-
দেশত্যাগে মরিয়া আফগানরা: তালেবানভীতি, নাকি সুবিধাবাদিতা?
নো ডিয়ার মিডিয়া অ্যান্ড সেক্যুলার ভাই-বেরাদার, আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য এয়ারপোর্টে ভিড় জমানো মরিয়া মানুষেরা “আফগান জনগণ” না। ওরা আফগান জনগণের খুবই খুবই খুবই ক্ষুদ্র একটা অংশ। এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি মানুষ রাস্তায় নেমে তালেবানকে স্বাগত জানাচ্ছে।
মূল আফগান জনগণ তারাই, যারা তালেবানকে কতটুকু সমর্থন করে সেটা পরে বোঝা যাবে, কিন্তু তারা অ্যাটলিস্ট আমেরিকা এবং তার পাপেট কাবুল গভর্নমেন্টের চেয়ে তালেবানের টেকওভারকে প্রেফার করে। এবং পুরো দেশজুড়ে অন্য কোথাও তারা এরকম উদ্বিগ্ন হয়ে পালানোর চেষ্টা করেনি, মরিয়া হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেনি বলেই তালেবানের পক্ষে বিনাযুদ্ধে, শান্তিপূর্ণভাবে মাত্র এক সপ্তায় পুরো দেশ জয় করা সম্ভব হয়েছে।
-
আফগান যুদ্ধে আমেরিকা ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু ব্যবসায়ীরা লাভবান
আফগানিস্তানে যে তাসের ঘরের মতো একের পর এলাকার পতন ঘটছে, এরকম ঘটনা কিন্তু একেবারেই নতুন না। অনেকেরই মনে থাকার কথা, ২০১৩-১৪ সালে ইরাকেও হুবহু একই ঘটনা ঘটেছিল।
ইরাকেও মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার পর আইসিস যখন আক্রমণ শুরু করে, তখন ম্যাজিকের মতো একের পর এক শহর তাদের হস্তগত হতে থাকে। লক্ষাধিক সৈন্যের মার্কিন-প্রশিক্ষিত ইরাকি সেনাবাহিনী কয়েকশো আইসিস জঙ্গির হাতে পরাজিত হয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। আমেরিকার দেওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র, সাঁজোয়া যান সব আইসিসের হাতে পড়ে। ফলে তারা আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
-
কেমন হবে বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি? (প্রথম আলোয় প্রকাশিত)
মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ রাষ্ট্রেই গণতন্ত্র নেই। কিন্তু তারপরেও প্রতি চার বছর পরপর আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সাথে সাথে তাদের ভাগ্যও পরিবর্তিত হয়। ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাই প্রশ্ন উঠছে, তার এ বিজয়ের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ভাগ্য কতটুকু পরিবর্তিত হবে? তিনি কি ট্রাম্পের নীতির বিপরীতে গিয়ে ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটাবেন? ওবামার নীতিতে ফেরত গিয়ে ইরানের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবেন, একাধিক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আন্দোলনকে সমর্থন এবং সহায়তা দিয়ে নতুন নতুন গৃহযুদ্ধ সৃষ্টিতে অবদান রাখবেন? নাকি মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে তিনি অনুসরণ করবেন এই দুয়ের মাঝামাঝি কোনো নীতি?
-
তালেবান-আমেরিকা শান্তিচুক্তি: আফগানিস্তানে কি শান্তি আসছে?
