আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা ফিলিস্তিনিদের কী উপকারে আসবে?

ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েল এখন পর্যন্ত কম গণহত্যা চালায়নি। কিন্তু গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক কোনো আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সেই আদালতের সামনে ইসরায়েলকে হাজিরা দিতে হচ্ছে। গতমাসে সাউথ আফ্রিকা আইসিজে, তথা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করেছে, সম্প্রতি সেই মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সাউথ আফ্রিকা যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, এই মামলার রায় কি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আসতে পারে? এর ফলে ফিলিস্তিনিদের উপর চলমান গণহত্যা কি বন্ধ হতে পারে? সেটাই আলোচনা করেছি এই আর্টিকেলে। ধাপে ধাপে, বিস্তারিতভাবে।

ICJ বা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত কী?

আন্তর্জাতিক আদালত বলতে আমরা প্রধানত দুটো আদালতকে চিনি। একটা হচ্ছে আইসিসি (ICC) এবং আরেকটা হচ্ছে আইসিজে (IJC)। আইসিসি হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (International Criminal Court) এবং আইসিজে হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (International Court of Justice)।

দুটোই আন্তর্জাতিক আদালত এবং দুটোর অবস্থানই নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ-এ। রাস্তার এপার আর ওপারে। কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে, আইসিসি জাতিসংঘের কোনো অঙ্গ সংগঠন না। অন্যদিকে আইসিজে হচ্ছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ লিগ্যাল বডি।

আইসিসি সাধারণত ব্যক্তিবিশেষের বিচার করে থাকে। কোনো রাষ্ট্রপ্রধান, সেনাবাহিনীর কোনো কর্মকর্তা বা সেনাপ্রধান যদি কোন গণহত্যার সাথে জড়িত থাকে অথবা অন্য কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ করে, তখন আইসিসি তার বিচার করতে পারে। তার বিরুদ্ধে রায় দিতে পারে।

কিন্তু আইসিজে সেটা করতে পারে না। আইসিজে সাধারনত রাষ্ট্রের বিচার করে। কোনো রাষ্ট্র যদি অন্য কোনো রাষ্ট্রের উপর বা কোনো জনগোষ্ঠীর উপর কোনো ধরনের অন্যায় করে বা গণহত্যা চালায়, তখন ভুক্তভোগী রাষ্ট্র বা তৃতীয় কোনো রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে। এবং আইসিজে তখন সেটার বিচার করতে পারে।

অর্থাৎ আইসিজে শুধুমাত্র রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের যে বিবাদ, সেটা মীমাংসা করতে পারে, সে ব্যাপারে রায় দিতে পারে, অথবা সে ব্যাপারে আইনি পরামর্শ দিতে পারে।


এই আর্টিকেলটা মূলত আমার একটা ইউটিউব ভিডিওর অনুলিখন। ভিডিওটা দেখতে পারেন এখান থেকে। ভালো লাগলে আমার ইউটিউব চ্যানেলটা সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন।

ইউটিউব চ্যানেল

আইসিজে কীভাবে কাজ করে?

আইসিজের প্যানেলে সাধারণত ১৫ জন বিচারক থাকেন। তারা ৯ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। প্রতি তিন বছর পর পর পাঁচজন করে বিচারককে নির্বাচিত করা হয়। প্রাথমিকভাবে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো একজন করে বিচারককে মনোনীত করে। এরপর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভোটাভুটির মাধ্যমে তাদেরকে নির্বাচিত করা হয়।

কোনো মামলায় এই ১৫ জন বিচারকের মধ্যে অধিকাংশ বিচারক যে পক্ষে রায় দেন, সেটাই চূড়ান্ত রায় হিসেবে গৃহীত হয়। এই রায় সবগুলো রাষ্ট্র মানতে বাধ্য থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আইসিজের আসলে কোনো পুলিশ ফোর্স নেই। ফলে তারা সেই রায় কার্যকর করতে পারে না।

সুতরাং রাষ্ট্রগুলো নিজেরাই যদি তাদের সুনামের কথা বা দায়বদ্ধতার কথা চিন্তা করে রায় মেনে নেয়, তাহলে খুবই ভালো। আর না মানলে সাধারণত সেটা জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিলে (নিরাপত্তা পরিষদে) যায়।

সমস্যা হচ্ছে, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা আছে। আদালতের বিচারকদের কিন্তু ভেটো পাওয়ার নেই। কিন্তু যদি আদালতে নিষ্পত্তি না হয়, তাহলে সিকিউরিটি কাউন্সিলে গেলে সেখানে গৃহীত সিদ্ধান্তের উপর ভেটো পড়তে পারে। এবং ভেটো পড়লে সাধারণত সেই রায় কার্যকর করার আর কোনো উপায় থাকে না।

এখন এক্ষেত্রে যেটা হবে, যদি আদালত ইসরাইলের বিরুদ্ধে রায় দেয়, এবং সেটা যদি ইসরায়েল না মানে, তাহলে সেটা সিকিউরিটি কাউন্সিলে যাবে এবং আমেরিকা সেখানে ভেটো দিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিবে।

কিন্তু এটাই একমাত্র আউটকাম নাও হতে পারে। এই আদালতের রায় একটু ভিন্নভাবেও আসতে পারে এবং সেটা ফিলিস্তিনদের পক্ষে যেতে পারে। কেন এবং কীভাবে, ব্যাখ্যা করছি।

সাউথ আফ্রিকা কেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে?

আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে সাউথ আফ্রিকা যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তার বিষয়বস্তু হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের উপর চলমান গণহত্যা। সাউথ আফ্রিকার বক্তব্য, সেখানে গণহত্যা চলছে এবং তারা চায় আদালত যেন সেই গণহত্যা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।

এখন আইসিজে যেভাবে কাজ করে সেটা হচ্ছে, একটা রাষ্ট্র যখন অন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করে, তখন মূল মামলা বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে। যেমন বসনিয়ার গণহত্যা নিয়ে যে মামলাটা হয়েছিল, সেটা প্রায় ১৪ বছর পর্যন্ত চলেছিল। বা সম্প্রতি মায়ানমারের বিরুদ্ধে ওআইসির পক্ষ থেকে গাম্বিয়া যে মামলাটা করেছে, সেটাও চার বছর ধরে চলছে। এখনও চূড়ান্ত রায় আসেনি।

কাজেই সাউথ আফ্রিকা যে ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, সেটাও বছরের পর বছর ধরে চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মিডল ইস্ট আইয়ের একটা আর্টিকেলে একজন আইন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, তার অনুমান এই মামলা কমপক্ষে চার বছর পর্যন্ত চলতে পারে। কারণ গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে কিনা, সেটা তো তর্ক-বিতর্ক এবং যুক্তি সাপেক্ষ ব্যাপার। সেটা প্রমাণ করতে বছরের পর বছর সময় লেগে যেতে পারে।

কিন্তু এই চার বছর পর্যন্ত তো আর গণহত্যা চলতে দেওয়া যায় না। ফলে আইসিজের যে প্রসিডিউর সেটা হচ্ছে, মূল মামলায় প্রবেশ করার আগেই যদি বাদীপক্ষ মোটামুটিভাবে প্রমাণ করতে পারে যে সেখানে গণহত্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে, তাহলেই আদালত প্রাথমিকভাবে একটা নির্দেশ দিয়ে দিতে পারবে। এটাকে বলা হয় প্রভিশনাল অর্ডার।

অর্থাৎ এক্ষেত্রে আদালত হয়তো বলতে পারে যে ইসরাইলকে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে, অথবা তাদের মিলিটারি অপারেশন বন্ধ বা সীমিত করতে হবে, অথবা বিমান হামলা বন্ধ করতে হবে, বা এরকম কিছু। এবং এটাই হচ্ছে আপাতত সাউথ আফ্রিকার চাওয়া।

সাউথ আফ্রিকা ৮৪ পৃষ্ঠার একটা অ্য প্লিকেশন দাখিল করেছে এবং এগুলোর ভিত্তিতে তারা অনুরোধ করেছে যেন ইমিডিয়েটলি গাযা অপারেশন সাসপেন্ড করা হয়, সেখানকার
মানুষদেরকে যে বাধ্যতামূলকভাবে ডিসপ্লেস করা হচ্ছে, গাযা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে, সেটা যেন বন্ধ করা হয় এবং হিউম্যানিটেরিয়ান এক্সেস অর্থাৎ গাযার ভেতরে যেন ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

সাউথ আফ্রিকা বলেছে এগুরো তারা ইমিডিয়েটলি চায়। এরপর মূল মামলা কয়েক বছর ধরে চলুক, সমস্যা নেই। সেটা পরে দেখা যাবে যে এটা আসলেই গণহত্যা ছিল নাকি ছিল না।

গল্পগুলো সিরিয়ার মকআপ

আমার নতুন বই!!!

স্পাই স্টোরিজ ২: স্নায়ুযুদ্ধের সফলতম ডাবল এজেন্টের কাহিনি

অবিশ্বাস্য সত্য ঘটনা অবলম্বনে ননফিকশন স্পাই থ্রিলার। উচ্চপদস্থ এক ডাবল এজেন্টের কাছে ১৫ বছর ধরে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নাস্তানাবুদ হওয়ার কাহিনি।

৪০০ .০০

বইমেলায় থাকছে ৪৩৯ নম্বর (সতীর্থ প্রকাশনার) স্টলে। এছাড়াও পাবেন রকমারি ডট কমে (৩৫% ছাড়ে), প্রকাশনীর ফেসবুক পেজ (৩৫% ছাড়ে) এবং আপনার পছন্দের যেকোনো অনলাইন বুকশপে।

বিস্তারিত
Short PDF

সাউথ আফ্রিকা কী ধরনের আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করেছে?

বলে রাখা ভালো, আমি আইনের মানুষ না এবং আমি আইন বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানিনা। কিন্তু টুইটারে এবং বিভিন্ন নিউজে আইনজীবীদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আমি যতটুকু যতটুকু ফলো করেছি, সেখানে অধিকাংশ আইন বিশ্লেষকই বলছেন যে সাউথ আফ্রিকা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে পেরেছে। তারা একেবারে আবেগ বহির্ভূতভাবে একদম পয়েন্ট বাই পয়েন্ট প্রমাণ করতে পেরেছে যে ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে।

তারা ইসরাইলি নেতাদের অন্তত ৬০টা উক্তি কোট করেছে যেখানে সেই নেতারা গণহত্যার পক্ষে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে। এবং তারা শুধুমাত্র সেখানেই থেমে যায়নি। কারণ এমনিতে গণহত্যা (Genocide) বলতে আমরা কী বুঝি? কয়েক হাজার মানুষকে মেরে ফেললেই আমরা সেটাকে গণহত্যা বলি। কিন্তু এটা তো হচ্ছে সাধারণ মানুষের কথা। আদালতের সংজ্ঞা তো ভিন্ন।

আদালতে গণহত্যা প্রমাণ করতে হলে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে গণহত্যা প্রমাণ করতে হলে শুধুমাত্র কত মানুষকে মেরেছে সেটা প্রমাণ করলেই হবে না। একই সাথে ইনটেনশনটাও প্রমাণ করতে হবে। অর্থাৎ দেখাতে হবে যে কোনো একটা জাতি, গোষ্ঠী বা ধর্মের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষকে মারা হয়েছে এবং সেই সাথে এটাও প্রমাণ করতে হবে যে তাদেরকে মারা হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে।

যদি এরকম হয় যে যুদ্ধ চলছে এবং এর মধ্যে কয়েক হাজার বা কয়েক লাখ মানুষ মারা গেছে, তখন সেটাকে জেনোসাইড অর্থে গণহত্যা বলা যাবে না। গণহত্যা হবে যদি দেখানো যায় যে সেটা করা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে, পরিকল্পনা মাফিক। কোনো জাতিগোষ্ঠীকে পুরোপুরি উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে।

তো সাউথ আফ্রিকা এক্ষেত্রে যে কাজটা করেছে, তারা ইসরাইলি নেতাদের অন্তত ৬০টা উক্তি কোট করেছে, এবং এরপর তারা দেখিয়েছে যে যারা এই বক্তব্য গুলো দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ইসরাইল রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, তাদেরকে কোনো শাস্তি দেয়নি, বক্তব্যগুলোর প্রতিবাদ করেনি। তার মানে প্রমাণিত হলো যে ঐ বক্তব্যগুলো ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় অবস্থান।

এর বাইরে তারা আরও যেটা করেছে, তারা এই বক্তব্যগুলোর সাথে ভিডিও ক্লিপ দেখিয়েছে যে সৈন্যরা বক্তব্যগুলো ফলো করেছে। বিশেষ করে নেতানিয়াহুর আমালেক সংক্রান্ত বক্তব্যটা – আমালেক হচ্ছে বাইবেলের একটা রেফারেন্স যেখানে নারী-শিশু-সহ দ শত্রুপক্ষের সবাইকে নির্বিচারে হত্যা করার কথা বলা হয়েছে – সেটা কোট করার পর সাউথ আফ্রিকার আইনজীবিরা ভিডিও ক্লিপ দেখিয়েছে যে গাযার ভেতরে প্রবেশ করা সৈন্যরা সেই আমালেকের রেফারেন্স দিয়ে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে।

অর্থাৎ প্রমাণ হয়ে গেল যে নেতারা গণহত্যার উস্কানিমূলক যেসব বক্তব্য দিয়েছে, সৈন্যরা সেগুলো গ্রহণ করেছে এবং গ্রহণ করেছে এবং কার্যকর করেছে। ফলে অধিকাংশ আইন বিশ্লেষকের মতে সাউথ আফ্রিকা মোটামুটি নিশ্চিত ভাবে তাদের দাবি প্রমাণ করতে পেরেছে।

ইসরায়েল কীভাবে নিজেদেরকে ডিফেন্ড করেছে?

সাউথ আফ্রিকার আর্গুমেন্টের বিপরীতে ইসরাইল যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে, সেটা খুবই ইন্টারেস্টিং। ইসরাইলের পক্ষে আসলে এটা ডিফেন্ড করা খুব কঠিন। কারণ তারা আসলেই এসব বক্তব্য দিয়েছে। তারা ২৩ হাজার মানুষকে নিশ্চিত ভাবে হত্যা করেছে এবং ৭ হাজার এখনও নিখোঁজ আছে। তারা বিপুল সংখ্যক বাড়িঘর ধ্বংস করেছে। এগুলো তাদের অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

ফলে তারা যেটা করেছে, তারা রাইট টু ডিফেন্ডের যুক্তি দেখিয়েছে। অর্থাৎ তারা দাবি করেছে- হামাস আমাদের উপর আক্রমণ করেছে, আমরা সেজন্য পাল্টা হামাসকে ধ্বংস করার জন্য এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছি।

এক্ষেত্রে একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। হামজা সাদা নামে এক ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট আছে, সে জানত ইসরায়েল ঠিক এই কাজটাই করবে। তারা গণহত্যা ডিফেন্ড করতে না পেরে হামাস, হামাস, হামাস বলেই তাদের সময় কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। তো সেজন্য আদালতে যখন শুনানি চলছিল তখন সে একটা কার্ডবোর্ড নিয়ে বসে বসে “খামাস কাউন্টার” চালু করেছিল।

সে বলছিল- আমি তোমাদেরকে লাইভ দেখাবো যে ইসরায়েলি আইনজীবীরা কতবার “খামাস” শব্দটা উচ্চারণ করে। এবং লাইভ চলাকালে সে এক দুই তিন করে গুনতে গুনতে শেষ পর্যন্ত দেখিয়েছে, ৩ ঘণ্টার বক্তব্যে ইসরাইলের ১৩৭ বার এই খামাস শব্দটা উচ্চারণ করেছে।

তবে এর বাইরে ইসরায়েলি আইনজীবিরা সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেছে প্রসিডিউরাল ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করে। তাদের দাবি, সাউথ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করার আগে তাদেরকে অবহিত করেনি বা যথেষ্ট সময় দেয়নি।

কারণ আইসিজের নিয়ম হচ্ছে, কোনো রাষ্ট্র যদি অন্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করতে চায়, তাহলে তাদের মধ্যে একটা ডিসপিউট থাকতে হবে। অর্থাৎ দুইটা রাষ্ট্রের মধ্যে যদি কোনো বিষয়ে দ্বিমত হয়, এবং তারা যদি নিজেরা সমাধান করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়, অর্থাৎ তাদের মধ্যে যদি যদি ডিসপিউট হয়, তাহলেই কেবল তারা আদালতের কাছে যেতে পারবে।

এখন ইসরাইল দাবি করছে যে সাউথ আফ্রিকা এক্ষেত্রে যথাযথ প্রসিডিউর ফলো করেনি। ফলে তারা যে মামলাটা করেছে, এই মামলাটাই অবৈধ। কাজেই তাদের দাবি, মামলাটা খারিজ করে দেওয়া হোক। এবং এটাকেই অনেকে বলছে যে এটাই হচ্ছে ইসরায়েলের একমাত্র স্ট্রং পয়েন্ট। আদালত হয়তো আসলেই এটাকে আমলে নিতে পারে, যদিও এই সম্ভাবনা কম।

আল-জাজিরার সিনিয়র পলিটিক্যাল অ্যানালিস্ট মারওয়ান বিশারা বলেছেন, তার মতে এটাই ইসরায়েলের একমাত্র স্ট্রং পয়েন্ট। এর বাইরে তারা যেসব আর্গুমেন্ট তুলে ধরেছে, সেগুলো খুবই দুর্বল। যেমন তারা যে হামাসের উপর দায় চাপিয়েছে, সেটা স্ট্রং কোনো আর্গুমেন্ট না। এক্ষেত্রে গার্ডিয়ান পত্রিকার একজন আইন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এটা হচ্ছে ইররিলেভ্যান্ট। কারণ অপরপক্ষ যত বড় অপরাধই করুক, তার জবাবে গণহত্যা চালানোর জাস্টিফিকেশন তৈরি হয় না। তাদের মতেও প্রসিডিউরাল ত্রুটিটাই ইসরায়েলের একমাত্র জোরালো পয়েন্ট।

কিন্তু এক্ষেত্রেও 972 ম্যাগাজিন নামে ইসরায়েলি একটা ম্যাগাজিন বলছে, ইসরায়েলের বক্তব্য স্ট্রং সত্য, কিন্তু সাউথ আফ্রিকা এক্ষেত্রে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে। সাউথ আফ্রিকা ইরানকে জানায়নি যে তারা মামলা করবে। কিন্তু তারা ডিসপিউটটা দেখানোর জন্য ইসরাইলকে গত একমাসে বেশ কয়েকটা চিঠি দিয়েছে যে তোমরা গণহত্যা চালাচ্ছ, সেটা বন্ধ করো।

ইসরায়েল তাদের কথা শোনেনি। তারা কিছু চিঠির উত্তরই দেয়নি। বা দিলেও বলেছে যে তারা গণহত্যা চালাচ্ছে না। ফলে এখন সাউথ আফ্রিকা বলছে যে এই যে তারা বলেছে গণহত্যা বন্ধ করতে, ইসরায়েল সেটা মারেনি, এটাই হচ্ছে ডিসপিউট। এবং এ জন্যই তারা আদালতে এসেছে। ফলে 972 ম্যাগাজিনের মতে এক্ষেত্রেও সাউথ আফ্রিকা এগিয়ে আছে।

সুতরাং আদালত যদি মোটামুটি নিরপেক্ষ হয়, আইনজীবীরা যদি অনেস্ট হয়, তাহলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনদের পক্ষে একটা রায় আসার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই আদালত কি আসলেই নিরপেক্ষ?

আইসিজে কি নিরপেক্ষ?

আইসিজে আসলে নিরপেক্ষ কিনা, এর উত্তরটা একটু জটিল। কারণ অফিশিয়ালি আইসিজের বিচারকরা নিরপেক্ষ। তারা কোনো দেশের পলিটিক্যাল অ্যাপয়েন্টি না।জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিলে আমেরিকা যখন কোনো প্রতিনিধি পাঠায়, সে হচ্ছে সরাসরি পলিটিক্যাল অ্যাপয়েন্টি। সে সরাসরি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে প্রতিনিধিত্ব করে। ফলে প্রেসিডেন্ট যদি নির্দেশ দেয়- তুমি ভেটো দিবে, তাহলে সে ভেটোই দিবে।

কিন্তু বিচারকদের ক্ষেত্রে এটা পুরোপুরি সত্য না। কারণ বিচারকদেরকে এভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় না। জাতিসংঘের প্রতিনিধি যদি নির্দেশ অমান্য করে উল্টো ভোট দেয়, তাহলে তার চাকরি চলে যাবে। কিন্তু বিচারকদের ক্ষেত্রে সেরকম কিছু হবে না।
ফলে বিচারকরা তাদের নিজস্ব বিচার বুদ্ধি অনুযায়ী বিচার করতে পারার কথা।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বিচারকদের চিন্তা ভাবনার উপর তাদের কালচার, তাদের জিও পলিটিক্যাল লোকেশন, তাদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বেশ ভালোভাবেই প্রভাব বিস্তার করে।যেমন ইসরাইলের একজন বিচারক, তিনি যতই অনেস্ট হন, শেষ পর্যন্ত তিনি ইসরায়েলের “রাইট টু ডিফেন্ড ইটসেলফ”কেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিবেন।

একই কথা আমেরিকানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, জার্মান কিংবা অস্ট্রেলিয়ানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ব্যতিক্রম অবশ্যই থাকতে পারে। কোনো বিচারক যদি অত্যন্ত সৎ হন এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থের কথা চিন্তা না করে মানবতার কথা চিন্তা করেন, তাহলে তিনি হয়তো সব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে সঠিক রায়টাই দিতে পারেন। কিন্তু যেহেতু পরিবেশ এবং কালচার একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং যেহেতু বিচারকরা সরাসরি পলিটিকাল অ্যাপয়েন্টি না হলেও তাদেরকে সেই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়, তাই সাধারণত বিচারকরা তাদের রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির পক্ষেই রায় দেন।

কারণ আমেরিকা প্রাথমিকভাবে যে বিচারককে আইসিজের জন্য মনোনীত করবে, সেই বিচারক তো আমেরিকার মূল্যবোধই ধারণ করবেন। তার তো ইসলামিক মূল্যবোধ বা সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করার কোনো সম্ভাবনা নেই। এরকম উদাহরণ বিভিন্ন সময় দেখা গেছে। মায়ানমারের বিপক্ষে যে মামলাটা হয়েছিল, তার প্রাথমিক রায়ে চীনা এবং রাশিয়ান বিচারক অন্য সব বিচারকের বিপক্ষে গিয়ে মায়ানমারের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন।

এবং এক্ষেত্রে মিডল লিস্ট আই তাদের একটা রিপোর্টে একটা রিসার্চ পেপার কোট করেছে। আমি রিসার্চ পেপারটার লিংক পাইনি। তারা যে লিঙ্কটা দিয়েছে সেটা কাজ করছে না। কিন্তু তাদের দাবি অনুযায়ী, ঐ গবেষণায় দেখা গেছে যে এই বিচারকরা মোটামুটি ৯০% ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের রাষ্ট্রের পক্ষেই ভোট দেন। সেজন্যই এই আদালত থেকে আসলে খুব বৈপ্লবিক কোনো রায় আশা করা আমাদের উচিত হবে না।

আমার সবগুলো বই


মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহার স্পাই স্টোরিজ বইয়ের প্রচ্ছদ
মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহার স্পাই স্টোরিজ ২ বইয়ের প্রচ্ছদ
মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহার গল্পগুলো সিরিয়ার বইয়ের প্রচ্ছদ

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলার রায় কী হতে পারে?

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সঙ্কটে কোন দেশের ফরেন পলিসি কীরকম, সেটা যেহেতু আমরা জানি, তাই ধারণা করা যায় ১৫ জন বিচারকের মধ্যে এই দেশগুলোর বিচারকরা ইসরায়েলের পক্ষে ভোট দিবে: আমেরিকা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান এবং সম্ভবত উগান্ডা।

ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিবে ব্রাজিল, লেবানন, মরক্কো, সোমালিয়া এবং সম্ভবত জ্যামাইকা ও স্লোভাকিয়া, যদি না আমেরিকা চাপ দিয়ে তাদেরকে হাত করে ফেলে।

বাকি রইল চীন, রাশিয়া এবং ফ্রান্স। এখন আপনার হয়তো মনে হতে পারে, চীন এবং রাশিয়া ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ফ্রান্স ইসরায়েলের পক্ষে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটা বিপরীত।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে অলরেডি আইসিজে-তে মামলা আছে। ফলে এটাকে ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা রাশিয়ার স্বার্থের বিরুদ্ধে। একই কথা চীনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বরং এদের মধ্যে ফ্রান্সের স্টেকই কম। এবং ফ্রান্সের বিচারক যদি নিজেই বায়াসড না হন, তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার উপর চাপ প্রয়োগ করে তাকে দিয়ে কোনো এক পক্ষে ভোট দেওয়ানোর সম্ভাবনা চীন এবং রাশিয়ার চেয়ে কম।

কাজেই বিচারকরা যদি অনেস্ট না হন, যদি নিজ নিজ রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করেন, তাহলে সাউথ আফ্রিকার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা যতই স্ট্রং হোক, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে খুব বেশি শক্ত কোনো রায় আসার সম্ভাবনা কম। রায় কিছু একটা সম আসবে, কিন্তু সেটা হয়তো হবে সফট ধরনের কিছু একটা।

আমরা যদি আশা করি যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আদালত বৈপ্লবিক কোনো রায় দিবে, সেটা একটু বেশি আশা হয়ে যাবে। কিন্তু আবার সাউথ আফ্রিকার মামলাটা এত স্ট্রং, সেটাকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করলেও আদালতের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। ফলে রায়টা মাঝামাঝি কিছু একটা হতে পারে।

রায়ে হয়তো ইসরাইলের গণহত্যামূলক কার্যক্রমের কিছু সমালোচনা করা হতে পারে, তাদেরকে সামরিক অভিযান সীমিত করতে বলা হতে পারে, কিছু পরিমাণ ত্রাণ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হতে পারে এবং তাদের যেসব নেতারা গণহত্যার উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে হয়তো ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।

যে রায়ই আসুক, ফিলিস্তিনিদের কোনো লাভ হবে?

এটা মোটামুটি নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া যায়, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলার এই রায়টা যদি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যায়, যদি তাদেরকে গণহত্যাকারী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়, যদি তাদেরকে গাযা ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়, ইসরায়েল সেটা ইগনোর করবে।

ইসরাইল এর আগেও এরকম একটা রায় ইগনোর করেছিল। ২০০৪ সালে এই আইসিজে-ই রায় দিয়েছিল যে ইসরাইল সে সময় যে অ্যাপার্থায়েড ওয়াল তৈরি করছিল, সেটা অবৈধ। তারা সেটা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ইসরাইল সেটা মানেনি। কাজেই এবারের রায়ও তারা খুব সম্ভবত মানবে না।

কিন্তু এটাই একমাত্র কথা না। এই মামলার রায়ের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে খুব বেশি প্রভাব লক্ষ্য করা না গেলেও দীর্ঘমেয়াদে এই রায় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কাজ করবে।

অনেকেই মনে করেন যে এই মামলার রায়ে শেষ পর্যন্ত কিছুই হবে না। কিন্তু আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে ফিলিস্তিন যুদ্ধ ৭৫ বছর ধরে চলছে। আমরা যদি আশা করি যে আদালতের কোনো একটা রায়ে ম্যাজিকের মতো এই সংকটের সমাধান হয়ে যাবে, এটা তো আসলে বোকামি হবে। আমাদেরকে দেখতে হবে ধাপে ধাপে আসলে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে কি না।

যদি সামান্য কিছু অগ্রগতিও হয়, সেটাও কিন্তু গণহত্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা, দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকা ফিলিস্তিনিদের জন্য অনেক কিছু। আদালত যদি শুধুমাত্র অপারেশন লিমিটেড করতে বলে, সেটাও এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনদের জন্য অনেক।

এর বাইরে আদালত যদি শেষ পর্যন্ত রায় দেয় যে ইসরায়েল একটা গণহত্যাকারী রাষ্ট্র অথবা ইসরাইল গণহত্যার সাথে জড়িত, সেটা ইসরায়েল মানবে না সত্য, আমেরিকাও তাদের পক্ষে থাকবে সত্য, কিন্তু এর বাইরে অন্যান্য যেসব ইউরোপীয় রাষ্ট্র আছে, তাদের উপরেও সেটার একটা প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে। কারণ ইউরোপের অনেকগুলো রাষ্ট্রে, বিশেষ করে ইংল্যান্ডে, জার্মানিতে আইন আছে যে তারা গণহত্যাকারী কোন রাষ্ট্রকে সাহায্য করতে পারবে না, তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে পারবে না।

সুতরাং এরকম একটা রায় যদি আসে যে ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে, তখন দেখা যাবে যে ব্রিটেনের কোনো একজন আইনজীবীই তাদের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বসেছে যে ইসরাইল একটা গণহত্যাকারী রাষ্ট্র এবং সেটা আন্তর্জাতিক আদালত থেকে প্রমাণিত হয়ে এসেছে, তারপরও তুমি কেন তার কাছে অস্ত্র বিক্রি করছ?

অর্থাৎ এই ধরনের একটা রায়ের ফলে আমরা ফিলিস্তিন সঙ্কটের সমাধান হয়তো দেখতে পারব না, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের একটা রায় আসলে সেটা ফিলিস্তিনের জন্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুসলমানদের জন্য বা অত্যাচারিতদের জন্য উপকার ছাড়া কোনো অপকার বয়ে আনবে না।

ইনফ্যাক্ট এই মামলার রায় আসার আগেই আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসরাইলি নেতারা তাদের সুর চেঞ্জ করে ফেলেছে। তারা বলছে- আমাদের অমুক নেতা যে বক্তব্য দিয়েছিল সেটা আসলে সে মিন করেনি, সেটা আসলে কথার কথা ছিল। প্রথম দিক থেকে তারা যেরকম একদম প্রকাশ্যে গণহত্যার পক্ষে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছিল, সেটা তারা এখন অস্বীকার করতে চাচ্ছে, ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে।

তাদের এই বক্তব্যগুলো কিন্তু ফিলিস্তিনিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যেসব সৈন্যরা গাযায় প্রবেশ করেছে, তারা যদি দেখে যে তাদের নেতারা সরাসরি গণহত্যার পক্ষে উস্কানি দিচ্ছে, তখন তারা যে ধরনের উৎসাহ নিয়ে গণহত্যা চালাবে, বিপরীতে তারা যদি দেখতে পায় যে তাদের নেতারা ভয় পাচ্ছে, আন্তর্জাতিক চাপকে বিবেচনায় নিচ্ছে, গণহত্যার পক্ষে দেওয়া বক্তব্য ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে, তখন সেই ভয় তাদের মধ্যেও সঞ্চারিত হবে। এবং এরফলে আগের মতো গণহত্যা চালানোর আগে তারা কয়েকবার চিন্তা করবে।

ফলে যেটা বললাম যে এই মামলার ফলে ড্রামাটিক কোনো পরিবর্তন হয়তো আসবে না, ম্যাজিকের মতো সব গণহত্যা বন্ধ হয়ে যাবে না, কিন্তু কিছুটা পরিবর্তন যে আসবে, সেটা আমরা আশা করতেই পারি। এবং সেটাই হবে এই আদালতের কাছ থেকে আমাদের চাওয়া।

আমার বিশ্লেষণমূলক লেখা যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে আমার এই লেখাটাও পড়ে দেখতে পারেন:

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *