আরব নারীবাদ নিয়ে একদিন কিছুটা ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে দুইটা ইন্টারেস্টিং নাম জানতে পেরেছিলাম। মিসরীয় নারীবাদী আন্দোলনের নেত্রী হুদা শারাওই এবং দোরিয়া শফিক।
দুজনেই লিজেন্ডারি নারীবাদী। দুজনেই নারী শিক্ষার পক্ষে, কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ এবং সমান অধিকারের পক্ষে ব্যাপক কাজ করেছেন। কিন্তু তারপরেও মিসরের টেক্সটবুক ইতিহাসে, পত্রপত্রিকায়, রাস্তাঘাটের বিলবোর্ডে শুধু হুদা শারাওইর নামই পাওয়া যায়। দোরিয়া শফিকের নাম সেখানে পুরাই অনুপস্থিত।
কেন? কারণ ধনী, সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকে উঠে আসা হুদা শারাওই ছিলেন এলিট, সরকারপন্থী নারীবাদী। তিনি নারীদের জন্য আন্দোলন করেছেন সত্য, কিন্তু সেটা সরকারের পক্ষে থেকেই।
তিনি জীবনে কোনোদিন নারীদের ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন করেননি। অন্যান্য দাবির জন্যও তিনি কখনো সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেননি। ফলে মিসরের এলিট শাসকশ্রেণী তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তার নাম প্রতিষ্ঠিত করার ব্যবস্থা করেছে।
অন্যদিকে গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা দোরিয়া শফিক ছিলেন পুরাই বিপ্লবী চরিত্রের। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় তিনি নারী মিলিশিয়াদের নেতৃত্ব দিয়ে ব্রিটিশদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যাংক বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
দলবল নিয়ে পার্লামেন্টে ঢুকে পড়ে বহুবিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করতে বাধ্য করেছিলেন। নাসেরের শাসনামলে অনশন ধর্মঘট করে তিনি নারীদের ভোটাধিকার আদায় করে ছেড়েছিলেন।
বলাই বাহুল্য, তার এই বিপ্লবী চরিত্র নাসেরের পছন্দ ছিল না। এবং তিনি যখন নাসেরের একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করেন, তখন নাসের তাকে গৃহবন্দী করেন, তার ইউনিয়ন বন্ধ করে দেন এবং পত্রপত্রিকায় তার নাম প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
দোরিয়া শফিকের জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে একাকী, নিঃসঙ্গ অবস্থায়। এবং এক পর্যায়ে তিনি নিজের বাড়ির বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।
এটা হচ্ছে আসল নারীবাদী আর ফেক নারীবাদীর মধ্যে পার্থক্য। যখনই দেখবেন কোনো নারীবাদী নারীদের দারিদ্র্য, শিক্ষার সুযোগের অভাব, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, যৌন হয়রানি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দিয়ে শুধু তাদের শর্ট ড্রেস পরার অধিকার নিয়ে পড়ে আছে, স্যানিটারি প্যাড, অন্তর্বাস আর মেনস্ট্রুয়েশনের ট্যাঁবু ভাঙ্গা নিয়ে পড়ে আছে, তখনই বুঝবেন সে আসলে ফেক নারীবাদী।
সে রিয়েল অ্যাকটিভিস্ট না, ফেক অ্যাকটিভিস্ট। ফেকটিভিস্ট।
শুধু নারীবাদ না। যেকোনো ধরনের আন্দোলনের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। যে সমস্যাগুলো বেশি জরুরী, সেগুলো নিয়ে কথা বললে ক্ষমতাসীনরা অসন্তুষ্ট হয়। আর সমস্যাগুলো প্রধানত গরীব, সুবিধাবঞ্চিত, অশিক্ষিত, মূর্খ জনগণের বলে সেগুলো নিয়ে কথা বললে সোশ্যাল মিডিয়াতেও বাহবা পাওয়া যায় না।
সেই তুলনায় অপ্রয়োজনীয় বা স্বল্প গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ক্যাচি সমস্যা নিয়ে কথা বললে একদিকে সেফ থাকা যায়, অন্যদিকে উচ্চ মধ্যবিত্ত, উঠতি সুশীল শ্রেণির কাছ থেকেও বেশ বাহবা পাওয়া যায়। সেই সাথে বিদেশী প্রভুদেরও নজরে পড়া যায়।
আমেরিকা-ইউরোপের অ্যাকটিভিজম থেকে, তাদের ফ্রি স্পীচ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। কিন্তু যেই দেশে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য মানুষ গুম হয়ে যায়, সেই দেশের সুশীলরা যখন আমেরিকা-ইংল্যান্ডে গিয়ে তাদের মত প্রকাশের অধিকার দেখে মুগ্ধ হয়ে দুইটা লাইন না লিখে বিতর্কিত কোনো জিনিসকে প্রমোট করে, তখন সেটা তাদের ফেক সুশীলতাটাই তুলে ধরে।
ফিচার ইমেজের ছবিটা দোরিয়া শফিকের। তার উপাধি ছিল বিন্ত আন্নীল, তথা নীলনদের কন্যা।
পোস্টের প্রসঙ্গ: শামির মোন্তাজিদ নামের এক লেখকের এলজিবিটি অ্যাক্টিভিজমের প্রশংসা সংক্রান্ত পোস্ট নিয়ে বিতর্ক।
অসাধারণ ,আসল অগ্নিকন্যা । আত্মহত্যা তার নিজেকে ধ্বংস করেদিয়েছে