তালেবান-আমেরিকার শান্তিচুক্তি নিঃসন্দেহে তালেবানদের জন্য এবং আফগানিস্তানের জন্য বিশাল একটা অর্জন। কিন্তু শান্তির পথ এখনও বহুদূর। শান্তিচুক্তিটা গুরুত্বপূর্ণ হলেও আরও বৃহত্তর প্রক্ষাপটে এটা খুবই ছোটো একটা স্টেপ।
এই শান্তিচুক্তিকে অনেকেই আমেরিকার জন্য বড় ধরনের পরাজয় হিসেবে দেখছে। এটা একদিক থেকে সত্য। যে তালেবানকে আমেরিকা ক্ষমতাচ্যুত করেছিল, যাদেরকে সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে নির্মূল করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিল, শেষপর্যন্ত তাদের সাথে, তাদের শর্ত অনুযায়ীই শান্তিচুক্তি করতে হয়েছে – এটা এক ধরনের পরাজয় বৈকি। কিন্তু তালেবান জিতে গেছে, আমেরিকা শেষ হয়ে গেছে বলে যে আবেগী উচ্ছ্বাস সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে, তাতেও একটু সমস্যা আছে।
-
কাসেম সোলায়মানির মৃত্যুতে ইসলামপন্থীদের শিয়া-সুন্নি বিষয়ক প্রতিক্রিয়া
কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা বা আঘাত করা হলে আমাদের প্রতিক্রিয়া কী রকম হওয়া উচিত, সেটা নিয়ে ইন্টারেস্টিং একটা ক্যাচাল বেঁধেছিল বছর দেড়েক আগে। ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার , মেজর জেনারেল কাসেম সোলায়মানির মৃত্যুর পর সেটা আবার মনে পড়ে গেল।
মাহমুদুর রহমানকে ছাত্রলীগ/যুবলীগের সোনার ছেলেরা পেটানোর পর এমন অনেকেই তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছিল, যারা আদর্শিকভাবে মাহমুদুর রহমানের সাথে অনেক বিষয়েই একমত না। সুতরাং তাদের প্রতিবাদের ভাষা ছিল মোটামুটি এরকম – “মাহমুদুর রহমানের সাথে আমি অনেক ব্যাপারেই একমত না, কিন্তু আজকে যে ঘটনাটা ঘটেছে, সেটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না।”
-
ইরান ক্যাবল: ইরাকে ইরানি গোয়েন্দাদের গোপন কার্যক্রমের তথ্য
এ বছরের মাঝ-অক্টোবরে বাগদাদজুড়ে যখন অস্থিরতার উত্তাল হাওয়া বইছিল, তখন সবার অলক্ষ্যে নীরবে শহরে প্রবেশ করেন এক পরিচিত ব্যক্তি। সে সময় কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইরাকের রাজধানী বাগদাদ ছিল অবরুদ্ধ। আন্দোলনকারীরা রাস্তা দখল করে মিছিল করছিল দুর্নীতির অবসান আর প্রধানমন্ত্রী আদিল আব্দুল মাহদির পদত্যাগের দাবিতে। বিশেষত তারা নিন্দা জানাচ্ছিল ইরাকি রাজনীতিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইরানের অস্বাভাবিক মাত্রার হস্তক্ষেপের। ইরানের বিরুদ্ধে তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছিল ইরানি পতাকা পোড়ানো এবং ইরানি কন্সুলেট আক্রমণ করার মধ্য দিয়ে।
পরিচিত ব্যক্তিটি সেখানে গিয়েছিলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। কিন্তু সেখানে তার উপস্থিতিই ছিল আন্দোলনকারীদের প্রধান ক্ষোভের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। কারণ তিনি ছিলেন মেজর জেনারেল কাসেম সোলায়মানি, ইরানের প্রভাবশালী কুদস ফোর্সের প্রধান। এবং তিনি সেখানে গিয়েছিলেন ইরাকি পার্লামেন্টের এক মিত্রের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী আব্দুল মাহদিকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে কাজ করতে।
-
অ্যান্টি-আমেরিকান নিউজের পরিমাণ বেশি কেন?
পত্রপত্রিকায় বা ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা দেখা যায় আমেরিকার বিরুদ্ধে। এর একটা কারণ তো পরিষ্কার – আমেরিকা আসলেই বিশ্বের নাম্বার ওয়ান কালপ্রিট। তা না হলে তারা তাদের সুপার পাওয়ার মেইন্টেইন করতে পারত না।
কিন্তু আমেরিকা বিরোধিতার এটাই একমাত্র কারণ না। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, পাবলিক আমেরিকাবিরোধিতা বেশি খায়। সেজন্যই দেখা যায় যারা আসলে আমেরিকাবিরোধী না, বা ইনফ্যাক্ট যারা নিজেরাই আমেরিকার পাপেট, তারাও প্রকাশ্যে প্রচণ্ড আমেরিকাবিরোধী সাজে এবং পাবলিকের মন জয় করার জন্য অন্যদেরকে আমেরিকাপন্থী, বা যেকোনো অপরাধকে আমেরিকার ষড়যন্ত্র হিসেবে দাবি করতে থাকে।
উদাহরণ প্রচুর পাওয়া যাবে। মিসরের উদাহরণটা বিবেচনা করা যায়। প্রেসিডেন্ট মুরসিকে অবৈধভাবে সরিয়ে জেনারেল সিসি ক্ষমতায় বসেছিল আমেরিকার নীরব সমর্থন নিয়েই। না, আমেরিকা মেইন প্লেয়ার ছিল না, কিন্তু তারা ক্যু হবে জেনেও কোনো বাধা দেয়নি।
犀利士 e-1333″ class=”more-link”>(more…) -
গাদ্দাফিকে উৎখাত করতে গিয়ে আমেরিকা যেভাবে ভজঘট পাকিয়ে ফেলেছিল!
আশির দশকে আমেরিকা গাদ্দাফিকে হত্যার আয়োজন করছিল।
শুধু আমেরিকা বললে ভুল হবে। সেসময় বিভিন্ন দেশের সাথে গাদ্দাফির সম্পর্ক খারাপ ছিল। সিআইএর তথ্য অনুযায়ী আমেরিকা ছাড়াও ফ্রান্স, চাদ, মিসর, সুদান, মরক্কো, সৌদি আরব, এমনকি ইরাক পর্যন্ত গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আগ্রহী বিদ্রোহীদেরকে সাহায্য করে আসছিল।
গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকম কারণ ছিল। ফ্রান্স এবং আমেরিকার প্রধান কারণ ছিল চাদের উপর গাদ্দাফির হস্তক্ষেপ। চাদ ছিল ফ্রান্সের কলোনি। স্বাধীনতার পরেও সেখানে ফ্রান্সের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। কিন্তু গাদ্দাফি যখন ১৯৭৮ সালে চাদের একটি অংশকে লিবিয়ার ভূখণ্ড দাবি করে সেখানে সেনাবাহিনী পাঠান, তখনই প্রধানত ফ্রান্স এবং সেই সাথে আমেরিকা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সম্ভাবনা বিচরণ করতে শুরু করে।
-
আমেরিকার প্রথম রেজিম চেঞ্জ: হাওয়াইয়ের রানিকে ক্ষমতাচ্যুত করার কাহিনী
রাজা কালাকাউয়ার মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসার দুই বছরের মধ্যেই তার বোন, রানি লিলিউকালানি সিদ্ধান্ত নেন, স্বাধীন রাজ্য হাওয়াইয়ের জনগণের স্বার্থে তিনি নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন করবেন। উড়ে এসে জুড়ে বসা আমেরিকান এবং অন্যান্য ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের ক্ষমতা খর্বিত করে নতুন সংবিধানে তিনি ভোট দেওয়ার অধিকার দিবেন শুধুমাত্র হাওয়াইয়ান নাগরিকদেরকে।
রানি লিলিউকালানির এ সিদ্ধান্তটি ছিল শতাধিক বছর ধরে হাওয়াইয়ের অর্থনীতি এবং রাজনীতিকে কুক্ষিগত করে রাখা শ্বেতাঙ্গ এলিট সম্প্রদায়ের জন্য এক অশনি সংকেত। এই এলিট সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশই ছিল আমেরিকান বংশোদ্ভূত। কাজেই সেদিন রাতেই তাদের একটি দল গিয়ে হাজির হয় হাওয়াইয়ে নিযুক্ত আমেরিকান দূত, জন এল. স্টিভেনসের বাড়িতে।
স্টিভেন্সের বাসায় বসে তারা তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে – হাওয়াইয়ে যদি আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করতে হয়, তাহলে এখন তাদের একটাই করণীয় আছে। তারা রানি লিলিউকালানিকে উৎখাত করে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে টিকে থাকা হাওয়াইকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একীভূত করে নেবে। আর রেজিম চেঞ্জ তথা সরকার পরিবর্তনের পুরো ব্যাপারটিতে স্টিভেন্সের মাধ্যমে পেছন থেকে পূর্ণ সহায়তা দিয়ে যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সেনাবাহিনী।