-
ফটোকপিয়ার: পার্টি সংস্কৃতি এবং যৌন নিপীড়নের গল্প
দেখলাম নেটফ্লিক্সের ইন্দোনেশিয়ান মুভি ফটোকপিয়ার (Photocopier (2021)) পাওয়ারফুল কাহিনী। ক্রাইম, থ্রিলার, মিস্ট্রি জনরার।
ভার্সিটিতে পড়ুয়া এক মেয়ে, সুরিয়ানি তার নাট্যদলের সদস্যদের সাথে পুরস্কার পাওয়া উদযাপন করতে যায়। সেখানে সবার পাল্লায় পড়ে ড্রিংক করে অচেতন হয়ে পড়ে। রাত তিনটার সময় এক ড্রাইভার তাকে অচেতন, মাতাল অবস্থায় ঘরে পৌঁছে দিয়ে যায়।
পরদিনই কীভাবে যেন নেটে তার ড্রিঙ্ক করে অচেতন হয়ে পড়ে থাকার ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। ফলে তার ভার্সিটির স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যায়। ওদিকে রাত তিনটা বাজে অপরিচিত পুরুষ মাতাল অবস্থায় ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কারণে পড়া-প্রতিবেশীরাও নানান কথা বলতে থাকে। মুসলমান মেয়ে হয়ে এরকম আচরণ করায় সুরিয়ানিকে তার বাবা ঘর থেকে বের করে দেয়।
-
ডার্ক ওয়াটার্স: কর্পোরেট বিষের বিরুদ্ধে লড়াই
বই অবলম্বনে মুভি তো সেই প্রাচীন কাল থেকেই নির্মিত হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লং রিড আর্টিকেল অবলম্বনেও বেশ কিছু চমৎকার মুভি নির্মাণের ট্রেন্ড শুরু হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের লং রিড আর্টিকেল “The Lawyer Who Became DuPont’s Worst Nightmare” অবলম্বনে তৈরি Dark Waters (2019) মুভিটা সেরকমই একটা মুভি। জঁনরা লিগ্যাল থ্রিলার। এবং অফকোর্স বেজড অন ট্রু স্টোরি।
-
দ্য ম্যান হু সোল্ড হিজ স্কিন: অদ্ভুত সুন্দর একটা আরব মুভি
রাক্বা, সিরিয়া, ২০১১।
লোকাল বাসে করে যাওয়ার সময় এক তরুণী আবির তার প্রেমিক স্যামকে ভালোবাসার কথা বলে ফেলে। আবেগে আপ্লুত হয়ে স্যাম সেখানেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে। বাসভর্তি মানুষের সামনে বিয়ের ঘোষণা দিতে গিয়ে উচ্চারণ করে বসে নিষিদ্ধ কিছু শব্দ – বিপ্লব, স্বাধীনতা।
এই ঘটনাই পাল্টে দেয় স্যাম এবং আবিরের জীবনকে। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দাবাহিনী স্যামকে তুলে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। পরিচিত এক পুলিশের সহায়তায় সেখান থেকে পালাতে পারলেও সিরিয়ায় থাকা তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। বর্ডার দিয়ে পালিয়ে সে চলে যায় লেবাননে। আর ওদিকে পরিবারের চাপে অন্য এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে বেলজিয়ামে চলে যায় আবির।
-
দ্য মৌরিতানিয়ান: গুয়ান্তানামো বের এক নির্দোষ বন্দীর গল্প
গুয়ান্তানামো বে কারাগারের এক বন্দীর উপর চমৎকার একটা মুভি দেখলাম – দ্য মৌরিতানিয়ান – The Mauritanian (2021)। ড্রামা, তার উপর বেজড অন ট্রু স্টোরি, সো ডোন্ট বদার উইদ স্পয়লার অ্যালার্ট।
নাইন ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার কয়েকমাস পর আমেরিকার চাপে মৌরিতানিয়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে মোহাম্মাদু ওয়েল্দ স্লাহি নামের এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়ে যায় দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা তাকে তুলে দেয় আমেরিকানদের হাতে।
পরবর্তী ছয় বছর পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিখোঁজ থাকে স্লাহি। কেউ তার কোনো সংবাদ দিতে পারে না। শেষ পর্যন্ত এক মার্কিন ডিফেন্স লয়্যার, ন্যান্সি হল্যান্ডার তার খোঁজ পায় কিউবার গুয়ান্তানামো বে কারাগারে।
-
বর্ন এ কিং: রূপালি পর্দায় বাদশাহ ফয়সাল
বর্ন এ কিং (Born a King) (2019) – পুরাই আনএক্সপেক্টেড একটা মুভি। সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বিন আব্দুল আব্দুল আজিজের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের চিত্রায়ন।
সিনেমার কাহিনী ১৯১৯ সালের। সে সময় ব্রিটিশ সরকার আব্দুল আজিজ বিন সৌদকে ব্রিটেন সফরের নিমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু আব্দুল আজিজ তখন শেরিফ হুসেইনের সাথে যুদ্ধের আশঙ্কায় দেশ ত্যাগ করার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না। তার পরিবর্তে তিনি ইংল্যান্ডে পাঠান তার ছেলে, ভবিষ্যত বাদশাহ ফয়সালকে। সে সময় বাদশাহ ফয়সাল ছিলেন মাত্র ১৪ বছর বয়সী!
-
লা মিজারেবলস: ফ্রান্স কাঁপানো রায়টের সত্য ঘটনা নিয়ে যে মুভি
চমৎকার একটা ফ্রেঞ্চ মুভি লা মিজারেবলস (Les Misérables)। লুজলি বেজড অন এ ট্রু স্টোরি। এবং স্টোরিটা ঘটেছিল পরিচালকের নিজের জীবনেই!
মালিয়ান বংশোদ্ভূত পরিচালক লাজ লি ছিলেন ফ্রান্সের দরিদ্র এলাকার এক রাবিশ কালেক্টরের ছেলে। ছোটকাল থেকেই কৃষ্ণাঙ্গ গরীবদের উপর ফ্রান্সের শ্বেতাঙ্গ পুলিশের নির্যাতন দেখে বড় হয়েছেন তিনি। একটু বড় হওয়ার পর যখন হাতে একটি হ্যান্ডহেল্ড ভিডিও ক্যামেরা পান, তখন থেকে সেটা দিয়ে পুলিশি নির্যাতনের ভিডিও করতে শুরু করেন তিনি।
-
অসাধারণ কিছু নন-লিনিয়ার টাইমলাইনের মুভি
নন-লিনিয়ার টাইমলাইন হলো যেখানে সিনেমার কাহিনী সরল গতিতে এগোয় না। অথবা বলা যায়, যেখানে সিনেমার দৃশ্য পরম্পরা বাস্তবের ঘটনার পরম্পরা অনুসরণ করে না। আগের ঘটনা পরে, পরের ঘটনা আগে – এভাবে দেখানো মিলিয়ে-মিশিয়ে দেখানো হয়।
এ ধরনের মুভির সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল, এতে কাহিনী এমন জটিলভাবে সাজানো যায় যে পুরো মুভি জুড়ে শেষের ঘটনাগুলো সম্পর্কে কিছু কিছু আভাস দিয়ে আকর্ষণও তৈরি করা যায়, আবার মূল রহস্যটা একেবারে শেষ দৃশ্যে এসেও উন্মোচিত করা যায়। ফলে পুরো সিনেমা জুড়েই সিনেমাটা দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পারে।
ক্রিস্টোফার নোলানের ফিল্মগুলো এর একটা ভালো উদাহরণ। আমার দেখা সেরা কিছু নন লিনিয়ার স্ট্রাকচারে তৈরি মুভির কথা এখানে আলোচনা করলাম:
-
হোটেল মুম্বাই: তাজ হোটেলে অবরুদ্ধ ১২ ঘণ্টা
গত বছর দেখেছিলাম হোটেল মুম্বাই (Hotel Mumbai) (2018)। ২০০৮ সালের মুম্বাই সিরিজ অ্যাটাকের উপর নির্মিত অস্ট্রেলিয়ান মুভি।
ভারতের মুম্বাইয়ে পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্করে তৈয়বার ঐ সিরিজ আক্রমণে মোট ১৬৬জন নিহত হয়েছিল। মোট ১২টি কোর্ডিনেটেড অ্যাটাক হয়েছিল। এর মধ্যে মুভিতে শুধু মুম্বাইর তাজ হোটেলের আক্রমণটার উপরেই ফোকাস করা হয়েছে।
-
ম্যারি কোলভিনের প্রাইভেট ওয়ার
নিচের ছবি গাদ্দাফির সাথে ম্যারি কোলভিনের যে দৃশ্যটা দেখা যাচ্ছে, সেটা বাস্তবের না, A Private War সিনেমার। এবং এখানে যে গাদ্দাফিকে দেখা যাচ্ছে, তিনিও আসল গাদ্দাফি নন; সিনেমার অভিনেতা। তবে বাস্তবেও সানডে টাইমসের সাংবাদিক ম্যারি কোলভিন গাদ্দাফির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। একবার না, একাধিক বার।
১৯৮৬ সালে রিগ্যান প্রশাসন যখন লিবীয় নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাসভবনের উপর বিমান হামলা (অপারেশন এল-ডোরাডো ক্যানিয়ন) পরিচালনা করে, তখন ম্যারি কোলভিনই ছিলেন প্রথম সাংবাদিক, যিনি গাদ্দাফির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।
-
অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন: ওয়াটারগেট ক্যালেঙ্কারির তদন্ত নিয়ে যে মুভি
পলিটিক্যাল থ্রিলার মুভিগুলো আমার দারুণ পছন্দের। আর সেটা যদি সত্য কাহিনী অবলম্বনে হয়, তা হলে তো কথাই নেই। অল দ্যা প্রেসিডেন্টস মেন (All The President’s Men) সেরকমই একটা মুভি, যার কাহিনী আবর্তিত হয়েছে ওয়াটারগেট ক্যালেঙ্কারির তদন্তকে ঘিরে।
দুই দুঃসাহসী সাংবাদিক কী অসাধারণ দক্ষতা এবং সাহসিকতার সাথে ওয়াটারগেট ক্যালেঙ্কারির পেছনের ঘটনা উন্মোচন করে শেষপর্যন্ত আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন প্রেসিডেন্টকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে, সেই কাহিনীর সফল চিত্রায়ন এই মুভিটি। বলা যায় এই ক্যাটাগরির এটাই সেরা মুভি।