অনুবাদ
-
ফিলিস্তিনের গল্প: দ্য স্টোরি অফ দ্য ল্যান্ড
মূল: সারাহ আলি, ভাষান্তর: মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা
আমি তার অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকালাম, এবং সেখানে সুখের মতো কিছু একটার দেখা পেয়ে আমি হাসলাম। যে মানুষটাকে আমি সব সময় বাবা হিসেবে জেনে এসেছি, আজ তিনি ফিরে এসেছেন।
আজ তাকে আর সেই অপরিচিত লোকটার মতো দেখাচ্ছে না, যাকে গত তিন বছর ধরে আমি পুরোপুরি চিনতে পারিনি। তাকে আর সেই ভুলোমনের স্থির মূর্তির মতো মনে হচ্ছে না, যিনি সব সময় দেয়ালের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন এবং বাড়ির কেউ যখন তাকে সম্বোধন করত, তখন অনাগ্রহের সাথে মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেন।
তিনি এখন এখানেই আছেন। তিনি এখানেই উপস্থিত আছেন। এবং আমি যখন আমার ভালো ফলাফল নিয়ে বড়াই করতে লাগলাম, তখন তিনি সত্যি সত্যিই সেটা শুনতে লাগলেন।
-
ওরা আমাদের বিপ্লব কেড়ে নিয়েছে
ওরা আমাদেরকে ঘড়ি দিয়ে সময় কেড়ে নিয়েছে
ওরা আমাদেরকে জুতা দিয়ে পথ কেড়ে নিয়েছেওরা আমাদেরকে পার্লামেন্ট দিয়ে স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে
ওরা আমাদেরকে দোলনা দিয়ে উতসব কেড়ে নিয়েছেওরা আমাদেরকে গুঁড়া দুধ দিয়ে শৈশব কেড়ে নিয়েছে
ওরা আমাদেরকে সার দিয়ে বসন্ত কেড়ে নিয়েছেওরা আমাদেরকে প্রহরী আর তালা দিয়ে নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছে
ওরা আমাদেরকে বিদ্রোহী দিয়ে আমাদের বিপ্লব কেড়ে নিয়েছে।—- সিরিয়ান কবি মুহাম্মাদ আল-মাগুত
-
দ্য অ্যাভেঞ্জার: লকারবি বম্বমেকারের সন্ধানে
লকারবি ইনভেস্টিগেশন নিয়ে নিউইয়র্কারের একটা ফ্যাসিনেটিং লংফর্ম আর্টিকেল পড়লাম – The Avenger। এফবিআই যা পারেনি, নিহত এক ব্যক্তির ভাই নিজস্ব অবসেশন থেকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে কীভাবে তা সম্ভব করে দেখিয়েছে, অর্থাৎ লকারবির বম্ব মেকারকে খুঁজে বের করেছে, সেই কাহিনী। মাইন্ডব্লোয়িং একটা পিস।
লকারবি বম্বিংয়ের ঘটনাটা ১৯৮৮ সালের। সে বছর স্কটল্যান্ডের লকারবি শহরের আকাশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যান অ্যাম ফ্লাইট ১০৩-এর লাগেজ কম্পার্টমেন্টে রাখা একটি টাইম বোমা বিস্ফোরিত হয়। ফলে ২৫৯ আরোহীর সবাই নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল মার্কিন নাগরিক। এই ঘটনাটাই লকারবি বম্বিং নামে পরিচিত। এবং এটা ছিল তখন পর্যন্ত মার্কিন বেসামরিক নাগরিকদেরকে লক্ষ্য করে সংঘটিত সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলাগুলোর মধ্যে একটা।
-
প্রত্যাবর্তন – হিশাম মাতার
২০১১ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্তও আমি (হিশাম মাতার) ভাবতে পারিনি, জীবনে কখনও লিবিয়ায় ফিরে যেতে পারব।
সে সময় আমি সবেমাত্র লন্ডন ছেড়ে নিউইয়র্কে গিয়ে উঠেছিলাম। আমার বাবা-মা প্রথম এই শহরটিতে এসেছিলেন ১৯৭০ সালের বসন্তকালে, যখন আমার বাবাকে জাতিসংঘে লিবিয়া মিশনের প্রথম সচিব হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। সেই শরৎকালেই আমার জন্ম।
তিন বছর পর, ১৯৭৩ সালে আমরা ত্রিপোলিতে ফিরে যাই। এরপরেও আমি চার কি পাঁচবার নিউইয়র্কে গিয়েছিলাম, কিন্তু প্রতিবারই সংক্ষিপ্ত সফরে। কাজেই ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে যদিও আমি আমার জন্মস্থানেই গিয়ে উঠেছিলাম, কিন্তু এটি ছিল আমার কাছে প্রায় সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি শহর।
-
ভাইরাসের নামকরণের রাজনীতি
চীনের উহান থেকে যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে, এখন পর্যন্ত তার কোনো আনুষ্ঠানিক নাম নেই। কেন নেই? কারণ ভাইরাসের নামকরণের ব্যাপারটা আসলে একটু জটিল। এ ধরনের প্রাণঘাতী ভাইরাসের নাম যা খুশি তা রেখে দেওয়া যায় না। অপরিকল্পিত নামকরণের প্রভাব অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদে খোদ ভাইরাসের চেয়েও বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সাময়িকভাবে ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয়েছে 2019-nCoV, অর্থাৎ নভেল করোনা ভাইরাস ২০১৯। এবং এ কারণে গণমাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাসটি শুধুমাত্র করোনা ভাইরাস নামেই পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু করোনা কিংবা নভেল করোনা ২০১৯ – কোনোটিই অর্থবহ, পূর্ণাঙ্গ নাম না। করোনা ভাইরাস বলতে সুনির্দিষ্ট কিছুই বোঝা যায় না। এটি এই ধরনের ভাইরাসের সাধারণ নাম। এর আগের সার্স, মার্স-সহ অনেকগুলো ভাইরাসও ছিল করোনা ভাইরাস।
-
কর্দোভার খ্রিস্টান শহিদরা: ডঃ ইয়াসির ক্বাদি
বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ডঃ ইয়াসির ক্বাদি আজকে অদ্ভুত এবং চমৎকার একটা বিষয় নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন – “ক্রিশ্চিয়ান মার্টায়ার্স অফ কর্দোভা”। এই লেখাটা তারই অনুবাদ।
৮৫০ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকশো বছর পর্যন্ত আন্দালুসে এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটছিল। খ্রিস্ট ধর্মগুরুদের অনেকে সে সময় শহরের কেন্দ্রে অথবা মসজিদের সামনে গিয়ে উপস্থিত হতো, এরপর আল্লাহ্কে বা মুহাম্মাদ (সা)-কে প্রকাশ্যে জঘন্য ভাষায় গালাগালি করত।
তারা জানত এই ধরনের গালাগালির শাস্তি কারাগার অথবা মৃত্যুদণ্ড, কিন্তু তারপরেও তারা এই কাজ করত। ধারণা করা হয় সে সময় এরকম কাজের জন্য প্রায় ৫০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, বা তাদের ভাষায় এরকম ৫০ জন খ্রিস্টান ধর্মগুরু “শহিদ” হয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমনিতে যারা সমাজের সবচেয়ে জ্ঞানী এবং সম্মানিত (তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে) হিসেবে বিবেচিত, কেন তারা এরকম অদ্ভুত আচরণ করত?
-
ইসরায়েলের গোপন অপারেশনগুলো: প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ
১৯৪৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। জেরুজালেমের রুমানিয়ান চার্চের ব্রিটিশ ম্যাণ্ডেটের প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে এলেন ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেণ্টের (সিআইডি) বিশেষ ইহুদী বিভাগের কমাণ্ডার, টম উইলকিন। তার গন্তব্য ছিল সিআইডির নিকটবর্তী রাশিয়ান কম্পাউণ্ড, যেখানে ইহুদী গুপ্ত সংস্থাগুলোর সদস্যদেরকে আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো।
অন্য সব সময়ের মতো সেদিনও উইলকিন সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার আগেই তিনি উঁকি মেরে দেখে নিয়েছিলেন রাস্তার দু’পাশ, এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে স্পর্শ করে রেখেছিলেন তার রিভলভারটি। কিন্তু তার জানার কথা ছিল না, একটু সামনের সেইন্ট জর্জ স্ট্রিটের এক অন্ধকার সরু গলির ভেতর তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওঁৎ পেতে ছিল কুখ্যাত ইহুদী সন্ত্রাসী সংগঠন ‘লেহি‘র এক সদস্য, ডেভিড শমরন।
