বিশ্ব রাজনীতি
-
ডোভিড ওয়েইজ: ইসরায়েলের ধ্বংস চান যে ইহুদী ধর্মগুরু!
এই ভদ্রলোকের নাম ইসরোয়েল ডোভিড ওয়েইজ (Yisroel Dovid Weiss)। তিনি একজন ইহুদী ধর্মগুরু। ওয়েইজ হচ্ছেন বিশ্বের হাজার হাজার ইহুদীদের মধ্যে একজন, যাদের অবস্থান ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, জায়নিজমের বিরুদ্ধে।
ওয়েইজের মা পোলিশ। এবং তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই নাৎসিদের হাতে গণহত্যার শিকার হয়েছিল। তারপরেও ওয়েইজ মনে করেন, ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা একটা ভয়াবহ ধরনের অন্যায়।
এবং এর জন্য তিনি শুধু ওয়ান স্টেট বা টু স্টেট সল্যুশন চান না। তিনি চান ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রের বিলুপ্তি। তিনি চান রাষ্ট্রটা থাকবে ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণে, ইহুদীরা তাদের পাশাপাশি, তাদের অধীনে শান্তিতে বসবাস করবে।
তার বক্তব্যে পক্ষে তিনি তাওরাত থেকেই যুক্তি দেন। তার দাবি, ইসরায়েলেও যারা অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ, ধর্মগুরু, তারা নিজেদের বাড়িতে ইসরায়েলের পতাকা ওড়ায় না, নিজেদের ছেলেমেয়েদেরকে সেনাবাহিনীতে দেয় না। কারণ তারা জানে ইহুদী ধর্মের দিক থেকেও এটা বড় ধরনের অন্যায়।
অথচ আমাদের মুসলমানদের রাষ্ট্রগুলোর নেতারাও সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের পক্ষে সাফাই গাইছে!
আল-জাজিরার সাথে তার একটি সাক্ষাৎকার আছে। দেখতে পারেন এখান থেকে।
ফিলস্তিন-ইসরায়েল বিষয়ক আমার সবগুলো লেখা পড়ুন এখান থেকে।
-
যেদিন ইসরায়েল নিজেদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছিল!
২০০৫ সালের আজকের এই দিনটি (২২ আগস্ট) ছিল ফিলিস্তিনের গাজাবাসীদের জন্য আনন্দের একটি দিন। দীর্ঘ ৩৮ বছরের দখলদারিত্বের পর এদিন গাজা থেকে সর্বশেষ ইসরায়েলি সেটেলমেন্ট উচ্ছেদ করা হয়।
এই “ডিসএনগেজমেন্ট”-এর ঘটনা ঘটে ২০০০ সাল থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পরিপ্রেক্ষিতে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ইসরায়েল গাজা থেকে নিজেদের অবৈধ বসতিগুলো এবং সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। যেসব ইহুদী সেটলার যেতে চায়নি, তাদেরকে সৈন্যরা জোর করে উচ্ছেদ করে।
গাজার মোট ২১টি সেটেলমেন্টের প্রায় ৮,০০০ সেটলারকে সে সময় উচ্ছেদ করা হয়। যাওয়ার সময় সৈন্যরা বুলডোজার দিয়ে সেটলারদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে যায় যেন ফিলিস্তিনিরা সেগুলো ব্যবহার করতে না পারে।
যদিও শেষ পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি, গাজা পরিণত হয়েছে উন্মুক্ত কারাগারে, তারপরেও ইসরায়েলিদেরকে উচ্ছেদ করতে পারাটা ছিল বড় একটা অর্জন।
-
আসাদ-মাখলুফ দ্বন্দ্বের পটভূমি
লিবিয়ার পরিস্থিতি খারাপ বলে ওদিকে সিরিয়াতে যে বেশ ইন্টারেস্টিং কিছু ঘটনা ঘটেছে, সেদিকে নজরই দেওয়া হয়নি। সিরিয়াতে বাশার আল-আসাদের সাথে রামি মাখলুফের সম্পর্কের এতটাই অবনতি ঘটেছে যে, সরকার রামি মাখলুফের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং তার ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
গত কয়েক দশক ধরে সিরিয়া শাসন করছিল দুইটা পরিবার – আসাদ পরিবার এবং মাখলুফ পরিবার। হাফেজ আল-আসাদের স্ত্রীর নাম ছিল আনিসা মাখলুফ। মাখলুফরা হচ্ছে তারই আত্মীয়-স্বজনরা। সিরিয়ার প্রায় সব ব্যবসা-বাণিজ্য এই দুই পরিবারের হাতে। এবং বলতে গেলে বেশিরভাগই মাখলুফদের হাতে। কারণ হাফেজ উঠে এসেছিল দরিদ্র কৃষক পরিবার থেকে, কিন্তু আনিসা ছিল উত্তরাধিকার সূত্রে ধনী।
-
রিফাত আল-আসাদ এবং তার গণহত্যাগুলো
এই লোকের নাম রিফাত। রিফাত আল-আসাদ।
সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের চাচা। সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের ভাই। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধের প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে, সত্তরের দশকের শেষের দিকে যখন সিরিয়াতে প্রথম গৃহযুদ্ধ চলছিল, তখন রিফাত আল-আসাদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সংঘটিত হয়েছিল একাধিক গণহত্যা।
-
ম্যারি কোলভিনের প্রাইভেট ওয়ার
নিচের ছবি গাদ্দাফির সাথে ম্যারি কোলভিনের যে দৃশ্যটা দেখা যাচ্ছে, সেটা বাস্তবের না, A Private War সিনেমার। এবং এখানে যে গাদ্দাফিকে দেখা যাচ্ছে, তিনিও আসল গাদ্দাফি নন; সিনেমার অভিনেতা। তবে বাস্তবেও সানডে টাইমসের সাংবাদিক ম্যারি কোলভিন গাদ্দাফির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। একবার না, একাধিক বার।
১৯৮৬ সালে রিগ্যান প্রশাসন যখন লিবীয় নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাসভবনের উপর বিমান হামলা (অপারেশন এল-ডোরাডো ক্যানিয়ন) পরিচালনা করে, তখন ম্যারি কোলভিনই ছিলেন প্রথম সাংবাদিক, যিনি গাদ্দাফির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।
-
গাদ্দাফির লিবিয়ায় ফিলিস্তিন (ফটোব্লগ)
আমাদের পুরো শৈশব-কৈশোরে আমরা টিভিতে “ইসরায়েল” নামটা শুনিনি। শুনেছি শুধু “ফিলিস্তিন” বা “দখলকৃত ফিলিস্তিক”।
ছোটকালে আমরা শুধু লিবিয়ান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আল-জামাহিরিয়াই দেখতে পারতাম। বিটিভি দেখার সৌভাগ্য হয় নাই, বাট ধারণা করছি জামাহিরিয়া ছিল বিটিভিরই লিবিয়ান ভার্সন। সারাদিন শুধু গাদ্দাফিকেই দেখানো হতো।
সংবাদেও কোনো বৈচিত্র্য ছিল না। গাদ্দাফি কোথায় গিয়েছে, কী করেছে, কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছে – শুধু সেগুলোরই ম্যারাথন বিবরণ।
-
ঘাসান কানাফানি: এক বলিষ্ঠ কণ্ঠের বিপ্লবী
৭২ বছর আগের এই দিনে (১৫ই মে) ইসরায়েল তার অস্তিত্বের ঘোষণা দেয়, আর সেদিন জায়নিস্টরা দল বেঁধে আক্রমণ করে ফিলিস্তিনের আরব সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রামগুলোতে। ৭ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়। তাদেরই একজন ছিলেন ১২ বছর বয়সী বালক গাসসান কানাফানি।
পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি হারিয়ে তার পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল প্রথমে লেবাননে, পরে সিরিয়ায়। দামেস্ক ইউনিভার্সিটি পড়াশোনা করেছেন সাহিত্য নিয়ে। নিজেও বেড়ে উঠেছেন সাহিত্যিক হিসেবেই। কিন্তু ভুলে যাননি তার আত্মপরিচয়ের কথা।
-
জাতিসংঘের প্রতিনিধির পদত্যাগ: লিবিয়ার শান্তি কি তবে আরো পেছাল? (প্রথম আলোতে প্রকাশিত)
আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করার পর গত ২ মার্চ, সোমবার বিকেলে হঠাৎ করেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন লিবিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ঘাসান সালামে। তার পদত্যাগের ঘোষণাটি এমন এক সংকটময় মুহূর্তে এলো, যখন ১১ মাস ধরে চলা ত্রিপোলির গৃহযুদ্ধে এক অনিশ্চিত এবং ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি বিরাজ করছিল।
সোমবার বিকেলে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে আরবিতে টুইট করে সালামে জানান, স্বাস্থ্যগত কারণে তার পক্ষে আর এই চাপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, ফলে তিনি জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ৬১ বছর বয়সী সালামের পদত্যাগের পেছনে তার শারীরিক সুস্থতা অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লিবিয়ার রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষ করলে সন্দেহ হয়, সালামে হয়তো লিবিয়ার পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সম্ভাবনা দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়েই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
-
তালেবান-আমেরিকা শান্তিচুক্তি: আফগানিস্তানে কি শান্তি আসছে?
তালেবান-আমেরিকার শান্তিচুক্তি নিঃসন্দেহে তালেবানদের জন্য এবং আফগানিস্তানের জন্য বিশাল একটা অর্জন। কিন্তু শান্তির পথ এখনও বহুদূর। শান্তিচুক্তিটা গুরুত্বপূর্ণ হলেও আরও বৃহত্তর প্রক্ষাপটে এটা খুবই ছোটো একটা স্টেপ।
এই শান্তিচুক্তিকে অনেকেই আমেরিকার জন্য বড় ধরনের পরাজয় হিসেবে দেখছে। এটা একদিক থেকে সত্য। যে তালেবানকে আমেরিকা ক্ষমতাচ্যুত করেছিল, যাদেরকে সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে নির্মূল করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিল, শেষপর্যন্ত তাদের সাথে, তাদের শর্ত অনুযায়ীই শান্তিচুক্তি করতে হয়েছে – এটা এক ধরনের পরাজয় বৈকি। কিন্তু তালেবান জিতে গেছে, আমেরিকা শেষ হয়ে গেছে বলে যে আবেগী উচ্ছ্বাস সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে, তাতেও একটু সমস্যা আছে।
-
যুদ্ধ শেষে বাশার আল-আসাদের প্রধান মিত্র হবে আরব আমিরাত!
যুদ্ধ যখন শেষ হবে, বাশার আল-আসাদ যখন টিকে যাবে, তখন তার প্রধান মিত্র হবে আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব (এবং সেই সাথে ব্র্যাকেটে ইসরায়েল)।
যতই অদ্ভুত শোনাক, এটাই সত্য। এবং এই কথা আজই প্রথম বলছি না, আরো বছর দেড়েক আগে পুরাতন আইডি থেকেও বলেছিলাম। তখন সেটা ছিল জাস্ট একটা অনুমান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা এই অনুমানকে আরো বাস্তবসম্মত করে তুলেছে।