লিবিয়া
-
সর্বস্তরে আরবি ভাষার ব্যবহার!
ভার্সিটিতে আমাদের প্রথম ক্লাসটা ছিল ম্যাথ ওয়ানের। প্রফেসর ছিল একজন সিরিয়ান। ভর্তি হওয়ার আগে শুনেছিলাম, পুরো ইউনিভার্সিটিতে অন্য সব ফ্যাকাল্টিতে পড়াশোনা আরবিতে হলেও কেবলমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সবকিছু হবে ইংরেজিতে। লেকচার অবশ্য আরবিতেই হবে, কিন্তু প্রশ্নোত্তর, লেকচার শিট, রেফারেন্স বই সব হবে ইংরেজি।
ভেবেছিলাম যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং, তাই লেকচার আরবিতে হলেও আর কতটুকু হবে? বেশিরভাগই তো থাকবে ইকুয়েশন আর ম্যাথ – সেগুলোর আর আরবিই কী, ইংরেজিই কী? কিন্তু ক্লাসে ঢুকেই আমার আক্কেল গুড়ুম হওয়ার জোগাড়। সিরিয়ান প্রফেসর ভদ্রলোক একেবারে বিশুদ্ধ আরবিতে গড়গড় করে লেকচার দিয়ে যাচ্ছে, যার শতকরা ৬০ ভাগই আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
-
লিবিয়ার আরব বসন্তে মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব
দেশে বসন্ত গেছে গতকাল, যদিও কেউ কেউ পরশুদিনও পালন করে ফেলেছে। কিন্তু আমাদের বসন্ত আজ। না, ঋতুরাজ বসন্ত না, আরব বসন্ত। অফিশিয়ালি যদিও আরব বসন্তের লিবিয়ান ভার্সনের শুরুটা ১৭ই ফেব্রুয়ারি বলা হয়, কিন্তু বাস্তবে সেটা শুরু হয়েছিল ১৫ তারিখেই।
২০১১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির আগে জীবনে কোনোদিন মিছিল দেখিনি। টিভিতে দেখেছি। সরকারিভাবে আয়োজিত ফিলিস্তিনের জন্য মিছিল, লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলার বিরুদ্ধে মিছিল, আমেরিকার কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মিছিল। কিন্তু রাস্তায় সরাসরি নিজের চোখে কোনোদিন মিছিল দেখিনি।
-
আমাজিঘ: উত্তর আফ্রিকার বঞ্চিত আদিবাসী মুক্ত মানবেরা
উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর আরবি ভাষাভাষী জনগণকে নিয়ে অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন আছে- তারা কি আফ্রিকান, নাকি আরব? ভৌগলিক দিক থেকে উত্তর আফ্রিকা পরিষ্কারভাবেই আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত। সেদিক থেকে এর আরবি ভাষাভাষী জনগণও আফ্রিকান। কিন্তু জাতিগত দিক থেকে?
জাতিগত দিক থেকে উত্তর আফ্রিকার জনগণের এক অংশ নিঃসন্দেহে আরব। সপ্তম শতকে ইসলাম প্রচারের জন্য আরবরা যখন উত্তর আফ্রিকায় অভিযান চালায়, তারপর থেকে তাদের অনেকেই সেখানে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তোলে। কালক্রমে ব্যবসায়িক এবং প্রশাসনিক কারণেও আরব উপদ্বীপ থেকে অনেকে উত্তর আফ্রিকায় পাড়ি জমায়। বর্তমানে উত্তর আফ্রিকার জনগণের একটা অংশ তাদেরই বংশধর।
-
লাইফ ইন লিবিয়া: অপরিচিতদের কাছ থেকে সাহায্য
স্পেকটেটর ইনডেক্সে বিশ্বের সেরা দশটা দেশের একটা লিস্ট আছে, যেসব দেশের নাগরিকরা রাস্তায় অপরিচিত মানুষদেরকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। সেই লিস্টে এক নম্বর দেশটার নাম হচ্ছে লিবিয়া।
গত বছরের এই দিনে (২ জানুয়ারি, ২০২০) অপরিচিত মানুষদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সে সময় নানান ঝামেলার কারণে লেখা হয়নি, আজ লিখছি।
সেদিন আমি সিরত থেকে যাচ্ছিলাম প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরের মুরাদা শহরের একটা অয়েল ফিল্ডে। শহরটা ডেজার্টের ভেতর। প্রথমে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হাইওয়ে আছে, কিন্তু এরপরের ৩০০ কিলোমিটারের অধিকাংশই ভাঙ্গা রাস্তা। আর শেষ ১০০ কিলোমিটারে তো রাস্তাই নাই, সাহারার বালির উপর দিয়ে জীপ বা ফোর হুইলার ছাড়া যাওয়ার উপায় নাই।
-
সালিমা মুকাওওয়াস: দ্য গডেস অফ আফ্রিকান ওয়ার
ভদ্রমহিলার নাম সালিমা বিনতে মুকাওওয়াস (লিবিয়ান অ্যাকসেন্টে সিলিমা এমগাওয়্যেস)। ঔপনিবেশিক ইতালির বিরুদ্ধে লিবিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের এক কিংবদন্তী নারী যোদ্ধা তিনি।
মুকাওওয়াস সম্পর্কে যেসব তথ্য জানা যায়, সেগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। তার যুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানা যায় বিদেশী পর্যটক এবং সাংবাদিকদের লেখনী থেকে। অন্যদিকে তার প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে জানা যায় লিবিয়ান বিভিন্ন পত্রিকা এবং ব্লগ থেকে।
-
গাদ্দাফি এখনও বেঁচে আছেন – জনপ্রিয় থ্রিলার লেখকের ১৫টি পয়েন্ট
জেমস মরকান (James Morcan) একজন হরর, থ্রিলার, ক্রাইম বিষয়ক লেখক। কিন্তু এটাই তার একমাত্র পরিচয় না। তিনি একাধারে একজন চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা, পরিচালক এবং চলচ্চিত্র প্রযোজকও। তার চলচ্চিত্রগুলোর কোনোটাই অবশ্য বিখ্যাত না, কিন্তু লেখক হিসেবে তার মোটামুটি ভালোই পরিচিতি আছে।
তার গুডরিডস অথর প্রোফাইলে মোট ২৯টা বইয়ের নাম পাওয়া যায়, ৪ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে যেগুলো গড়ে ৩.৯৯ রেটিং অর্জন করেছে। প্রোফাইলে থাকা বর্ণনা অনুযায়ী তার দুইটা বই নাকি বেস্ট সেলার, যেগুলো মোট আটটা ভাষায় অনুদিত হয়েছে। অবশ্য বেস্ট সেলার লিস্টগুলোতে যে বিভিন্ন ধরনের ধোঁকাবাজি সম্ভব, সেটা তো জানা কথা।
-
গাদ্দাফির শাসনামলের ১০টি অবিশ্বাস্য সুবিধা: কতটুকু বাস্তব, কতটুকু প্রপাগান্ডা?
মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফির গুণগান সম্বলিত একটি ভাইরাল লিস্ট পাওয়া যায় ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটে, যেখানে গাদ্দাফির শাসনামলে লিবিয়ানরা কত সুখে-শান্তিতে ছিল, সেটি বোঝানোর জন্য ১০টি বা ১২টি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়।
লিস্টটি অত্যন্ত জনপ্রিয়, দুদিন পরপরই কেউ না কেউ এটি শেয়ার করে, এবং অবধারিতভাবে আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডদের কেউ না কেউ আমাকে সেখানে ট্যাগ করে এর সত্যতা জানতে চায়। অনেক দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত এর সত্যতা যাচাইমূলক একটি লেখা লিখেই ফেললাম।
-
গাদ্দাফি যেভাবে আমেরিকার উপর বাটপারি করে ক্যু করেছিলেন
মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফি ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর, রাজা ইদ্রিস আল-সেনুসির বিরুদ্ধে এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে।
রাজা ইদ্রিস আল-সেনুসিকে হাতে রাখার জন্য সিআইএ তাকে টাকা দিত। কিন্তু ইদ্রিস বৃদ্ধ হয়ে পড়ে পড়েছিলেন। দক্ষতার সাথে নিজের প্রশাসনের উপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারছিলেন না। আমেরিকার কথামতো কাজ করতে পারছিলেন না। ফলে ১৯৬৯ সালে সিআইএ সিদ্ধান্ত নেয়, তারা এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইদ্রিসকে ক্ষমতাচ্যুত করবে।
কিন্তু সিআইএর জানা ছিল না, একই সময়ে এক তরুণ আর্মি ক্যাপ্টেন, মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফিও অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এবং সিআইএর ক্যুয়ের শিডিউলের কয়েকদিন আগেই গাদ্দাফি ইদ্রিসের বিরুদ্ধে ক্যু করে বসেন।
কত অজানা রে 🙂
তথ্যসূত্র: Joseph J. Trento এর লেখা বই Prelude to Terror
লিবিয়া এবং গাদ্দাফি বিষয়ক আমার সবগুলো লেখা পড়তে পারেন এখান থেকে। আর বিভিন্ন বইপত্র থেকে পাওয়া আকর্ষণীয় বিভিন্ন তথ্য অবলম্বনে আমার বিভিন্ন লেখা পাবেন এই লিঙ্কে।
-
দ্য ম্যাসেজ: গাদ্দাফির কল্যাণে যেভাবে আলোর মুখ দেখেছিল সিনেমাটি
হযরত মুহাম্মদ (স)-এর জীবনী নিয়ে নির্মিত দ্য ম্যাসেজ (The Message) তথা আর-রিসালাহ মুভিতে বদরের যুদ্ধের একটা সিন আছে। সেখানে যুদ্ধের পূর্বে মুসলমানদেরকে একটা কুয়া থেকে পানি তুলতে দেখা যায়। বিখ্যাত লিবিয়ান পর্যটক ওসামা থিনির পোস্ট অনুযায়ী, ফিচার ইমেজের ছবির এই জিনিসটাই হচ্ছে সেই কুয়াটা। জায়গাটা লিবিয়ার দক্ষিণে ওবারি শহরের নিকটে, সাহারা মরুভূমিতে।
-
গার্দাবিয়া যুদ্ধের ইতিহাস: লিবিয়াতে ইতালিয়ান শাসন সমাপ্তির সূচনা
১৯১১ সালে ঔপনিবেশিক ইতালীয়রা লিবিয়া আক্রমণ করে। সে সময় লিবিয়া ছিল ক্ষয়িষ্ণু অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনস্থ কয়েকটি প্রদেশের সমষ্টি। অটোমানরা প্রথম দিকে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। কামাল আতাতুর্ক সে সময় লিবিয়াতে অটোমান বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত ছিল। তার নেতৃত্বে তবরুক এবং দারনায় অটোমান বাহিনী বেশ কিছু যুদ্ধে জয়লাভও করে।
কিন্তু তুরস্কের নিজের অবস্থাই তখন সুবিধার না। ফলে লিবিয়ার মতো কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকার পেছনে সামরিক শক্তি ক্ষয় করার পক্ষপাতী তারা ছিল না। ইতালিয়ানদের কাছ থেকে লিবিয়া রক্ষা করার চেয়ে ব্রিটিশদের হাত থেকে মিসর রক্ষা করা তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ফলে মাত্র এক বছর যুদ্ধ করার পরই ১৯১২ সালে অটোমানরা ইতালির সাথে শান্তিচুক্তি করে। তারা রোডস দ্বীপের বিনিময়ে লিবিয়ার নিয়ন্ত্রণ ইতালির হাতে ছেড়ে দেয় এবং লিবিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।