জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক সাদাত হোসাইনের আরশিনগর উপন্যাসটা পড়লাম। খুবই ভালো লেগেছে। পাঠ প্রতিক্রিয়া হিসেবে এক কথা বলা যায়, যতটা আশা করেছিলাম, সাদাত হোসাইন তার চেয়েও বেশি তুষ্ট করতে পেরেছেন।
সাদাত হোসাইনের ভাষা পুরোপুরি সাবলীল না। তার বর্ণনায় বাহুল্য আছে। আরশিনগর উপন্যাসে বাক্যের শেষে খণ্ডিত বাক্যাংশের পুনরাবৃত্তি করার স্টাইলটা খুবই বিরক্তিকর। যেমন: “সে খুব কাঁদল। খুব।” এক উপন্যাসে কয়েকশো বার “মানবজনম” শব্দটার ব্যবহারও বিরক্তিকর।
কিন্তু এসব ইগনর করতে পারলে তার কাহিনীর বুনন অসাধারণ। বিশাল কলেবরে প্রচুর চরিত্র নিয়ে সমান্তরালে অনেকগুলো কাহিনী তিনি দাঁড় করিয়েছেন। শুরুরদিকে আপাত সম্পর্কহীন চরিত্রগুলোকে পরবর্তীতে এক বিন্দুতে নিয়ে এসেছেন। হুমায়ূন আহমেদদের হাত ধরে আমরা ৬০-৭০ পৃষ্ঠার গল্পকেই যে উপন্যাস বলে ভাবতে শিখেছিলাম, সাদাত হোসাইন এবং এ জাতীয় আরও কিছু নতুন লেখক সেটা ভেঙ্গে দিচ্ছেন।
আরশিনগর উপন্যাসে হুমায়ূন আহমেদের প্রভাব আছে। কিন্তু সেটাকে খুব একটা খারাপ লাগেনি। বরং আমার কাছে বর্ণনাভঙ্গির চেয়েও চরিত্রগুলোর উপর হুমায়ূন আহমেদের প্রভাব বেশি মনে হয়েছে। কিছু কিছু চরিত্র হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রগুলোর মতোই মায়াময়, পরোপকারী। চরিত্রগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কও হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের চরিত্রগুলোর সম্পর্কের মতো মধুর। ঠিক কী কারণে বা কোন জায়গায় জানি না, সমরেশ মজুমদারের প্রভাবও কিছুটা ছিল বলে মনে হয়েছে।
আরশিনগর উপন্যাসে লেখকের মধ্যে জর্জ আর. আর. মার্টিনের মতো সবাইকে হুটহাট মেরে ফেলার একটা প্রবণতা দেখা গেছে। এটা ভালো-খারাপ দুটোই হতে পারে। অন্যান্য উপন্যাস পড়লে বোঝা যাবে। কিছু কিছু জায়গায় বর্ণনা অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত মনে হলেও শেষেরদিকে এসে মনে হয়েছে ২৮০ পৃষ্ঠার উপন্যাসটা বুঝি হুট করেই শেষ হয়ে গেল। কাহিনী আরো বিস্তৃত হলেও পড়তে ভালোই লাগত।
একজন সফল ঔপন্যাসিকের শুধু ভালো লিখতে পারার দক্ষতা থাকলেই হয় না। জীবনকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতাও থাকতে হয়। আমার মনে হয় সাদাত হোসাইন এ জায়গায় সফল। এই লেখক আরো অনেক দূর যেতে পারবে।