মারিয়াম তাহা থম্পসন: মার্কিন তথ্য ফাঁস করেছিল যে হেজবুল্লাহ স্পাই

এই ভদ্রমহিলার নাম মারিয়াম তাহা থম্পসন। চাকরি করতেন মার্কিন ডিপার্ট অফ ডিফেন্সে। কিন্তু প্রেমের টানে তিনিই জড়িয়ে পড়েন গুপ্তচরবৃত্তিতে। আমেরিকার গোপন তথ্য তুলে দেন লেবানিজ মিলিশিয়া সংগঠন হেজবুল্লাহ’র হাতে!

মারিয়ামের জন্ম লেবাননের বৈরুতে। কিন্তু ১৯৯০ সালে তিনি পরিবারের সাথে লেবানন ছেড়ে আমেরিকায় স্থানান্তরিত হন এবং পরবর্তীতে সেখানকার নাগরিকত্ব অর্জন করেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি চাকরি নেন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

আরবি এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় দক্ষ হওয়ায় ওয়ার অন টেররের সময় তার পোস্টিং হয় ট্রান্সলেটর হিসেবে প্রথমে আফগানিস্তানে, এবং এরপর ইরাক ও সিরিয়াতে। তার সর্বশেষ পোস্টিং ছিল ইরাকের স্বায়ত্ত্বশাসিত কুর্দিস্তান প্রদেশের রাজধানী এরবিলে।

নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি হিসেবে মারিয়াম টপ মার্কিন মিলিটারি অফিসারদের কাছ থেকে প্রশংসাপত্র অর্জন করেন। তিনি এমনকি ২০১০ সালে মার্কিন জেনারেল ডেভিড প্যাট্রিয়াসের কাছ থেকেও একটা সার্টিফিকেট লাভ করেন। এটা ছিল তার ক্যারিয়ারের বিশাল একটা অর্জন।

আপনি যদি এসপিওনাজ জগত সম্পর্কে আগ্রহী হন, তাহলে আমার লেখা স্পাই স্টোরিজ (রকমারি লিঙ্ক এখানে) এবং স্পাই স্টোরিজ ২ (রকমারি লিঙ্ক এখানে) বই দুটো পড়ে দেখতে পারেন। বই দুটোতে উঠে এসেছে এসপিওনাজ জগতের অবিশ্বাস্য কিছু সত্য কাহিনি।

কিন্তু এই মারিয়ামই ২০১৭ সালে অনলাইনে এক লেবানিজ যুবকের প্রেমে পড়ে যান। সেই যুবকের দাবি অনুযায়ী হেজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরাল্লাহ’র সাথে তার সরাসরি পরিচয় ছিল। প্রেমিককে হারানোর ভয়ে মারিয়াম তার হাতে মার্কিন সরকারের বিভিন্ন গোপন তথ্য তুলে দিতে শুরু করেন।

২০২০ সালে যখন আমেরিকার সাথে ইরানের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে, তখনই মারিয়াম সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। আমেরিকা যখন ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলায়মানিকে হত্যা করে, তখন প্রেমিকের অনুরোধে ঐ হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িতদের নাম খুঁজে বের করার মিশনে নামেন মারিয়াম।

এসময় তিনি প্রায় ৬০ জন মার্কিন ইন্টেলিজেন্স সোর্সের ক্লাসিফাইড ফাইল ঘাঁটাঘাঁটি করেন, যেসব ফাইল তার নিজের কাজের সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিল না। তিনি ইরাকে নিযুক্ত আমেরিকার ইনফর্মারদের নাম-ঠিকানাসহ বিভিন্ন তথ্য মুখস্ত করে নেন এবং বাসায় গিয়ে সেগুলো একটা কাগজে লিখে ফেলেন।

এরপর রাতের বেলা তিনি ভিডিও কল দেন তার প্রেমিক, সেই হেজবুল্লাহ কর্মকর্তাকে। ফোনে কথা বললে বা ম্যাসেজ পাঠালে সেটা ইন্টারসেপ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, মারিয়াম তাই মোবাইল ফোনের ক্যামেরার সামনে তার কাগজটা তুলে ধরেন।

অপর প্রান্তে তার প্রেমিক মোবাইলের স্ক্রিন থেকে সেগুলো তুলে নেন নিজের নোট বইয়ে। সব মিলিয়ে মারিয়াম অন্তত ৮ জন মার্কিন গুপ্তচরের পরিচয়, ১০টা মার্কিন টার্গেট এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হেজবুল্লাহর হাতে তুলে দেন।

গল্পগুলো সিরিয়ার মকআপ

আমার নতুন বই!!!

স্পাই স্টোরিজ ২: স্নায়ুযুদ্ধের সফলতম ডাবল এজেন্টের কাহিনি

অবিশ্বাস্য সত্য ঘটনা অবলম্বনে ননফিকশন স্পাই থ্রিলার। উচ্চপদস্থ এক ডাবল এজেন্টের কাছে ১৫ বছর ধরে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নাস্তানাবুদ হওয়ার কাহিনি।

৪০০ .০০

পাবেন রকমারি ডট কমে (22% ছাড়ে), প্রকাশনীর ফেসবুক পেজ (25% ছাড়ে) এবং আপনার পছন্দের যেকোনো অনলাইন বুকশপে।

বিস্তারিত
Short PDF

মারিয়ামের আচার-আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তার উপর নজরদারি শুরু করে। অবশেষে ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তারা মারিয়ামের বাসায় অভিযান চালায় এবং তার বিছানার নিচ থেকে আরবিতে হাতে লেখা কাগজটা উদ্ধার করে। অনুসন্ধান করে গোয়েন্দারা জানতে পারে, মারিয়ামের প্রেমিকের সাথে লেবানিজ মিলিশিয়া সংগঠন হেজবুল্লাহ’র যোগাযোগ আছে।

শীঘ্রই মারিয়ামকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আমেরিকায় নিয়ে আসা হয়। কোর্টে উঠানো হলে মারিয়াম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, তার প্রেমিকের সাথে যে হেজবুল্লাহ’র সম্পর্ক ছিল, সেটা তিনি জানতেন না। বিচার শেষে সে বছরের জুলাই মাসে আদালত তাকে ২৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, মাজাল্লা, আরব নিউজ

এসপিওনাজ সংক্রান্ত আমার সবগুলো লেখার তালিকা একসাথে দেখতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *