ভদ্রমহিলার নাম মারিয়াম নেওয়াজ। আর ছবিতে যেই ফন্টটা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটার নাম Calibri। পাকিস্তানের রাজনীতির আজকের যেই অবস্থা, তার পেছনে মারিয়ামের এবং এই ক্যালিব্রি ফন্টের বিশাল একটা ভূমিকা আছে।
২০১৬ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতাদের দুর্নীতির প্রমাণ সম্বলিত সিক্রেট ডকুমেন্ট “পানামা পেপার্স” ফাঁস হয়। সেখানে উঠে আসে মারিয়াম এবং তার দুই ভাইয়ের নামও। ফাঁস হওয়া ডকুমেন্ট অনুযায়ী, নওয়াজ শরিফের ছেলে-মেয়েরা বেনামে বিভিন্ন অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে লন্ডনে কিছু বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় করেছিলেন, যেন ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া যায়।
এছাড়াও পরবর্তীতে তদন্তে উঠে আসে যে, নওয়াজ শরিফ নিজেও তার ছেলের নামে থাকা এরকম একটি দুবাই ভিত্তিক ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। নির্বাচনের পূর্বে সকল সম্পত্তির তালিকা দেওয়ার যে বিধান আছে, নওয়াজ শরিফ সেখানে এসব সম্পত্তির কথা গোপন করে যান।
পানামা পেপার্সে শরিফ পরিবারের নাম আসার পরপরই পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো আন্দোলনে সক্রিয় হয়। ইমরান খানের তেহরিক-ই ইনসাফ এবং আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল সুপ্রীম কোর্টে পিটিশন দাখিল করে এবং অবিলম্বে এই অভিযোগের তদন্ত এবং বিচার দাবি করে।
দুর্নীতির তদন্ত চলাকালে নওয়াজ শরিফের মেয়ে মারিয়াম শরিফ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য কোর্টে একটি ডকুমেন্ট দাখিল করেন। সে ডকুমেন্টটি দিয়ে তার প্রমাণ করার উদ্দেশ্য ছিল, যে অফশোর কোম্পানিটি লন্ডনের ঐ বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টগুলো ক্রয় করেছিল, মারিয়াম তার মালিক নন, শুধু ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্য মাত্র। ডকুমেন্টটি সত্য প্রমাণিত হলে হয়তো ফলাফল ভিন্ন হতো, কিন্তু সমস্যা বাধায় একটি ফন্ট – Calibri।
তদন্ত কর্মকর্তারা ডকুমেন্টটি জাল কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য লন্ডনের র্যাডলি ফরেনসিক ডকুমেন্ট ল্যাবরেটরিতে প্রেরণ করেন। ল্যাবের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডকুমেন্টের তারিখ এবং সিগনেচার অনুযায়ী এটি ২০০৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ডকুমেন্টটিতে যে ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি হচ্ছে মাইক্রোসফট কোম্পানীর বিখ্যাত ফন্ট ক্যালিব্রি, যেটি ২০০৭ সালের আগে মুক্তিই পায়নি! কাজেই ল্যাব সিদ্ধান্ত দেয় যে, ডকুমেন্টটি জাল। ফলে শরিফ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং সেই সাথে কোর্টে মিথ্যা তথ্য প্রদানের অভিযোগ আরও পাকাপোক্ত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিমের তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করে। রায়ে বলা হয়, নওয়াজ শরিফ পার্লামেন্ট এবং বিচার বিভাগের কাছে ‘অবিশ্বস্ত’ এবং ‘অসৎ’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। সেজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই ‘সৎ’ এবং ‘বিশ্বস্ত’ হতে হয়।
নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় এবং তার প্রধানমন্ত্রীত্ব বাতিল হওয়ার পরই ইমরান খানের ক্ষমতায় আসার পথ আরও পরিষ্কার হয়। অল দ্য ক্রেডিট গোজ টু Calibri ফন্ট।
এখন সেই ইমরান খানকে সরিয়ে মারিয়ামরা আবারও ক্ষমতায় এসেছেন। আশা করি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে তিনি ফন্ট ব্যবহারে আরও সতর্ক হবেন। তিনি চাইলে Times New Roman ব্যবহার করতে পারেন। এটা বেশ পুরানো ফন্ট। ১৯৩১ সালের। আশা করা যায় এতে আর কোনো জটিলতা সৃষ্টি হবে না।