পদ্ধতিতে নিয়ে পড়ে ফেলেছে।