লেহির অপারেশন বিভাগের প্রধান ইতজাক শামিরের নির্দেশে ডেভিড শমরন এবং ইয়াকভ বানাই টম উইলকিনের উপর হামলার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছিলেন। জেরুজালেমের রুমানিয়ান চার্চের বাসভবনে উইলকিনের অবস্থান নিশ্চিত করার পর তারা তাদের অভিযান শুরু করেন।
-
আমেরিকার প্রথম রেজিম চেঞ্জ: হাওয়াইয়ের রানিকে ক্ষমতাচ্যুত করার কাহিনী
রাজা কালাকাউয়ার মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসার দুই বছরের মধ্যেই তার বোন, রানি লিলিউকালানি সিদ্ধান্ত নেন, স্বাধীন রাজ্য হাওয়াইয়ের জনগণের স্বার্থে তিনি নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন করবেন। উড়ে এসে জুড়ে বসা আমেরিকান এবং অন্যান্য ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের ক্ষমতা খর্বিত করে নতুন সংবিধানে তিনি ভোট দেওয়ার অধিকার দিবেন শুধুমাত্র হাওয়াইয়ান নাগরিকদেরকে।
রানি লিলিউকালানির এ সিদ্ধান্তটি ছিল শতাধিক বছর ধরে হাওয়াইয়ের অর্থনীতি এবং রাজনীতিকে কুক্ষিগত করে রাখা শ্বেতাঙ্গ এলিট সম্প্রদায়ের জন্য এক অশনি সংকেত। এই এলিট সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশই ছিল আমেরিকান বংশোদ্ভূত। কাজেই সেদিন রাতেই তাদের একটি দল গিয়ে হাজির হয় হাওয়াইয়ে নিযুক্ত আমেরিকান দূত, জন এল. স্টিভেনসের বাড়িতে।
স্টিভেন্সের বাসায় বসে তারা তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে – হাওয়াইয়ে যদি আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করতে হয়, তাহলে এখন তাদের একটাই করণীয় আছে। তারা রানি লিলিউকালানিকে উৎখাত করে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে টিকে থাকা হাওয়াইকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একীভূত করে নেবে। আর রেজিম চেঞ্জ তথা সরকার পরিবর্তনের পুরো ব্যাপারটিতে স্টিভেন্সের মাধ্যমে পেছন থেকে পূর্ণ সহায়তা দিয়ে যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সেনাবাহিনী।
-
প্রেসিডেন্ট মুরসি: যে বইয়ে স্থান পেয়েছে আমার দুটি লেখা
মিসরের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির স্মরণে প্রচ্ছদ প্রকাশন একটি বই প্রকাশ করেছে। “প্রেসিডেন্ট মুরসি: আরব বসন্ত থেকে শাহাদাত” শিরোনামের বইটি ঠিক সেই অর্থে মুরসির জীবনী না। এতে মূলত মুরসির জীবনের বিভিন্ন দিকের উপর, বিশেষ করে তার রাষ্ট্রপ্রতিত্বের সময়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। বইটিতে আমার দুটি লেখাও স্থান পেয়েছে।
বইটিতে মোট ১৬টি লেখা আছে, মৌলিক এবং অনুবাদ মিলিয়ে। মৌলিক লেখকদের দুজন পরিচিত লেখক আছেন – ডঃ আব্দুস সালাম আজাদী এবং ফেসবুকে জনপ্রিয় রাজনৈতিক লেখক, মিসর প্রবাসী মোহাম্মদ নোমান ভাই।
-
মোহাম্মদ মুরসির অভিষেক
প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোহাম্মদ মুরসির অভিষেক অনুষ্ঠানটি তার জন্য এর চেয়ে বেশি অপমানজনক হওয়া সম্ভব ছিল না।
নির্বাচনের দিন রাতে মুরসি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি বিলুপ্ত পার্লামেন্টকে পুনর্বহাল করবেন এবং সেই পার্লামেন্টের সামনেই শপথ গ্রহণ করবেন। কিন্তু মিলিটারি কাউন্সিল তাকে তার প্রতিজ্ঞা ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করে। অভিষেক অনুষ্ঠানের পূর্বে দুইজন জেনারেল টেলিভিশনে এক যৌথ বিবৃতিতে প্রতিজ্ঞা করেন, সামরিক বাহিনী সর্বদাই ব্যাপক ক্ষমতা সহকারে সরকারের পেছনে থেকে “বিশ্বস্ত অভিভাবক” হিসেবে ভূমিকা পালন করে যাবে।
কী ধরনের “অভিভাবক”?
“আপনার যেভাবে খুশি ব্যাখ্যা করে নিন”, জানিয়েছিলেন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আল-আসার।