বিদেশী স্পাইদের কাহিনী তো অনেক শুনেছেন। এক বাংলাদেশী স্পাইর কাহিনী শুনবেন?
তার নাম দিওয়ান চাঁদ মল্লিক। অথবা দেওয়ান চাঁদ মালিক। ইংরেজিতে বানান কোথাও Diwan Chand Mallick, কোথাও Dewanchand Malik।
তার জন্ম বাংলাদেশে, কিন্তু তিনি পড়াশোনা করেছেন কলকাতায়। এবং পড়াশোনা শেষে ১৯৯৯ সালে তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা R&AW তথা Research and Analysis Wing-এ যোগ দেন।
কোনো দেশের বৈদেশিক গুপ্তচর সংস্থায় সাধারণত ভিনদেশী কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয় না। তাই স্বভাবতই তিনি কাগজপত্র জালিয়াতি করে নিজেকে ভারতীয় দাবি করে এই চাকরিতে প্রবেশ করেন।
র-তে দেওয়ান চাঁদ মালিক দ্রুত উন্নতি করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি র-এর RAW’s Aviation Research Centre (ARC)-এর একজন ফার্স্ট ক্লাস অফিসার হিসেবে কলকাতায় নিয়োগ পান। এ সময় ভারতের বিপুল পরিমাণ উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তার হাতের উপর দিয়েই আসা-যাওয়া করত।
কিন্তু ২০০৫ সালে হঠাৎ করেই তিনি অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। ধারণা করা হয়, পরকীয়ার কারণে তার স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ফলে তার স্ত্রী তার বিরুদ্ধে ডিভোর্সের মামলা করে বসেন।
আপনি যদি এসপিওনাজ জগত সম্পর্কে আগ্রহী হন, তাহলে আমার লেখা স্পাই স্টোরিজ (রকমারি লিঙ্ক এখানে) এবং স্পাই স্টোরিজ ২ (রকমারি লিঙ্ক এখানে) বই দুটো পড়ে দেখতে পারেন। বই দুটোতে উঠে এসেছে এসপিওনাজ জগতের অবিশ্বাস্য কিছু সত্য কাহিনি।
এক বর্ণনা অনুযায়ী এ সময় তার স্ত্রী কোর্টে প্রয়োজনীয় নথিপত্র দাখিল করলে তার প্রকৃত পরিচয় ফাঁস হয়ে যায়। কিন্তু অপর এক বর্ণনা অনুযায়ী তার উপর ক্ষিপ্ত স্ত্রী নিজেই চিঠি লিখে র-এর অফিসারদেরকে তার বাংলাদেশী পরিচয় জানিয়ে দেন।
পরিচয় ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ২০০৫ সালের এপ্রিল/মে মাসে মালিক আত্মগোপনে চলে যান। র কলকাতা পুলিশের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে। তাকে খুঁজে বের করার জন্য দেশের প্রতিটা এয়ারপোর্ট, সীপোর্ট এবং রেল স্টেশনে তার ছবি পাঠানো হয়। কিন্তু ততদিনে তিনি যেন পুরো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন।
২০০৭ সালে একবার ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো তাকে প্রায় ধরেই ফেলেছিল। কিন্তু শেষমুহুর্তে তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। দেশের ভেতরে তাকে ধরতে ব্যর্থ হয়ে র বাংলাদেশের ভেতরেও তাকে ধরার জন্য ব্যাপক অনুসন্ধান চালায়।
কিন্তু তাকে না পেলেও বাংলাদেশে এসে তারা তার বাংলাদেশী নাগরিকত্বের নিশ্চিত প্রমাণ পায়। এবং তারা তার পরিবার সম্পর্কেও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। জানা যায়, তার বাবা অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন, কিন্তু তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এখনও বাংলাদেশেই আছেন।
দেওয়ান চাঁদ মালিকের এই সংবাদটি বাংলাদেশে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপেও পাওয়া যায়, যেখানে তাকে ডিজিএফআইর এজেন্ট হিসেবে দাবি করা হয়। যদিও এ জাতীয় কোনো দাবির পক্ষে জোরালো কোনো সূত্র পাওয়া যায় না।
দেওয়ান চাঁদ মালিক কি বাংলাদেশের এজেন্ট হতে পারেন? হয়তো। কোনো কিছুই অসম্ভব না। কিন্তু সেরকম হলে ব্যাপারটা নিয়ে ২০০৫ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক লেভেলে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা হতে পারত। সেরকম কোনো সংবাদ পত্রপত্রিকায় আসেনি।
ব্যাপারটা তাই জাস্ট পরিচয়পত্র জালিয়াতির একটা ঘটনাও হতে পারে। হয়তো দেওয়ান চাঁদ মালিক র-তে প্রবেশ করার একটা সুযোগ পেয়েছিলেন। শুধুমাত্র বাংলাদেশে জন্ম বলে তিনি সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি। তাই কাগজপত্র জালিয়াতি করে নিজেকে ভারতীয় বলে দাবি করে চাকরিটা আদায় করে নিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশ/ভারতে অহরহই ঘটতে পারে।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ, ডিএনএ ইন্ডিয়া
এসপিওনাজ সংক্রান্ত আমার সবগুলো লেখার তালিকা একসাথে দেখতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে।