কাতারের সাথে সৌদি আরবের পুনরায় সুসম্পর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে অনেকেই প্রশ্ন করছে – এখন কি তবে সালমান আল-আউদাহ মুক্তি পাবেন?
সালমান আল-আউদাহ (বিকল্প বানান সালমান আল-আওদাহ) হচ্ছেন সৌদি আরবের সবচেয়ে বিখ্যাত ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে একজন। কাতার অবরোধের পর তার করা একটা টুইটের অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি কিন্তু সরাসরি কাতারের পক্ষেও টুইট করেননি, তিনি শুধু দোয়া করেছিলেন যেন দুই দেশের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকে।
সেই অপরাধেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, এবং যেহেতু সৌদি আরব কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদের অভিযোগ তোলে, তাই তার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা হয়, তাকে দীর্ঘদিন সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয়, এবং এখনও তিনি বন্দীই আছেন।
তো এখন প্রশ্ন উঠছে, যেই কাতারকে নিয়ে সমস্যার সূচনা, তার সাথেই যেহেতু সৌদি আরব সমস্যা মিটমাট করে ফেলেছে, কাতারের আমিরের সাথে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স কোলাকুলি করেছেন, তাকে নিজে ড্রাইভ করে হিস্টোরিক প্লেস ঘুরিয়ে এনেছেন, তাহলে সালমান আল-আউদার বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে যাওয়ার বা তাকে আটক রাখার এখন কি কোনো ভিত্তি আছে? তাকে তো এখন মুক্তি দেওয়া উচিত!
এখন সমস্যা হচ্ছে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যথেষ্ট আনপ্রেডিক্টেবল। তিনি বেশ কিছু ইস্যুতে আগের অবস্থান পাল্টে পুরোপুরি ১৮০ ডিগ্রী ইউ টার্ন নিয়েছেন। সুতরাং সালমান আউদাকেও হয়তো শেষ পর্যন্ত তিনি মুক্তি দিয়ে দিতে পারেন, কিছুই বলা যায় না। কিন্তু এমনিতে তার যেই নেচার, বা এমনিতে ক্ষমতার রাজনীতি যেসব নিয়ম-কানুন মেনে চলে, তাতে আমি মনে করি না সালমান আউদাকে মুক্তি দেওয়া হবে।
কারণটা হচ্ছে, তাকে যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটাই তো কোনো সিরিয়াস কারণে করা হয়নি। করা হয়েছে জনগণকে ইন্টিমিডেট করার জন্য। অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য – এই দেখ, এটা হচ্ছে আমাদের রেড লাইন। তোমরা যতো খুশি ধর্ম চর্চা কর সমস্যা নাই, কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আসা আমাদের কোনো পলিসি নিয়ে সমালোচনা করলে তোমরা শেষ। যত বড় স্কলারই হও, আর যত মিলিয়ন টুইটার ফলোয়ারই থাকুক, কিছু আসে যায় না, তোমাদের লাইফ হেল করে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: মোহাম্মদ বিন সালমান বনাম সুলতান বিন তুর্কি: এক রাজকীয় কিডন্যাপিংয়ের কাহিনী!
একই কথা লুজাইন আল-হাথলুলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। হাথলুল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন নারীদের ড্রাইভিংয়ের অধিকার আদায়ের জন্য। এবং পূর্বের কোনো বাদশাহ যেটা করতে পারেনি, করার সাহস করেনি, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সত্যি সত্যিই সেটা করে দেখিয়েছেন। তিনি মেয়েদের ড্রাইভিংয়ের অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন। সহজ কথায়, হাথলুলের দাবি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু এর পরপরই তিনি হাথলুলকে গ্রেপ্তার করে সলিটারি কনফাইনমেন্টে পাঠিয়েছেন, যেখানে তার উপর শারীরিক টর্চারও করা হয়েছে।
কেন এই বৈপরিত্য? একই কারণ। জনগণকে শিক্ষা দেওয়া। ঝিকে মেরে বউকে শেখানো। জনগণকে বোঝানো ক্ষমতা কার হাতে – ড্রাইভিংয়ের অনুমতি দিয়েছি, সেটা আমি নিজের খুশিতে দিয়েছি, হাথলুলের আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে দেইনি। বরং এরকম আন্দোলন করলে তার পরিণতি কী হয়, সেটা দেখ। যা আছে, আমি নিজের ইচ্ছায় যা দিচ্ছি, সেটাই যথেষ্ট। সেটা নিয়েই খুশি থাক। আন্দোলন করলে তোমাদের পরিণতিও এরকম হবে। সারা দুনিয়া, সবগুলো মানবাধিকার সংস্থা তোমাদের পক্ষে থাকলেও কিছু আসবে-যাবে না।
সে কারণেই আমার মনে হয় না সালমান আল-আউদাকে মুক্তি দেওয়ার সময় এসেছে। কারণ কাতারের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে সৌদি আরব বাধ্য হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির নতুন সমীকরণের কারণে। কিন্তু সালমান আউদাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে। সেখানে এখনও কোনো পরিবর্তন আসেনি।
আরও পড়ুন: সৌদি প্রিন্স তুর্কি বিন ফয়সাল হঠাৎ কেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সোচ্চার?