-
সৌদি আরব কি সালমান আল-আউদাহকে মুক্তি দেবে?
কাতারের সাথে সৌদি আরবের পুনরায় সুসম্পর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে অনেকেই প্রশ্ন করছে – এখন কি তবে সালমান আল-আউদাহ মুক্তি পাবেন?
সালমান আল-আউদাহ (বিকল্প বানান সালমান আল-আওদাহ) হচ্ছেন সৌদি আরবের সবচেয়ে বিখ্যাত ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে একজন। কাতার অবরোধের পর তার করা একটা টুইটের অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি কিন্তু সরাসরি কাতারের পক্ষেও টুইট করেননি, তিনি শুধু দোয়া করেছিলেন যেন দুই দেশের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকে।
সেই অপরাধেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, এবং যেহেতু সৌদি আরব কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদের অভিযোগ তোলে, তাই তার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা হয়, তাকে দীর্ঘদিন সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয়, এবং এখনও তিনি বন্দীই আছেন।
-
কেমন হবে বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি? (প্রথম আলোয় প্রকাশিত)
মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ রাষ্ট্রেই গণতন্ত্র নেই। কিন্তু তারপরেও প্রতি চার বছর পরপর আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সাথে সাথে তাদের ভাগ্যও পরিবর্তিত হয়। ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাই প্রশ্ন উঠছে, তার এ বিজয়ের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ভাগ্য কতটুকু পরিবর্তিত হবে? তিনি কি ট্রাম্পের নীতির বিপরীতে গিয়ে ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটাবেন? ওবামার নীতিতে ফেরত গিয়ে ইরানের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবেন, একাধিক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আন্দোলনকে সমর্থন এবং সহায়তা দিয়ে নতুন নতুন গৃহযুদ্ধ সৃষ্টিতে অবদান রাখবেন? নাকি মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে তিনি অনুসরণ করবেন এই দুয়ের মাঝামাঝি কোনো নীতি?
-
ফ্র্যাকচার্ড ল্যান্ডস: আরব বিশ্বের ভেঙে পড়ার গল্প
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নিয়ে, আরব স্বৈরাচারদের উত্থান-পতন নিয়ে, রাষ্ট্রগুলোর ভাঙ্গাগড়া নিয়ে গত কয়েক বছরে অনেক বই লেখা হয়েছে। এর মধ্যে জটিল তাত্ত্বিক বই যেমন আছে, মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে গবেষণা করা ইতিহাসবিদদের লেখা বই যেমন আছে, তেমনি আছে সংবাদ সংগ্রহ করতে মধ্যপ্রাচের দেশে দেশে, যুদ্ধের ময়দানে ময়দানে ঘুরে বেড়ানো সাংবাদিকদের লেখা, যারা সঙ্কটগুলো দেখেছেন খুবই কাছ থেকে, যারা কথা বলেছেন ভুক্তভোগীদের পরিবারের সাথে, প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের সুখ-দুঃখ।
-
ইরাকের কুয়েত দখল এবং তার ফলাফল
আগস্টের ২ তারিখে কুয়েত দখল করে নেওয়ার পর ১৯৯০ সালের এই দিনে (২৮ আগস্ট) ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ঘোষণা দেন, কুয়েত হচ্ছে ইরাকের ১৯তম প্রদেশ।
কুয়েত দখলের পূর্বে সাদ্দামের সাথে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সাদ্দাম এমনকি কুয়েত দখলের পরিকল্পনা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও জানিয়েছিলেন। রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেছিলেন, এটা ইরাকের নিজস্ব ব্যাপার। আমেরিকার এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য নেই।
তার এই বক্তব্যকেই গ্রিন সিগন্যাল হিসেবে ধরে নিয়ে সাদ্দাম কুয়েত দখল করে বসেন। আর সাথে সাথে আমেরিকা তার অবস্থান পাল্টে ফেলে। সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সাথে মিলে তারা শুরু করে উপসাগরীয় যুদ্ধ।
এই যুদ্ধে ইরাকি সেনাবাহিনী প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। ইচ্ছাকৃতভাবে বিমান হামলা করে ইরাকের সিভিলিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ধ্বংস করে দেওয়া হয়। যুদ্ধে সরাসরি নিহত হয় অন্তত ২৫ থেকে ৫০ হাজার ইরাকি। কিন্তু যুদ্ধের পরবর্তী দিনগুলোতে অবরোধের কারণে, পুষ্টিহীনতায়, চিকিৎসার অভাবে মারা যায় লক্ষ লক্ষ ইরাকি।
সাদ্দামের কুয়েত দখলের কারণেই সৌদি আরব মার্কিন সেনাদেরকে নিজেদের দেশে আমন্ত্রণ জানায়। আর আরবের পবিত্র ভূমিতে মার্কিন সেনাদের এই উপস্থিতির প্রতিক্রিয়াই পরবর্তী দিনগুলোতে ওসামা বিন লাদেন এবং আল-কায়েদার উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কুয়েত দখলের মাধ্যমে সাদ্দাম এবং সেই দখলে সম্মতি দিয়ে, পরে পাল্টা অবস্থান নিয়ে আমেরিকা যে অন্যায় করেছিল, সেই অন্যায়ের খেসারত আজও দিয়ে যাচ্ছে ইরাক এবং আরব বিশ্বের সাধারণ জনগণ।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে আমার সবগুলো লেখা পাবেন এই লিঙ্কে। আর রেগুলার আপডেট পেতে চাইলে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস ও রাজনীতি পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।
-
যুদ্ধ শেষে বাশার আল-আসাদের প্রধান মিত্র হবে আরব আমিরাত!
যুদ্ধ যখন শেষ হবে, বাশার আল-আসাদ যখন টিকে যাবে, তখন তার প্রধান মিত্র হবে আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব (এবং সেই সাথে ব্র্যাকেটে ইসরায়েল)।
যতই অদ্ভুত শোনাক, এটাই সত্য। এবং এই কথা আজই প্রথম বলছি না, আরো বছর দেড়েক আগে পুরাতন আইডি থেকেও বলেছিলাম। তখন সেটা ছিল জাস্ট একটা অনুমান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা এই অনুমানকে আরো বাস্তবসম্মত করে তুলেছে।
-
অ্যানাটমি অফ টেরর: সন্ত্রাসবাদ নিয়ে এফবিআইর পদত্যাগী এজেন্টের অসাধারণ একটা বই
সাবেক এফবিআই স্পেশাল এজেন্ট আলি সুফানের লেখা অ…সাধারণ একটা বই। বিস্তারিত রিভিউ পরে কখনও দিবো, আপাতত আলি সুফানের পরিচয় এবং এই বইয়ের পেছনের কাহিনীটা বলি। আলি সুফান হচ্ছেন লেবানিজ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। ১৯৯৮ সালে তিনি ছিলেন সমগ্র এফবিআইর মাত্র ৮ জন আরবি ভাষা জানা এজেন্টের মধ্যে একজন। সে সময় আল-কায়েদা ইয়েমেনে মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ ইউএসএস কোলের উপর আত্মঘাতী হামলা চালালে তাকে লীড ইনভেস্টিগেটর হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
৯/১১ এর হামলার সময়ও আলি সুফান তদন্তের কাজে ইয়েমেনেই ছিলেন। সে সময়ই তিনি আগে থেকে ইয়েমেনে বন্দী থাকা বিন লাদেনের সাবেক ড্রাইভারের মুখ থেকে খালিদ শেখ মোহাম্মদসহ বিভিন্ন টপ লেভেল আল-কায়েদা নেতার ৯/১১ এর হামলার সাথে সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি আদায় করেন। কোনো রকম টর্চার ছাড়াই, দিনের পর দিন আলোচনা এবং জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে।
-
আরব আমিরাত: মধ্যপ্রাচ্যের নতুন ইসরায়েল
আরব আমিরাত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন ইসরায়েল। কোনো দিন যদি কোনো গায়েবী উপায়ে ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, আরব আমিরাত অনায়াসেই সেই শূন্যস্থান পূরণ করে নিতে পারবে।
আনলাইক অ্যানি আদার আরব কান্ট্রি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের তথা ইউএইর (আরবিতে সংক্ষেপে ইমারাত বলে, আমি সেটা বলতেই অভ্যস্ত, এরপর থেকে আরব আমিরাতকে শুধু ইমারাত হিসেবে উল্লেখ করব) রাজনীতি আগ্রাসনমূলক। এ পর্যন্ত তারা বিশ্বের সাড়ে ছয়টা দেশে সরাসরি নিজেদের সেনাবাহিনী নিযুক্ত করেছে: ইরাক, কসোভো, সোমালিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইয়েমেন এবং সো কলড ইসলামিক স্টেট (হেন্স হাফ এ কান্ট্রি)।
আরব বিশ্বের মধ্যে ইমারাতের সামরিক সক্ষমতা এবং সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা অন্য যে কারো চেয়ে অনেক অনেক বেশি। তারা এমন এক শক্তিশালী মিটিলারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সে গড়ে তুলতে চায়, যেন রেজিওনাল কোনো হুমকির মুখে পড়লে আমেরিকা বা ইসরায়েলের কাছ থেকে সাহায্য এসে পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত নিজেরাই নিজেদেরকে ডিফেন্ড করতে পারে।
