১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ড: শোক নাকি সুখ?

১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ড নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার কিছু নাই। ঐ হত্যাকাণ্ডে নারী-শিশুকেও হত্যা করা হয়েছিল।

তাছাড়া, ওরকম একটা হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল বাংলাদেশের জন্য ভালো না হয়ে খারাপ হয়েছে কি না, হাসিনা কি ঐ হত্যাকাণ্ডের কারণেই সাইকোপ্যাথে পরিণত হয়েছিল কি না, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে, বাঙালিকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিল কি না, এগুলোও চিন্তা করার বিষয়।

সবচেয়ে বড় কথা, ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ড জনগণ ঘটায়নি। ঘটিয়েছে কতিপয় সেনা অফিসার। তাদের উদ্দেশ্য কতটা জনকল্যাণ ছিল, আর কতটা পার্সোনাল প্রতিশোধপরায়ণতা ছিল, এগুলোও আলোচনার বিষয়।

এসব কিছু মিলিয়ে ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডে আমি উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু খুঁজে পাই না। বরং আমার মনে হয়, সামরিক অভ্যুত্থানের তুলনায় গণআন্দোলনে সরকারের পতন হওয়া এবং ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারকে হত্যা না করে এরপর বিচারে তুলতে পারাটা দীর্ঘমেয়াদের জন্য বেটার। তাতে রক্তপাত কিছুটা বেশি হলেও।

কিন্তু এর বিপরীতে ১৫ই আগস্ট নিয়ে যে কাঁদো বাঙালি কাঁদো প্রজেক্ট চালু হয়েছিল, সেটাও সমর্থন করার কিছু না। এইসব বাড়াবাড়ির পরিণতি আমরা দেখেছি – হায় মুজিব, হায় মুজিবের মতো হাস্যকর আহাজারি থেকে শুরু করে শোকের নামে হিন্দি গান বাজানো, এমন কিছু নাই, যা এই কয় বছর হয়নি।

এবং সবচেয়ে বড় কথা, শেখ মুজিবকে ৭১-এর পর, বাংলাদেশের “স্বাধীনতা এনে দেওয়ার” পর হত্যা করা হয়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছিল সে স্বৈরাচার হয়ে ওঠার পর। তার হাত বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হওয়ার পর। সুতরাং এরকম বিতর্কিত লিগ্যাসির একজন রাষ্ট্রনায়কের এবং তার পরিবারের মৃত্যুর শোক আমাদের “জাতীয় শোক” হতে পারে কি না, সেটাও ভ্যালিড প্রশ্ন।

তারপরেও, শান্তিপূর্ণভাবে যদি ক্ষমতার পালাবদল হতো, এবং এরপর যদি বিএনপি বা জামাত এসে ১৫ই আগস্টের ছুটি বাতিল করত, তাহলে আমি হয়তো সেটার বিরোধিতাই করতাম। অনেক কিছু অন্যায় এবং অনুচিত হলেও সবসময় বাতিল করার সংস্কৃতি খুব একটা ভালো ফলাফল দেয় না।

কিন্তু এবার সেটা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেনি। ঘটেছে শতশত মানুষের রক্তের বিনিময়ে। এবং এরফলে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, জুলাই মাসে যে শতশত নিরাপরাধ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে, যে শতশত মায়ের কোল খালি করা হয়েছে, তাদের সম্মিলিত শোক অবশ্যই একটা পরিবারের শোকের চেয়ে বেশি।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাই ১৫ই আগস্টকে জাতীয় শোকদিবস রাখার এবং ছুটি বহাল রাখার কোনো অর্থ হয় না। এটা বহাল রাখলে সেটা হতো পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের নামে বিপ্লবের প্রতি অসম্মান।

আমাদের জাতীয় শোকদিবস হতে হবে জুলাই মাসের কোনো একদিন। প্রেফার‌্যাবলি, জুলাই মাসের ১৯ তারিখ।

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *