![হুমায়ূন আহমেদ কি গোস্ট রাইটারের সাহায্য নিতেন?](https://mhtoha.com/wp-content/plugins/phastpress/phast.php/c2VydmljZT1pbWFnZXMmc3JjPWh0dHBzJTNBJTJGJTJGbWh0b2hhLmNvbSUyRndwLWNvbnRlbnQlMkZ1cGxvYWRzJTJGMjAyMCUyRjA2JTJGSHVtYXl1bi1BaG1lZC5qcGcmY2FjaGVNYXJrZXI9MTcxNDA3OTQ5NS02MTM2OCZ0b2tlbj05NTgxZDE3ZTZkODg5ZjEx.q.jpg)
Jahirul Islam নামে এক ভদ্রলোক ফেসবুকের কিছু গ্রুপে একটা পোস্ট দিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন, হুমায়ূন আহমেদ শেষ এক দশকে গড়ে প্রতি ৩৭ দিনে একটা করে উপন্যাস লিখেছেন। শুধু উপন্যাস না, এই সময়ে তিনি নাটক-সিনেমাও লিখেছেন এবং পরিচালনা করেছেন। তার প্রশ্ন, কাজী আনোয়ার হোসেনের মতো হুমায়ূন আহমেদও তার লেখালেখির কাজে গোস্ট রাইটারের সাহায্য নেননি তো?
প্রশ্নটা ইন্টারেস্টিং। তবে জহিরুল ইসলামের লেখাটা খুবই গোছানো এবং চমৎকার হলেও তার পয়েন্ট মূলত একটাই। সেটা হচ্ছে, এত অল্প সময়ের মধ্যে এতগুলো উপন্যাস লেখা সম্ভব না।
আমার কাছে তার পোস্টটা দারুণ লেগেছে। এবং তার চেয়েও মজা লেগেছে হুমায়ূন আহমেদের ভক্তদেরকে এই প্রশ্নে ক্ষেপে যেতে দেখে। তারা বিশ্বাসই করতে রাজি না, এরকম কিছু সম্ভব হতে পারে।
বলে রাখা ভালো, আমি নিজেও হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত। অনলাইনে হুমায়ূন আহমেদের বই আছে, অথচ আমি পড়িনি, এরকম বইয়ের সংখ্যা দুইটা বা তিনটার হবে না। এবং যেহেতু হুমায়ূন আহমেদের অল্প কিছু দুষ্প্রাপ্য বই ছাড়া প্রায় সবগুলো বইয়েরই পিডিএফ হয়ে গেছে, তাই বলা যায় আমি তার মোটামুটি ৯৫%+ বই পড়ে ফেলেছি।
কাজেই যদিও আমি “পুরাই অসম্ভব, এ হতেই পারে না” বলে ব্যাপারটাকে উড়িয়ে দিচ্ছে না, কিন্তু কয়েকটা কারণে আমি জহিরুল ইসলামের যুক্তিতে কনভিন্সড হতে পারিনি।
প্রথমত, যে ব্যাপারটা শুরুতেই অনেকেই বলে ফেলেছেন, হুমায়ূন আহমেদের অধিকাংশ উপন্যাসই মূলত উপন্যাস না, বরং সেগুলোকে বড় গল্প বলা ভালো। সেগুলোর পৃষ্ঠাসংখ্যা ৮০ থেকে ১২০ এর মধ্যে। ওয়ার্ড কাউন্ট মোটামুটি ২৫ হাজারের আশেপাশে।
হুমায়ূন আহমেদের এই উপন্যাসগুলোর কাহিনী খুবই সিম্পল। জাদুটা মূলত তার লেখনীতে। এ ধরনের বই হুমায়ূন আহমেদের মতো প্রফেশনাল লেখকের ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ/দশ দিনে লিখে ফেলা অসম্ভব কিছু না। দিনে ৩,০০০ ওয়ার্ড করে লিখলেও আট-নয় দিনে লেখা হয়ে যাবে।
কাজেই হুমায়ূন আহমেদ প্রতি মাসে একটা করে বই লিখলেও তিনি গোস্ট রাইটারের সাহায্য নিয়েছেন বলে সন্দেহ করার কোনো শক্ত যুক্তি নাই।
দ্বিতীয়ত, হুমায়ূন আহমেদ যদি এ ধরনের কিছু করতেন, নিশ্চিতভাবেই সেটা শাওন জানত এবং খুব সম্ভবত তাতে সক্রিয়ভাবেই জড়িত ছিল। তার ঘনিষ্ঠ কিছু প্রকাশকও হয়ত জানত। এবং নিশ্চিতভাবেই গোস্ট রাইটাররা নিজেরাও জানত।
সাধারণভাবেই যেকোনো লেখকের মৃত্যুর পর তার “অপ্রকাশিত লেখা” প্রকাশিত হওয়ার ধুম পড়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলো আংশিক বা সম্পূর্ণ সত্য হতে পারে, কিন্তু মাঝেমাঝে এগুলো প্রকাশকদের এবং লেখকদের নিকটাত্মীয়দের ফ্যাব্রিকেটেডও হয়।
হুমায়ূন আহমেদের যদি গোস্ট রাইটার থাকত, তাহলে এটা ধরে নেওয়া যেতে পারে, তাকে বা তাদেরকে দিয়ে তিনি একাধিক উপন্যাস লেখানোর প্রক্রিয়ার মাঝামাঝি পর্যায়ে ছিলেন। সেক্ষেত্রে তারা সেই প্রজেক্টগুলো শেষ করেনি কেন?
গোস্ট রাইটাররা বা প্রকাশকরা কি শাওনকে চাপ দেয়নি? শাওন নিজে কি তাতে রাজি হয়নি? যদিও নিশ্চিত করে কিছুই বলা সম্ভব না, আমার ধারণা সত্যি সত্যিই গোস্ট রাইটার থাকলে আমরা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পরেও অন্তত চার-পাঁচটা অপ্রকাশিত বা অসমাপ্ত উপন্যাসের দেখা পেতাম।
তৃতীয়ত, হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশের লেখক-শিল্পী সমাজে এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তি। তিনি ব্যক্তি জীবনের খুব কম কথা নিয়েই ভণ্ডামি করেছেন বা গোপন করার চেষ্টা করেছেন। মানুষ কী বলবে – এটা নিয়ে তিনি কখনোই সিরিয়াস ছিলেন বলে মনে হয় না।
নিজের দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে অকপটে কথা বলেছেন, লিখেছেন। নিজের সাহিত্যকে যে তিনি মহান কোনো সাহিত্য মনে করেন না, সেটাও অকপটে স্বীকার করেছেন বহুবার। স্বীকার করেছেন অভাবে পড়ে টাকার জন্য লেখালেখির কথাও।
সুতরাং এক্ষেত্রেও নিশ্চিতভাবে বলার কোনো উপায় নাই, কিন্তু আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে, হুমায়ূন আহমেদ যদি গোস্ট রাইটার দিয়ে লেখালেখি করাতেন, তাহলে তিনি সরাসরি সেটা উল্লেখ না করলেও আকারে-ইঙ্গিতে এই কনসেপ্টটার কথা বলে যেতেন। তার কোনো বইয়ে বা কোনো সাক্ষাৎকারে কি কখনো তিনি এ ধরনের কোনো কথা বলেছেন? আমার চোখে পড়েনি।
বিভিন্ন বইয়ের রিভিউসহ বইপত্র সংক্রান্ত আমার সকল লেখা একত্রে পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে।
যাইহোক, যদিও জহিরুল ইসলামের পোস্ট দ্বারা আমি কনভিন্সড না, তারপরেও আমি তার লেখাটা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি এ ধরনের চিন্তাভাবনাকে সামনে আনার জন্য। এ ধরনের আলোচনা মোটেও খারাপ কিছু না, বরং আমার মতে স্বাস্থ্যকর।
এক্ষেত্রে আমি আগ্রহীদেরকে একটা বুদ্ধি দিতে পারি। কারো যদি প্রচুর সময় এবং আগ্রহ থাকে, তাহলে একটা কাজ করতে পারেন। হুমায়ূন আহমেদের শেষ দুই দশকের বইগুলো নিয়ে গবেষণা করতে পারেন। শুধুমাত্র সংখ্যার উপর ভিত্তি না করে লেখার স্টাইলের উপর ভিত্তি করে হাইপোথিসিস দাঁড় করাতে পারেন।
যেগুলো নিশ্চিতভাবেই হুমায়ূন আহমেদের নিজের লেখা (মধ্যাহ্ন, লীলাবতী জাতীয় বইগুলো, প্রথমদিকে লেখা বইগুলো বা আত্মজীবনীমূলক বইগুলো) সেগুলোর সাথে অন্যান্য বইয়ের বর্ণনাভঙ্গি, শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি – এগুলো তুলনা করে দেখাতে পারেন সেগুলো হুমায়ূন আহমেদের নিজের লেখা হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু, আর গোস্ট রিটেন হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু।
ইচ্ছা করলে এই টপিক নিয়ে একটা বইও লিখে ফেলতে পারেন। আমি নিশ্চিত অনেকেই খুব আগ্রহের সাথে সেই বই পড়বে।