এই প্রশ্নটা আমাকে বেশ কয়েকজন করেছে: স্পাই স্টোরিজ পড়তে ভালো লেগেছে, কিন্তু শুধু সিআইএ-মোসাদ-এর গল্পই কেন? মুসলমান রাষ্ট্রগুলোর গোয়েন্দাদের এরকম কোনো গল্প পাওয়া যায় না?
উত্তর হচ্ছে, আসলেই পাওয়া যায় না। এর কয়েকটা কারণ আছে।
প্রথমত, আমি যে সময়টার গল্প বলতে চেয়েছি, অর্থাৎ আধুনিক সময়ের, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরের বিশ্বের, এ সময় দুর্ভাগ্যবশত মুসলমানরা কেবল পরাজিতই হয়েছে। আর রাজনৈতিক বা সামরিক জয়-পরাজয়ের সাথে ইন্টালিজেন্সের সরাসরি সম্পর্ক থাকে।
একাধিক আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ থেকে শুরু করে অন্যান্য যুদ্ধে, এমনকি গৃহযুদ্ধ বা অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রেও মুসলমানরা বা ইসলামপন্থীরা যে বারবার মার খেয়েছে, সেটা থেকেই বোঝা যায়, তাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম যথেষ্ট যুগোপযোগী ছিল না। বা থাকলেও সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা। মুসলমান রাষ্ট্রগুলোর গোয়েন্দা কার্যক্রমে কিছুটা হলেও সাফল্য নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু সে সাফল্যও তারা প্রকাশ করে না, সেটা শত্রুরা জেনে ফেলবে, সাবধান হয়ে যাবে – এরকম চিন্তা থেকেই হোক, বা অন্য কোনো কারণেই হোক।
তাছাড়া আমেরিকা-ইংল্যান্ড বা ইসরায়েলেও একজন লেখক বা গবেষক যে পরিমাণ স্বাধীনতার সাথে এ ধরনের গোপন তথ্য অনুসন্ধান করতে পারে, তথ্য গোপন থাকলে সেটা প্রকাশ করার জন্য কোর্টে আবেদন করতে পারে, অধিকাংশ মুসলিম-প্রধান রাষ্ট্রে সেটা কল্পনাও করা যায় না।
সে কারণেই দেখা যায় মুসলমানদের গোয়েন্দা কার্যক্রম নিয়ে তো বটেই, সোভিয়েত গোয়েন্দাদের সাফল্য নিয়েও আমেরিকানদের লেখা বইয়ের সংখ্যা তাদের নিজেদের লেখা বইয়ের সংখ্যার চেয়ে বেশি। অবশ্য এক্ষেত্রে ভাষাও একটা বড় প্রতিবন্ধকতা। হয়তো আরবি-তুর্কি-ফার্সিতে বা রাশিয়ান ভাষায় অনেক বই আছে, কিন্তু সেগুলোর খবর আমরা জানি না। আমরা পাই কেবল ইংরেজি বইগুলোই।
তৃতীয় আরেকটা কারণ হচ্ছে, আমি যে বইটা লিখতে চেয়েছি, যারা পড়েছেন তারা বুঝতে পারবেন, নিছক গোয়েন্দাদের ইতিহাস লেখা আমার লক্ষ্য ছিল না। আমি চেয়েছি কিছুটা থ্রিলারের মতো করে কয়েকটা ইন্টারেস্টিং কাহিনী লিখতে। মুসলমানদের গোয়েন্দা কার্যক্রম নিয়ে ইতিহাস-সমৃদ্ধ অনেক বই আছে, কিন্তু সেগুলো নীরস ইতিহাস, মাসুদ রানার মতো হিরোইক স্পাইদের যেরকম গল্প আমি খুঁজছিলাম, সেরকম পাওয়াটা খুবই কঠিন।
কিন্তু তাহলে এক্ষেত্রে করণীয় কী? আমরা কি শুধু সিআইএ-মোসাদের গুণগানই গেয়ে যাবো? না। এক্ষেত্রে আমি চমৎকার একটা কৌশল অবলম্বন করেছি, কেউ খেয়াল করেছেন কিনা, জানি না। বইটা লেখার জন্য আমি ডজন ডজন স্পাইয়ের কাহিনী পড়েছি। কিন্তু সেখান থেকে আমি এমন ছয়জন স্পাইকে বাছাই করেছি, যাদের কাহিনীতে এককভাবে সিআইএ-মোসাদের বীরত্বগাঁথা নাই। কিছুটা হলেও ভিন্ন ব্যাপার আছে।
আমার নতুন বই!!!
