বিশ্ব রাজনীতি
-
আবু মোহাম্মদ আল-মাসরির প্রোফাইল: ২০২০ বেস্ট আর্টিকেলস
১৯৯৮ সালের শেষের দিকে আল-কায়েদার এক মিসরীয় জিহাদি নেতা আফ্রিকা থেকে আফগানিস্তানে উপস্থিত হয়। এর আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সে সোমালিয়া, কেনিয়া এবং তাঞ্জানিয়ায় দায়িত্ব পালন করেছিল।
তার দ্বারা প্রশিক্ষিত সোমালিয়ান গেরিলাই ব্ল্যাক হক ডাউন করে মার্কিন সেনাদের লাশ মোগাদিশুর রাস্তা দিয়ে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। এবং তার পরিকল্পনাতেই সংঘটিত হয়েছিল ইস্ট আফ্রিকা এম্বাসী বম্বিং, যেই সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছিল দুই শতাধিক, আহত হয়েছিল চার সহস্রাধিক, যাদের অধিকাংশই ছিল আফ্রিকান সিভিলিয়ান।
তার নাম ছিল আবু মোহাম্মদ আল-মাসরি।
-
কেমন হবে বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি? (প্রথম আলোয় প্রকাশিত)
মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ রাষ্ট্রেই গণতন্ত্র নেই। কিন্তু তারপরেও প্রতি চার বছর পরপর আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সাথে সাথে তাদের ভাগ্যও পরিবর্তিত হয়। ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাই প্রশ্ন উঠছে, তার এ বিজয়ের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ভাগ্য কতটুকু পরিবর্তিত হবে? তিনি কি ট্রাম্পের নীতির বিপরীতে গিয়ে ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটাবেন? ওবামার নীতিতে ফেরত গিয়ে ইরানের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবেন, একাধিক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আন্দোলনকে সমর্থন এবং সহায়তা দিয়ে নতুন নতুন গৃহযুদ্ধ সৃষ্টিতে অবদান রাখবেন? নাকি মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে তিনি অনুসরণ করবেন এই দুয়ের মাঝামাঝি কোনো নীতি?
-
বর্ন এ কিং: রূপালি পর্দায় বাদশাহ ফয়সাল
বর্ন এ কিং (Born a King) (2019) – পুরাই আনএক্সপেক্টেড একটা মুভি। সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বিন আব্দুল আব্দুল আজিজের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের চিত্রায়ন।
সিনেমার কাহিনী ১৯১৯ সালের। সে সময় ব্রিটিশ সরকার আব্দুল আজিজ বিন সৌদকে ব্রিটেন সফরের নিমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু আব্দুল আজিজ তখন শেরিফ হুসেইনের সাথে যুদ্ধের আশঙ্কায় দেশ ত্যাগ করার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না। তার পরিবর্তে তিনি ইংল্যান্ডে পাঠান তার ছেলে, ভবিষ্যত বাদশাহ ফয়সালকে। সে সময় বাদশাহ ফয়সাল ছিলেন মাত্র ১৪ বছর বয়সী!
-
মিউনিখ ম্যাসাকার: অপারেশন ইক্রিত ওয়া বিরাম
১৯৭২ সালের আজকের এই দিনে (৫ সেপ্টেম্বর) সংঘটিত হয়েছিল অপারেশন “ইক্রিত ওয়া বিরাম”। নামটি এসেছে ফিলিস্তিনের দুটি খ্রিস্টান-প্রধান গ্রাম “ইক্রিত” এবং “বিরাম” থেকে, যাদের অধিবাসীদেরকে জায়নিস্টরা ১৯৪৮ সালে উচ্ছেদ করেছিল।
অপারেশনের অধীনে “ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর” নামে একটি ফিলিস্তিনি গেরিলা সংগঠন জার্মানির মিউনিখের অলিম্পিক ভিলেজে ঢুকে পড়ে এবং ১১ জন ইসরায়েলি খেলোয়াড় ও কোচকে জিম্মি করে।
তাদের মুক্তিপণ হিসেবে তারা ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ২৩৪ জন ফিলিস্তিনির এবং জার্মানির কারাগারে বন্দী বামপন্থী গেরিলা সংগঠন “রেড আর্মি ফ্যাকশন” তথা “বাদর-মেইনহফ” এর বন্দীদের মুক্তির দাবি জানায়।
কিন্তু ইসরায়েল আলোচনায় বসতে রাজি না হওয়ায় এবং জার্মানির পুলিশের অদক্ষতায় জিম্মি নাটক শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষে রূপ নেয়। বন্দী ১১ জন ইসরায়েলির সবাই, এক জার্মান পুলিশ অফিসার এবং ৫ জন ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর সদস্য নিহত হয়।
তাদের বাকি তিন জন সদস্য গ্রেপ্তার হয়, কিন্তু পরবর্তীতে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের প্রতিশোধের ভয়ে জার্মানি তাদেরকে মুক্তি দেয়। লিবিয়া তাদেরকে বীরের বেশে বিপুল সংবর্ধনা দিয়ে এয়ারপোর্টে স্বাগত জানায়।
মিউনিখে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি প্রচলিতভাবে মিউনিখ ম্যাসাকার নামে পরিচিত।
-
প্রিন্সেস সারভাত: যে বাঙালি নারী হতে যাচ্ছিলেন জর্ডানের রানি!
তার নাম প্রিন্সেস সারভাত (সারওয়াত) একরামউল্লাহ। জন্ম কলকাতায়। তার বাবা ছিলেন পাকিস্তানের প্রথম পররাষ্ট্র সচিব, আর মা ছিলেন পাকিস্তানের প্রথম দুই নারী এমপির একজন।
কিন্তু তার আরও দুটি পরিচয়ও আছে। তিনি হচ্ছেন পাকিস্তানের এককালের প্রধানমন্ত্রী, এবং আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীর ভাগ্নি। তার মা ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর মামাতো বোন। একইসাথে তিনি বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের শ্যালিকা। এবং এই সারভাতেরই হওয়ার কথা ছিল জর্ডানের রানি!
-
হাশেমী রাজবংশ: উত্থান এবং বিস্তার
বর্তমান যে আরব বিশ্ব, তার প্রতিষ্ঠার মূলে আছে দুটি রাজবংশ – সৌদ রাজবংশ এবং হাশেমী রাজবংশ।
সৌদ রাজবংশ সম্পর্কে তো সবাই জানে, কিন্তু সৌদরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হাশেমী রাজবংশ ছিল সৌদদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান “সৌদি আরব” তো বটেই, সিরিয়া, থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত সমগ্র আরব ভূমিই তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল।
-
ফ্র্যাকচার্ড ল্যান্ডস: আরব বিশ্বের ভেঙে পড়ার গল্প
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নিয়ে, আরব স্বৈরাচারদের উত্থান-পতন নিয়ে, রাষ্ট্রগুলোর ভাঙ্গাগড়া নিয়ে গত কয়েক বছরে অনেক বই লেখা হয়েছে। এর মধ্যে জটিল তাত্ত্বিক বই যেমন আছে, মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে গবেষণা করা ইতিহাসবিদদের লেখা বই যেমন আছে, তেমনি আছে সংবাদ সংগ্রহ করতে মধ্যপ্রাচের দেশে দেশে, যুদ্ধের ময়দানে ময়দানে ঘুরে বেড়ানো সাংবাদিকদের লেখা, যারা সঙ্কটগুলো দেখেছেন খুবই কাছ থেকে, যারা কথা বলেছেন ভুক্তভোগীদের পরিবারের সাথে, প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের সুখ-দুঃখ।
-
ইরাকের কুয়েত দখল এবং তার ফলাফল
আগস্টের ২ তারিখে কুয়েত দখল করে নেওয়ার পর ১৯৯০ সালের এই দিনে (২৮ আগস্ট) ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ঘোষণা দেন, কুয়েত হচ্ছে ইরাকের ১৯তম প্রদেশ।
কুয়েত দখলের পূর্বে সাদ্দামের সাথে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সাদ্দাম এমনকি কুয়েত দখলের পরিকল্পনা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও জানিয়েছিলেন। রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেছিলেন, এটা ইরাকের নিজস্ব ব্যাপার। আমেরিকার এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য নেই।
তার এই বক্তব্যকেই গ্রিন সিগন্যাল হিসেবে ধরে নিয়ে সাদ্দাম কুয়েত দখল করে বসেন। আর সাথে সাথে আমেরিকা তার অবস্থান পাল্টে ফেলে। সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সাথে মিলে তারা শুরু করে উপসাগরীয় যুদ্ধ।
এই যুদ্ধে ইরাকি সেনাবাহিনী প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। ইচ্ছাকৃতভাবে বিমান হামলা করে ইরাকের সিভিলিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ধ্বংস করে দেওয়া হয়। যুদ্ধে সরাসরি নিহত হয় অন্তত ২৫ থেকে ৫০ হাজার ইরাকি। কিন্তু যুদ্ধের পরবর্তী দিনগুলোতে অবরোধের কারণে, পুষ্টিহীনতায়, চিকিৎসার অভাবে মারা যায় লক্ষ লক্ষ ইরাকি।
সাদ্দামের কুয়েত দখলের কারণেই সৌদি আরব মার্কিন সেনাদেরকে নিজেদের দেশে আমন্ত্রণ জানায়। আর আরবের পবিত্র ভূমিতে মার্কিন সেনাদের এই উপস্থিতির প্রতিক্রিয়াই পরবর্তী দিনগুলোতে ওসামা বিন লাদেন এবং আল-কায়েদার উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কুয়েত দখলের মাধ্যমে সাদ্দাম এবং সেই দখলে সম্মতি দিয়ে, পরে পাল্টা অবস্থান নিয়ে আমেরিকা যে অন্যায় করেছিল, সেই অন্যায়ের খেসারত আজও দিয়ে যাচ্ছে ইরাক এবং আরব বিশ্বের সাধারণ জনগণ।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে আমার সবগুলো লেখা পাবেন এই লিঙ্কে। আর রেগুলার আপডেট পেতে চাইলে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস ও রাজনীতি পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।
-
মোহাম্মদ বিন সালমান বনাম সুলতান বিন তুর্কি: এক রাজকীয় কিডন্যাপিংয়ের কাহিনী!
প্রিন্স সুলতান বিন তুর্কি এর আগেও একবার কিডন্যাপ হয়েছিলেন। ২০০৩ সালে। সে সময় তাকে কিডন্যাপ করেন তার চাচাতো ভাই, সৌদি রাজপুত্র আব্দুল আজিজ বিন ফাহাদ। মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৬ সালে তিনি আবারও প্রায়ই একই পদ্ধতিতে দ্বিতীয়বার কিডন্যাপ হন। এবার তাকে কিডন্যাপ করেন তার আরেক চাচাতো ভাই, আরেক রাজপুত্র, মোহাম্মদ বিন সালমান!
সম্পূর্ণ লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে রোর বাংলায়। পড়তে পারেন এখান থেকে। নিচে চুম্বক অংশ দেওয়া হলো:
-
গাদ্দাফির দৃষ্টিতে ইরাক আক্রমণের ফলাফল
২০০২ সালের অক্টোবরে, ইরাক যুদ্ধের ছয় মাস আগে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক স্কট অ্যান্ডারসন (Scott Anderson) লিবীয় নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফির একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণের জন্য সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে আল-কায়েদার সাথে সম্পৃক্ততা, গণবিধ্বংসী অস্ত্র উৎপাদনসহ একের পর এক নানা অজুহাত তৈরি করছিল।
স্কট অ্যান্ডারসন ঐ সাক্ষাৎকারে গাদ্দাফিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমেরিকা যদি আসলেই ইরাক আক্রমণ করে, তাহলে কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে?”
দীর্ঘ সেই সাক্ষাৎকারে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে গাদ্দাফি তার স্বভাবসুলভ নাটকীয় ভঙ্গিতে দীর্ঘ বিরতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু এই প্রশ্নটির উত্তর যেন তার তৈরিই ছিল। বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “বিন লাদেন।”
গাদ্দাফি বলেছিলেন,
কোনো সন্দেহ নেই ইরাক আক্রমণ করলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে আল-কায়েদা। ইরাক হয়ে উঠবে আল-কায়েদার আক্রমণের স্টেজিং গ্রাউন্ড। কারণ সাদ্দামের সরকার যদি ধ্বসে পড়ে, ইরাকে অরাজকতা নেমে আসবে। যদি সেটা ঘটে, তাহলে আমেরিকার উপর আক্রমণ জিহাদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
সে সময় কেউ গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু এখন অনেক বিশ্লেষকই এ ব্যাপারে একমত যে, আফগানিস্তান যুদ্ধের পর যে আল-কায়েদা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, বা অন্তত আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল, ইরাক যুদ্ধই তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে গত এক দশকের যে সঙ্কট, দেশে দেশে গৃহযুদ্ধ, আল-কায়েদা ও আইসিসের উত্থান, তার সব কিছুর মূলে আছে ২০০৩ সালে আমেরিকার ইরাক আক্রমণ।
স্কট অ্যান্ডারসনের লেখা বই “ফ্র্যাকচার্ড ল্যান্ডস” থেকে। বইটির রিভিউ পড়তে পারেন এখান থেকে।