
ড্যানিশ লরেন্স অফ অ্যারাবিয়ার ইসলাম গ্রহণ এবং লিবিয়া ভ্রমণের গল্প
ড্যানিশ পর্যটক এবং সাংবাদিক ক্নুদ হাম্বোকে বলা হয় ড্যানিশ লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া। কারণ আসল লরেন্সের মতোই তিনিও ভালো আরবি জানতেন। তাদের দুজনেরই আরবি সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ ছিল, দুজনেই মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল এলাকাজুড়ে ভ্রমণ করেছিলেন এবং ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের প্রতি শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মধ্যপ্রাচ্যের উপর লেখালেখি করেছিলেন এবং সর্বোপরি দুজনেই ছিলেন আরবদের উপনিবেশবাদ-বিরোধী সংগ্রামের একনিষ্ঠ সমর্থক।
তবে যে জায়গায় ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং গুপ্তচর টি.ই. লরেন্সের চেয়ে ক্নুদ হাম্বো এগিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা হচ্ছে তিনি আরব এবং মুসলমানদের প্রতি তার পূর্ববর্তী তাচ্ছিল্যকে অতিক্রম করে পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এবং ১৯৩০ সালে লিবিয়া ভ্রমণ ওমর আল-মুখতারের সঙ্গী মুজাহেদিনদের সংগ্রামে প্রভাবিত হয়ে তিনি তাদেরকে সাহায্য করতে ব্রতী হয়েছিলেন।

লিবিয়া ভ্রমণের সময় হাম্বোর কানে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধরত ওমর আল-মুখতার নামের এক কৌশলী গেরিলা যোদ্ধা সম্পর্কে রোমাঞ্চকর সংবাদ আসছিল। সেই গেরিলা নেতা ছিলেন এক সাবেক সুফি শিক্ষক, যিনি তার দলবল নিয়ে পর্বতের গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসে ইতালিয়ানদের উপর আক্রমণ করেই আবার আত্মগোপনে চলে যেতেন।
“যখনই আমাদের ধারণা হয় তিনি অমুক জায়গায় আছেন, আমরা তাকে ঘিরে ফেলতে পেরেছি, তখনই দেখা যায় – ফুহ্! তিনি গায়েব হয়ে গেছেন,” টাইলর নামের এক ইতালিয়ান সৈন্য বলেছিল হাম্বোকে।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের গ্রিন মাউন্টেইনের মধ্য দিয়ে ভ্রমণের সময় ক্নুদ হাম্বো ওমর আল-মুখতারের যোদ্ধাদের হাতে বন্দী হন। যোদ্ধারা প্রথমে তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু কুরআন তিলাওয়াত করতে পারতেন বলে সে যাত্রা তিনি বেঁচে যান। পরিচয় হওয়ার পর মরুর বুকে অগ্নিকুণ্ড জ্বালিয়ে তার সামনে বসে যোদ্ধারা তাকে ইতালিয়ানদের নির্যাতনের গল্প শোনায়।
তারা তাকে এক অল্পবয়সী মেয়ের করুণ কাহিনী বলে, যাকে ইতালিয়ানরা অপহরণ করে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়েছিল। অজানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর মুক্তি পেয়ে ফিরে এসে সে তার বাবার কাছে মিনতি করেছিল তাকে মেরে ফেলার জন্য। বৃদ্ধ শেখ তার কপালে চুম্বন করে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, “যে ইতালিয়ান আমার চোখের সামনে পড়বে, তাকেই আমি হত্যা করব।”
দেশে ফেরার পর ক্নুদ হাম্বো তার ভ্রমণের বর্ণনা দিয়ে একটা বই লেখেন। ডেজার্ট এনকাউন্টার নামের ঐ বই আমেরিকা এবং ইউরোপে বেস্ট সেলার হয়, কিন্তু অবধারিতভাবে ইতালিতে তা নিষিদ্ধ করা হয়, যেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় সাত দশক পরে, ২০০৪ সালে।
হাম্বোর বর্ণনায় উঠে এসেছে লিবিয়ার উপর ইতালিয়ানদের বর্বরোচিত শোষণব্যবস্থার চিত্র – কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে আটক, মৃত্যুদণ্ড প্রদান, বিষাক্ত গ্যাস বোমা নিক্ষেপ এবং বেসামরিক জনগণকে বাধ্যতামূলক স্থানান্তর ও খাদ্যবঞ্চিত করা। ধারণা করা হয়, ইতালিয়ান এসব পদক্ষেপের ফলে সে সময় লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ৩৫ থেকে ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।
লিবিয়ার উপর আমার সবগুলো লেখা পড়ুন এই পাতা থেকে। আর আমার লেখা সব বই রিভিউ পড়ুন এখান থেকে।
বইয়ের শেষে হাম্বো মন্তব্য করেছেন, “যেকোনো ইউরোপীয় ব্যক্তি যদি ইতালিয়ানদের দুঃশাসনের সামান্য একটু নমুনা দেখতে পায়, তাহলে তার লজ্জা হওয়া উচিত এই কারণে যে, সে নিজেও শ্বেতাঙ্গদের একজন।”
নিউইয়র্ক রিভিউ অফ বুকসে ড্যানিশ লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া তথা ক্নুদ হাম্বোর ডেজার্ট এনকাউন্টারের একটা ডিটেইলড রিভিউ দিয়েছেন লিবিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফ্রেডেরিক ওয়েহরি। সেখানে তিনি হাম্বোর দেখা লিবিয়ার সাথে বর্তমান লিবিয়ার একটা তুলনাও করেছেন – কীভাবে প্রায় একশ বছর পর লিবিয়া আবারও সে সময়ের মতোই বিদেশী শক্তিগুলোর খেলার ময়দানে পরিণত হয়েছে।
পুরো রিভিউটি বেশ বড়। আমি সংক্ষেপে অনুবাদ করেছি রোর বাংলার জন্য, সেটাও প্রায় ২,২০০ শব্দের। পড়তে পারেন এখান থেকে।

