বইমেলা চলাকালীন সময়ে ফেসবুকে বেশ কিছু ফানি স্ট্যাটাস দিয়েছি। কিছু আমার স্পাই স্টোরিজ বইয়ের প্রমোশনের অংশ হিসেবে, কিছু এমনিই। এখানে সেগুলো একত্রে তুলে রাখলাম।
– ১ –
ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ।
বইমেলা এলেই নিজের বইয়ের প্রচারণা দিয়ে নিউজফিড ভর্তি করে ফেলায় এতো বছর যাদেরকে মনে মনে গালমন্দ করেছিলাম, এ বছর তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি 🙂 আপনারাও দিন।
এখন হয়তো বুঝছেন না, একদিন নিজে বই বের করলে এর প্রয়োজনীয়তা বুঝবেন। কবি বলেছেন, দাঁত না থাকলে দাঁতের মর্যাদা বোঝা যায় না।
– ২ –
“রিপন ভিডিও” নামটা যেদিন প্রথম শুনেছিলাম, সেদিন বেশ হাসি পেয়েছিল – এ কেমন নাম রাখলেন রিপন? (ভিডিও সহ)!
কিন্তু বইমেলা শুরুর পর বুঝতে পেরেছি ওটা মোটেও হাসির বিষয় ছিল না। বরং ওটা ছিল ব্র্যান্ডনেম সৃষ্টির একটা প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা। দেশের ১ নম্বর বেস্ট সেলার বইয়ের লেখকের নাম যদি “ফ্রিল্যান্সার নাসিম” হতে পারে, তাহলে “রিপন ভিডিও”র দোষ কোথায়?
ফ্রিল্যান্সার ভাইয়ার সাফল্য দেখে গত কয়েকদিন ধরে আমার নিজের নামটাও পাল্টে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ভাবছি কী নাম নেওয়া যায়! যেহেতু “স্পাই স্টোরিজ” নামে বই লিখেছি, তাই ভাবছি “স্পাই ত্বোহা” বা “এজেন্ট ত্বোহা” নাম নেওয়াটাই সমীচিন হবে। অবশ্য অন্য কিছুও হতে পারে।
ভাইয়েরা (এবং বোনেরাও), দলে দলে উপযুক্ত এবং বুদ্ধিদীপ্ত নাম সাজেস্ট করুন। যদি কারো দেওয়া নাম পছন্দ হয়ে যায়, তাহলে তার ঠিকানায় একশ কপি “স্পাই স্টোরিজ” পাঠিয়ে দেওয়া হবে 🙂 সিরিয়াসলি!
(বাকিটুকু দেখুন প্রথম কমেন্টে …)
…
…
মূল স্ট্যাটাসের পর: বলেছি একশ কপি “স্পাই স্টোরিজ” পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পেমেন্ট অপশন যে “ক্যাশ অন ডেলিভারি” হবে, সেটা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। তাই এখন বললাম 🙂
– ৩ –
নেক্সট বইমেলায় বেস্ট সেলার হতে চান?
আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্বের উপর সম্পূর্ণ চাটগাঁইয়া বা সিলেটি ভাষায় একটা মোটিভেশনাল বই লিখে ফেলুন 🙂
হাইল্লে আঁইও আঁঙ্গো নোয়াখাইল্যা বাষায় ওগ্যা বই লিখি হালাইতাম, কিন্তু আঁই তো হারি না! অন কিত্তাম, কন। যান, আন্নেরাই ল্যাখেন।
– ৪ –
বইমেলায় সবচেয়ে আলোচিত বইগুলোর বিষয়বস্তু দেখে অনেকেই ইদানিং নিজেদের স্ট্যাটাসগুলো একত্রিত করে আর কমেন্টগুলোর স্ক্রিনশট নিয়ে বই প্রকাশ করার কথা ভাবছে।
ভেবে দেখলাম এই কাজটা আমি বেশ ভালোই পারব। যেই পরিমাণ স্ট্যাটাস গত কয়েক বছরে দিসি, আর সেগুলোর কমেন্টে যেই পরিমাণ শিয়া-সুন্নি, শাহবাগি-হেফাজতি, এখুয়ানি-সালাফি, ইরানি-তুর্কি ক্যাঁচাল লাগসে, শুধু একটা না, এক ডজন বই প্রকাশ করে ফেলতে পারব।
ভাবছি আগামী বছর একসাথে ১২টা বইয়ের সমগ্রই বের করে ফেলব। নাম হবে ত্বোহার ক্যাঁচালীয় স্ট্যাটাস সমগ্রের সমগ্র 🙂
– ৫ –
অটোগ্রাফ নিয়ে এতো হইচই করার কিছু নাই। মেলায় যাবেন, বই কিনবেন। লেখককে না পেলে দেড় সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে মনে মনে তার অটোগ্রাফ নিয়ে চলে আসবেন।
কারণ কবি বলেছেন, মনের অটোগ্রাফই বড় অটোগ্রাফ 🙂
– ৬ –
অটোগ্রাফের জন্য প্রচুর কমেন্ট আসছে। ভাবছি একজন এজেন্ট নিয়োগ করব, যার কাজ হবে আমার হয়ে আমার মতো করে অটোগ্রাফ দেওয়া 🙂
স্টলে এমনিতেই প্রকাশকের একজন এজেন্ট আছে। ভাবছি তাকেই বলব আরেকজন এজেন্ট খুঁজে বের করে নিয়োগ দিতে। তার টাইটেল হবে “এজেন্টের এজেন্টের এজেন্ট” 🙂 ইনসেপশনিয়াস ব্যাপার-স্যাপার!
– ৭ –
বরাবরের মতোই এই বইমেলায়ও আমার কোনো বউ থাকছে না। তবে বইকে সন্তান বলা নাকি হাল আমলের ট্রেন্ড। সেই হিসেবে বউ না থাকলেও একটা সন্তান থাকছে 🙂
– ৮ –
বাঙ্গালি লেখক-লেখিকারা খুবই ডেঞ্জারাস। এদের কাছ থেকে খুবই সাবধান।
বইমেলায় গেলেও এদের কাছ থেকে যতদূর সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করবেন। অটোগ্রাফ নিতে হলেও দূর থেকে বই বাড়িয়ে দিবেন। সেলফি তুলতে হলেও ভুলেও শরীর ঘেঁষে দাঁড়াবেন না। স্টিক বাড়িয়ে দূর থেকে তুলেই চট করে কেটে পড়বেন। বিশ্বাস নাই, কাছে গেলেই হয়তো আপনাকে ধরে কপ করে গিলে ফেলবে।
মানে, যারা বইকে সন্তান দাবি করে, এরপর সেই আপন সন্তানকেই মেলায় তুলে বেচে দেয়, তাও আবার ২৫% ছাড়ে, তাদের উপর বিশ্বাস কী!
– ৯ –
কী অদ্ভুত অদ্ভুত নামের বই যে বরুচ্ছে!
আমি একটার নাম দেখে বাংলা নাটক মনে করে ডাউনলোড করতে গিয়েছিলাম। লিঙ্ক খুঁজে না পেয়ে এরপর ভালো করে তাকিয়ে দেখি বই! কিস্যু হইলো?
আপনার সন্তানকে ভালো নাম দিন। পদ্মলোচনের নাম “কানা” রাখবেন না। নামেই পরিচয়।
– ১০ –
বলেছিলাম বই কিনলে ছবি-টবি দিয়েন।
মানুষ কথা রেখেছে। তারা ছবি পাঠাচ্ছে। মেলা থেকে বই কিনে ঘরে এসে এরপর বিছানার উপর বই রেখে ক্লোজআপ ছবি পাঠাচ্ছে 🙂
ভাইয়েরা, এইটা বইয়ের ছবি দেওয়ার সহিহ তরিকা না। বইয়ের ছবি তুলতে হয় শাড়ি পরে, খোঁপায় ফুল গুঁজে, এক হাতে কফির মগ, আরেক হাতে বই ধরে উদাস ভঙ্গিতে আকাশপানে চেয়ে 🙂
অ্যাটলিস্ট স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে!
– ১১ –
নিউ ইয়র্ক টাইমস, তালেবানের অপ-এড, সুশীলতা, শহিদুল আলম, বিএনপি-জামাত, ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়া একটা স্যাটায়ারিকাল স্ট্যাটাসের আইডিয়া মাথায় আসছিল।
বাট স্ট্যাটাসটা না দিয়া গিলা ফালাইলাম।
কারণ আমার নতুন অর্জিত মার্কেটিংয়ের জ্ঞান বলছে, বইমেলা চলাকালীন সময়ে লেখকদের উচিত না এমন কোনো স্ট্যাটাস দেওয়া, যাতে কোনো পক্ষই অসন্তুষ্ট হতে পারে 🙂
ফেব্রুয়ারি হচ্ছে ভালোবাসার মাস। এই মাসে শুধু ফুল-পাখি-লতা-পাতার জয়গান চলবে!
– ১২ –
মেলা তো শেষ সপ্তায় চলে এসেছে, এখনও যাদের কোনো বই প্রকাশিত হয়নি, বা এখনও যারা কোনো বই লেখার কাজেই হাত দেননি, তারা হতাশ হবেন না। এখনও সময় আছে। চাইলে এখনও বই লিখে প্রকাশ করা সম্ভব।
প্রথমেই পছন্দ মতো একটা টপিক বাছাই করুন। এরপর সেই বিষয়ে ইন্টারনেট থেকে খুঁজে ভালো একটা বই ডাউনলোড করে নিন। এরপর সেই বইটাই কোনো প্রকাশকের হাতে ধরিয়ে দিন।
তবে তার আগে আপনাকে ছোটো দুইটা কাজ করতে হবে। এক, প্রচ্ছদে মূল লেখকের জায়গায় এডিট করে নিজের নাম বসিয়ে দিবেন। আর দুই, শেষ পাতায় ছোটো করে লিখে দিবেন “কালেক্টেড”!
— এই স্ট্যাটাসের আইডিয়াটাও কালেক্টেড
– ১৩ –
অনলাইন মার্কেটিং কোর্স!!! সম্পূর্ণ ফ্রি!!!
=== === === === ===
ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চান? আমি একটা কোর্স চালু করেছি। সম্পূর্ণ ফ্রি! দলে দলে শেয়ার করুন, সবাইকে জানিয়ে দিন, এবং হয়ে যান মার্কেটিং এক্সপার্ট!
ভাবছেন কেন আমার কাছ থেকে মার্কেটিং শিখবেন? আমি তো সিভিল ইঞ্জিনিয়ার! মার্কেটিংয়ে আমার যোগ্যতা কী?
ওয়েল, আমার যোগ্যতা হচ্ছে, আমি সফলভাবে আমার এসপিওনাজ জগতের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা বই “স্পাই স্টোরিজ”-এর মার্কেটিং করতে পেরেছি। আমার অনলাইন মার্কেটিংয়ের জোরেই বইটা ১৪ নম্বর স্টল (ঐতিহ্য) থেকে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। সেই সাথে রকমারি (https://bit.ly/38Tq1sA) থেকেও।
ইনফ্যাক্ট, আমার বিশ্বাস সে জন্যই আপনি এই কোর্স করতে আগ্রহী হয়েছেন। আপনাকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন।
… … …
কী হলো? এখনও এই স্ট্যাটাসটা পড়ছেন কেন? স্ট্যাটাস তো শেষ হয়ে গেছে!
ওহ্ বুঝতে পেরেছি, কোর্সের রেজিস্ট্রেশন লিঙ্ক বা সময়সূচী খুঁজছেন? স্যরি ভাই, আপনি এখনও ব্যাপারটা ধরতে পারেননি। কোনো রেজিস্ট্রেশন লিঙ্ক নাই, সময়সূচীও নাই। স্ট্যাটাসটা আবার পড়ুন। এটাই ছিল কোর্সের প্রথম পর্ব 🙂 দেখলেন না কীভাবে নিজের বইয়ের মার্কেটিং করে দিলাম? আপনাকেও এভাবেই করতে হবে!
শিখে নিন, শিখে নিন। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। শেয়ার করে অন্যকেও শিখিয়ে দিন!
– ১৪ –
ক্রিকেটাররা যখন ভালো খেলে, তখন মানুষ তাদের মধ্যে “দেশপ্রেম” খুঁজে পায়। তাদেরকে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা উপাধি দেয়।
কিন্তু লেখকরা যে কত যুদ্ধ করে এক একটা বই (মতান্তরে সন্তান) প্রসব করে, সেটা মানুষের চোখে পড়ে না। খেলোয়াড়রা ভালো খেলে দেশপ্রেমিক হতে পারলে লেখোয়াড়রা কেন পারবে না? এ কেমন বিচার?
সাদাত হোসাইন, আয়মান সাদিক, সোলায়মান সুখন, সালমান মুক্তাদিরদেরকেও আমি দেশপ্রেমিক লেখক হিসেবে উপাধি দেওয়ার জন্য ফেসবুকবাসীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
– ১৫ –
“দেড় মাস পাগল ছিলাম” বলে একটা ডায়লগ ভাইরাল হয়েছে। এটা সবাই ব্যবহার করছে। তবে অধিকাংশই উল্টাপাল্টা জায়গায় – মানে খুশিতে, ঠেলায়, ঘোরতে।
ভেবে দেখলাম ডায়লগটা কেবল লেখক আর প্রকাশকদের ক্ষেত্রেই পারফেক্ট। প্রতি বছর বইমেলার একমাস, আর এর আগে প্রস্তুতিমূলক আধমাস – আক্ষরিক অর্থেই মোট এই দেড় মাস তাদেরকে পাগল থাকতে হয় ?
এখন অনেকেই বলবে এই ভয়েই নাকি তারা বই বের করে না। বাট আমি তাদেরও খুশির কোনো কারণ দেখছি না। আমার হিসাব অনুযায়ী তাদেরও এই দেড় মাস পাগল থাকার কথা। ফ্রেন্ডলিস্টের লেখকদের বইয়ের বিজ্ঞাপনের জ্বালায়!
– ১৬ –
বইমেলা তো শেষ। পরের বইয়ে হাত দিবো?
নাহ থাক, এখনও তো এগারো মাস বাকি। পরীক্ষার আগের রাতে, আই মীন, মেলার আগের মাসে উল্টায় ফালাবো ?