স্পাই স্টোরিজ ২: স্নায়ুযুদ্ধের সফলতম ডাবল এজেন্টের কাহিনি
অবিশ্বাস্য সত্য ঘটনা অবলম্বনে ননফিকশন স্পাই থ্রিলার। উচ্চপদস্থ এক ডাবল এজেন্টের কাছে ১৫ বছর ধরে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নাস্তানাবুদ হওয়ার কাহিনি।
পাবেন রকমারি ডট কমে (22% ছাড়ে), প্রকাশনীর ফেসবুক পেজ (25% ছাড়ে) এবং আপনার পছন্দের যেকোনো অনলাইন বুকশপে।
আনা মন্টেজের কাহিনীটাই ধরেন। পাঠকদের মধ্যে এই কাহিনীটা অনেকেরই ফেভারিট। অনেকেই রিভিউতে লিখেছে, তারা আনা মন্টেজের প্রেমে পড়ে গেছে। এবং এই আনা মন্টেজের অবস্থান পুরাই আমেরিকার ফরেন পলিসির বিরুদ্ধে। তার কাহিনীটার শিরোনামই “যে স্পাই কিউবাকে ভালোবেসেছিল”।
আশরাফ মারোয়ান এবং শুলা কোহেনের সাহসিকতা এবং ত্যাগের কথা বর্ণনা করেছি। কিন্তু দেখবেন এরা টিপিক্যাল মোসাদ স্পাই না। আশরাফ মারোয়ানের ব্যাপারে এখনও সন্দেহ আছে, সে হয়তো মিসরীয় ডাবল এজেন্টও হতে পারে। আর শুলা কোহেন যদিও নিঃস্বার্থ জায়নিস্ট, কিন্তু তার কাহিনীতে শেষ পর্যন্ত সে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে সফলতার গল্পটা একজন লেবানিজ স্পাইর – মিলাদ আল-কারাহের।
মর্টেন স্টর্মের কাহিনীটা পুরাই ব্যতিক্রম। এই বইয়ে অন্যান্য কাহিনীর ক্ষেত্রে পাঠকদের সহানুভূতি সৃষ্টি হয় স্পাইয়ের প্রতি। কিন্তু এক্ষেত্রে মর্টেন স্টর্ম চরিত্রটা এমন, তার প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি হওয়ার কিছু নাই। বরং এই কাহিনীতে স্টর্মের চেয়েও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে তার গুপ্তচরবৃত্তির শিকার আনোয়ার আল-আওলাকি। এবং যেসব পাঠকরা কখনও এসব ব্যাপারে অনুসন্ধান করেননি, মিডিয়ার ওয়ার অন টেররের বাইনারি বর্ণনাকে বিশ্বাস করে এসেছেন, তারা এই কাহিনী পড়ার পর নতুন করে চিন্তা করতে বাধ্য হবেন।
অ্যাডলফ তোলকাচভের কাহিনীতে অবশ্য আমেরিকা না, বরং সোভিয়েত ইউনিয়নের কঠোর জীবন, স্ট্যালিনের দুঃশাসন এবং তার প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারটা উঠে এসেছে। আর ব্রায়ান রিগ্যানের কাহিনীতে তেমন কোনো ম্যাসেজ নেই। ওটা জাস্ট ইন্টারেস্টিং কাহিনী হিসেবে রাখা হয়েছে।
“স্পাই স্টোরিজ ২”-এর জন্য কাহিনী বাছাইয়ের প্রস্তুতি চলছে। এবং এক্ষেত্রেও পাঠকরা নিশ্চিত থাকতে পারেন, প্রথমটার মতোই এটাতেও অন্তত কয়েকটা কাহিনী এমন রাখা হবে, যেগুলো টিপিক্যাল “সিআইএ-মোসাদ”-এর বীরত্বগাঁথা হবে না।
এসপিওনাজ সম্পর্কিত আমার সবগুলো লেখা পড়তে ক্লিক করুন এখানে। আর স্পাই স্টোরিজ বইটি রকমারি থেকে অর্ডার করতে ক্লিক করুন এখানে।