-
ইনসাইড দ্য ব্যাটেল অফ আলজিয়ার্স: দুঃসাহসী নারী গেরিলা জোহরা দ্রিফ এর আত্মজীবনী
ঔপনিবেশিক ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ, বিশেষ করে এই যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সের যুদ্ধের উপর নির্মিত দ্য ব্যাটেল অফ আলজিয়ার্স (The Battle of Algiers) সিনেমাটা হয়তো অনেকেই দেখেছেন। ঐ সিনেমায় যে তিন নারী গেরিলাকে দেখানো হয়েছিল, জোহরা দ্রিফ (Zohra Drif) ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। ইনসাইড দ্য ব্যাটেল অফ আলজিয়ার্স (Inside the Battle of Algiers: Memoir of a Woman Freedom Fighter) নামের এই বইটা তারই আত্মজীবনী।
বইটার ভূমিকা লিখেছেন বিখ্যাত কূটনীতিক লাখদার ব্রাহিমি, যিনি আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ পূর্বকালীন সময়ে ভার্সিটিতে জোহরার সহপাঠী ছিলেন। লাখদার ব্রাহিমি ছিলেন এক সময় আলজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে ২০১৪ সালে সিরিয়ার যুদ্ধের সময় সিরিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের এবং আরব লীগের বিশেষ দূত। বইটার ইংরেজি অনুবাদ করেছেন Farrand G. Andrew।
-
প্রেসিডেন্ট মুরসি: যে বইয়ে স্থান পেয়েছে আমার দুটি লেখা
মিসরের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির স্মরণে প্রচ্ছদ প্রকাশন একটি বই প্রকাশ করেছে। “প্রেসিডেন্ট মুরসি: আরব বসন্ত থেকে শাহাদাত” শিরোনামের বইটি ঠিক সেই অর্থে মুরসির জীবনী না। এতে মূলত মুরসির জীবনের বিভিন্ন দিকের উপর, বিশেষ করে তার রাষ্ট্রপ্রতিত্বের সময়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। বইটিতে আমার দুটি লেখাও স্থান পেয়েছে।
বইটিতে মোট ১৬টি লেখা আছে, মৌলিক এবং অনুবাদ মিলিয়ে। মৌলিক লেখকদের দুজন পরিচিত লেখক আছেন – ডঃ আব্দুস সালাম আজাদী এবং ফেসবুকে জনপ্রিয় রাজনৈতিক লেখক, মিসর প্রবাসী মোহাম্মদ নোমান ভাই।
-
মোহাম্মদ মুরসির অভিষেক
প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোহাম্মদ মুরসির অভিষেক অনুষ্ঠানটি তার জন্য এর চেয়ে বেশি অপমানজনক হওয়া সম্ভব ছিল না।
নির্বাচনের দিন রাতে মুরসি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি বিলুপ্ত পার্লামেন্টকে পুনর্বহাল করবেন এবং সেই পার্লামেন্টের সামনেই শপথ গ্রহণ করবেন। কিন্তু মিলিটারি কাউন্সিল তাকে তার প্রতিজ্ঞা ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করে। অভিষেক অনুষ্ঠানের পূর্বে দুইজন জেনারেল টেলিভিশনে এক যৌথ বিবৃতিতে প্রতিজ্ঞা করেন, সামরিক বাহিনী সর্বদাই ব্যাপক ক্ষমতা সহকারে সরকারের পেছনে থেকে “বিশ্বস্ত অভিভাবক” হিসেবে ভূমিকা পালন করে যাবে।
কী ধরনের “অভিভাবক”?
“আপনার যেভাবে খুশি ব্যাখ্যা করে নিন”, জানিয়েছিলেন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আল-আসার।