আশির দশকে আমেরিকা গাদ্দাফিকে হত্যার আয়োজন করছিল।
শুধু আমেরিকা বললে ভুল হবে। সেসময় বিভিন্ন দেশের সাথে গাদ্দাফির সম্পর্ক খারাপ ছিল। সিআইএর তথ্য অনুযায়ী আমেরিকা ছাড়াও ফ্রান্স, চাদ, মিসর, সুদান, মরক্কো, সৌদি আরব, এমনকি ইরাক পর্যন্ত গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আগ্রহী বিদ্রোহীদেরকে সাহায্য করে আসছিল।
গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকম কারণ ছিল। ফ্রান্স এবং আমেরিকার প্রধান কারণ ছিল চাদের উপর গাদ্দাফির হস্তক্ষেপ। চাদ ছিল ফ্রান্সের কলোনি। স্বাধীনতার পরেও সেখানে ফ্রান্সের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। কিন্তু গাদ্দাফি যখন ১৯৭৮ সালে চাদের একটি অংশকে লিবিয়ার ভূখণ্ড দাবি করে সেখানে সেনাবাহিনী পাঠান, তখনই প্রধানত ফ্রান্স এবং সেই সাথে আমেরিকা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সম্ভাবনা বিচরণ করতে শুরু করে।
সে সময় আমেরিকার সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্সের ডাইরেক্টর উইলিয়াম কেসির (William Casey) উদ্যোগে গাদ্দাফিকে কাউন্টার দেওয়ার জন্য চাদিয়ান বাহিনীকে অর্থ এবং অস্ত্র সাপ্লাইয়ের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। এই প্রস্তাবনা যখন হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির কাছে রিভিউর জন্য পাঠানো হয়, তখন কিছু কংগ্রেসম্যান তাতে আপত্তি জানান এবং এর বিরোধিতা করে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে একটি টপ সিক্রেট লেটার পাঠান।
এই জাতীয় আরেকটি লেখা: সিআইএ যেদিন হার মেনেছিল গাদ্দাফীর গোয়েন্দা প্রধানের কাছে
যেভাবেই হোক এই টপ সিক্রেট চিঠিটির কথা ফাঁস হয়ে যায়। রিপোর্ট আসে, “আফ্রিকার অজানা একটি দেশে” সামরিক অভিযানের ব্যাপারে হাউজ আপত্তি জানিয়েছে। একজন কংগ্রেসম্যানের বরাত দিয়ে নিউজউইক প্রকাশ করে দেয়, দেশটি হচ্ছে লিবিয়া। তারা শিরোনাম করে, “A Plan to Overthrow Gaddafi”।
গাদ্দাফি আরো ক্ষিপ্ত এবং সাবধান হয়ে যেতে পারেন – এই আশঙ্কায় হোয়াইট হাউজ সিদ্ধান্ত নেয়, তারা ব্যাপারটা অস্বীকার করবে এবং “আফ্রিকার অজানা দেশ”টির নাম হিসেবে অন্য একটি দেশের নাম প্রকাশ করে দিবে।
এর কিছুদিন আগেই প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের কাছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাসের মার্ক্সিস্ট মিলিট্যান্ট মুভমেন্টকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে প্রো-ওয়েস্টার্ন প্রাইম মিনিস্টারকে অর্থ সাহায্যের ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। সুতরাং হোয়াইট হাউজ সিদ্ধান্ত নেয়, তারা “আফ্রিকার অজানা রাষ্ট্র” সংক্রান্ত চিঠিটিকে লিবিয়ার পরিবর্তে মরিশাস সংক্রান্ত চিঠি বলে লিক করে দিবে।
সমস্যা হয়, যার উপর দায়িত্বটা আসে, তিনি মরিশাস নামটার সাথে পরিচিত ছিলেন না। ফলে সাংবাদিকদের কাছে লিক করার সময় তিনি মরিশাসের পরিবর্তে আরেকটি আফ্রিকান কান্ট্রি মৌরিতানিয়ার নাম বলে দেন 🙂 পরদিন পত্রিকাগুলোতে বড় করে হেডলাইন আসে, সিআইএ মৌরিতানিয়ার সরকারকে উৎখাত করতে চাইছে!
প্যাঁচটা বাঁধে, সে সময় মৌরিতানিয়ার সরকার ছিল প্রো-আমেরিকান। তারচেয়েও বড় প্যাঁচ, এর কয়েকমাস আগে গাদ্দাফিই মৌরিতানিয়ান প্রো-আমেরিকান সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থানে সহযোগিতা করেছিলেন 🙂 বিষয়টা নিয়ে সেসময় মৌরিতানিয়ার সাথে আমেরিকার সম্পর্কে বেশ টানাপোড়ন গিয়েছিল। পরে আমেরিকা আবার মৌরিতানিয়ার নাম অস্বীকার করে মরিশাসের নাম প্রকাশ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল।
সোর্স: সাংবাদিক বব উডওয়ার্ডের (Bob Woodward) লেখা বই Veil: The Secret Wars of the CIA 1981-1987
এরকম রাজনীতিবিষয়ক বইয়ের আলোচনাসহ আমার লেখা সবগুলো রিভিউ একসাথে পাবেন এই পাতায়। এই পাতায় একইসাথে পাবেন বিভিন্ন বই অবলম্বনে লেখা আমার অনুবাদ এবং সিরিজগুলোও।